পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দশম জাতীয় সংসদের ২৩তম (বাজেট) অধিবেশনে গতকাল বুধবার ২০১৮-১৯ অর্থবছরের অর্থ বিল পাস হওয়ার পর আজ বৃহস্পতিবার পাস হবে এই অর্থবছরের বাজেট। নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কর কাঠামো নিয়ে ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের আপত্তি রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে কিছু সংশোধনীর প্রস্তাবও রয়েছে। যদিও এতে পরিবর্তন আসছে সামান্যই। এছাড়া গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কিছু দিক নির্দেশনা ও সুপারিশ দিয়েছেন প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে। সেই সুপারিশ বিবেচনায় নিয়ে বাজেট পাসের পূর্ণ প্রস্তাব করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত বাজেটের বেশ কয়েকটি বিষয়ে ছোট খাট পরিবর্তনের বিষয়ে প্রস্তাবনা আসতে পারে-এর মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক খাতের কর্পোরেট ও সবুজ শিল্প কর, আইসিটির ওপর বর্ধিত কর প্রত্যাহার অন্যতম। এছাড়া বিনিয়োগ বাড়ানো ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হতে পারে। তবে বড় কোনো পরিবর্তন ছাড়াই আজ জাতীয় সংসদে পাস হচ্ছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট। এর আগে গত ৭ জুন ‘সমৃদ্ধ আগামী পথযাত্রায় বাংলাদেশ’ নাম দিয়ে আগামী অর্থ বছরের জন্য চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনী বছর হওয়ায় বাজেটে অগ্রাধিকার দেয়া খাতের বরাদ্দ ঠিকই থাকছে। কোনো পরিবর্তন আসছে না আয়-ব্যয়ের কাঠামোতেও। কর কাঠামোর মধ্যে আয়কর অপরিবর্তিত রেখেই চূড়ান্ত অর্থবিল করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট কাঠামোয় সামান্য সংশোধন আসছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সূত্র জানায়, দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা ও চলতি অর্থবছরের বাস্তবায়ন বিবেচনায় নিয়েই আগামী অর্থবছরের জন্য বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অনেক হোমওয়ার্কের মাধ্যমে বাজেট প্রস্তুত করেছেন। ফলে বাজেটের আকার, বরাদ্দ ও নীতি-কাঠামোয় খুব বেশি পরিবর্তন আসছে না। তবে স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষা ও ভোক্তা চাহিদার কথা বিবেচনা করে শুল্ক ও ভ্যাটে সামান্য পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
জানা গেছে, মোবাইল ও কম্পিউটারের সফটওয়্যার-হার্ডওয়্যার আমদানিতে বেশকিছু খাতে শুল্ক অনেক বেশি কমানোর কারণে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতির আশঙ্কা করছিল। এসব জায়গায় কিছু পরিবর্তন আসছে। অন্যান্য শিল্পের বেশকিছু খাতে কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক কমানোর প্রস্তাব থাকলেও প্রথমে তা হয়নি। তবে চূড়ান্ত বাজেটে বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। ভ্যাটের ক্ষেত্রে কিছু কিছু এইচএস কোডে ঝামেলা তৈরি হয়েছিল। সেগুলো সংশোধন করা হয়েছে। ইস্পাতপণ্যের ভ্যাটের ক্ষেত্রেও সামান্য পরিবর্তন আনা হয়েছে।
বাজেট প্রস্তাবের পর সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয়েছে করপোরেট করহার ও ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা নিয়ে। ব্যাংকের পাশাপাশি অন্যান্য কোম্পানির করহার গড়ে আড়াই শতাংশীয় পয়েন্ট কমানোর প্রস্তাব রয়েছে ব্যবসায়ীদের। অন্য কোনো ক্ষেত্রে করহার না কমিয়ে শুধু ব্যাংকের জন্য কমানোর কারণে সমালোচনা হয়েছে জাতীয় সংসদেও। বাজেট প্রতিক্রিয়ায় করপোরেট করহার সংশোধন করে অন্যান্য ক্ষেত্রেও তা কমানোর দাবি জানিয়েছে সব ব্যবসায়ী সংগঠন। তবে এটা অপরিবর্তিত রেখেই চুড়ান্ত হয়েছে আয়কর কাঠামো। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব থাকলেও তাতে পরিবর্তন আসছে না। তৈরি পোশাক খাতে মুনাফা কর ও উৎসে কর বাড়ানোর কারণে এ শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ থেকে তীব্র আপত্তি তোলা হয়েছে। তারপরও পরিবর্তন আসছে না এক্ষেত্রে। অপরিবর্তন থাকছে রাইড শেয়ারিংয়ের ওপর কর, কর কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছা ক্ষমতা প্রয়োগ, বেতনভোগীর রাজস্ব ফাঁকিতে প্রতিষ্ঠানকে জরিমানার বিধানও। যদিও এগুলোয় সংশোধনের প্রস্তাব রয়েছে।
ভ্যাটের ক্ষেত্রে আদায় ও ভ্যাট হারে কোনো পরিবর্তন আসছে না চুড়ান্ত বাজেটে। যদিও বাজেট ঘোষণার পর অগ্রিম ব্যবসায় ভ্যাট চার থেকে বেড়ে পাঁচ শতাংশ, অ্যাপসভিত্তিক পরিবহনে ভ্যাট আরোপ, পিভিসি পাইপের ভ্যাট তিন থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশে উন্নীতকরণ, সুপারশপে ভ্যাট বৃদ্ধিসহ বেশকিছু বিষয়ে আপত্তি ছিল ব্যবসায়ীদের। একই সঙ্গে তৈরি পোশাক খাতসংশ্লিষ্ট অন্যান্য শিল্পে ভ্যাট প্রত্যাহার না করার বিরোধিতাও করেছেন ব্যবসায়ীরা। যদিও এসব বিষয়ে আগের অবস্থানেই রয়েছে এনবিআর। ভ্যাটের ক্ষেত্রে শুধু জর্দা-গুলের এসআরওতে কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো কয়েকটি পণ্যে তা কিছুটা কমানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে এনবিআর সূত্র।
জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় মুদ্রণজনিত ভুলের কারণে ভ্যাটের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ হার, ভ্যাটের স্তর ও অনলাইনে কেনাকাটায় ভ্যাট আরোপসহ কয়েকটি বিষয় নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এসব বিষয়ও এরই মধ্যে সংশোধন করেছে এনবিআর। ভ্যাটের সর্বোচ্চ হার ১৫ শতাংশ ও ছয়টি স্তর রাখা হয়েছে আগামী অর্থবছরের জন্য। অন্যদিকে ভার্চুয়াল লেনদেন বলতে গুগল ও ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যমের লেনদেনকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। ফলে সাধারণ অনলাইন কেনাকাটা ভ্যাটের বাইরে থাকছে।
অন্যদিকে স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি, লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারি, ভাইব্রেটর, মোটর, রিসিভার, ইয়ারফোন বাটন, বিভিন্ন যন্ত্রাংশের কাভার, ইউএসবি, ওটিজি কেবলসহ মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারসামগ্রী উৎপাদনে সহায়ক ৪৪টি পণ্যের আমদানি শুল্ক কমানোর প্রস্তাব রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এসব ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আসছে চুড়ান্ত বাজেটে।
প্রস্তাবিত বাজেটে অনেক পণ্যের শুল্কহার ২৫ থেকে শূন্য শতাংশ করা হলেও এখানে শূন্য থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কারোপ হচ্ছে। আর ডাটাবেজ, প্রডাক্টিভিটি সফটওয়্যার আমদানিতে শুল্ক সর্বক্ষেত্রে পাঁচ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব থাকলেও স্থানীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় পণ্যভেদে আলাদা সুবিধা দেয়া হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে শিল্পের লিফ স্প্রিংয়ে শুল্ক কমানো হলেও চুড়ান্ত বাজেটে তা আগের অবস্থানে নেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে এর কাঁচামাল ফ্ল্যাটবারের বিদ্যমান শুল্কহার ৪৫ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করা হচ্ছে। শুল্কহার কমছে আরো কয়েকটি শিল্পপণ্যেও কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রেও।
ব্যবসায়ীদের দাবি উপেক্ষা করায় বাজেট পাসের বিরোধিতা করছেন তারা। প্রস্তাবিত বাজেটে বর্ধিত অগ্রিম ট্রেড ভ্যাট (এটিভি) প্রত্যাহার, করপোরেট কর সবক্ষেত্রে কমানো, অ্যাপসভিত্তিক সেবার ওপর আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহার, ভ্যাটের সর্বোচ্চ হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে আনাসহ জনগুরুত্বপূর্ণ দাবি এড়িয়ে যাওয়ার সমালোচনা করছেন তারা। অবশ্য ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়ছে না বলে গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট তিন লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী বাজেটের আকার সংশোধিত বাজেট থেকে প্রায় ৯৩ হাজার কোটি টাকা বেশি।
বাজেটে ব্যয় মেটাতে সরকারি অনুদানসহ আয়ের পরিমাণ ধরা হয়েছে তিন লাখ ৪৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয় ধরা হয়েছে দুই লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। মোট ঘাটতি এক লাখ ২১ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে (এডিপি) এক লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ধরা হয় এক লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। সরকারের অর্থায়নে অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা থেকে ঋণ ধরা হয়েছে ৭১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা আছে ৬০ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। উন্নয়ন বাজেটের মোট আকার ধরা হয়েছে এক লাখ ৭৯ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত অনুন্নয়ন বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই লাখ ৮২ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা।###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।