Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

থামেনি হালদায় দূষণ বর্জ্য ফেলার দায়ে পেপার মিল বন্ধ

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০১৮, ৯:৪৩ পিএম

উৎস বন্ধ না হওয়ায় থামেনি হালদা নদীর মারাত্মক দূষণ। নদীর সাত্তার ঘাট পয়েন্ট থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত দূষণের মাত্রা সবচেয়ে ভয়াবহ। আর এখানেই মা-মাছেরা ডিম ছাড়ে বেশি। মা-মাছের এই মূল প্রজনন ও বিচরণক্ষেত্রে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ, চিতল, আইড় মাছের আনাগোনা সবচাইতে বেশি। নদীর এ পয়েন্টে মারাত্মক দূষণে কী পরিমাণ মা-মাছ মারা গেছে কিংবা আদৌ কোন মা-মাছ বেঁচে আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেননি গবেষকরা। স্থানীয় জেলেরাও এ বিষয় নিয়ে রয়েছেন সংশয়ে। এদিকে গতকাল (রোববার) দূষণের দায়ে একটি পেপার মিল বন্ধ করে দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। তবে এখনো দূষণের উৎস হিসেবে এক ডজনের বেশি চিহ্নিত শিল্প কারখানা, ট্যানারি, পেপার মিল ও পোল্ট্রি খামার বর্জ্য নিঃসরণ করে যাচ্ছে। পাঁচ থেকে সাতটি খাল ও ছরা বেয়ে মারাত্মক দূষিত বর্জ্য মিশছে এশিয়ায় মিঠাপানির বড় জাতের মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীতে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে হালদা দূষণের জন্য সিডিএর অনন্যা আবাসিক এলাকায় একটি খাল ভরাট করাকে দায়ী করা হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে হালদা নদী হয়ে আশপাশের খাল-বিলে মা-মাছসহ অসংখ্য মাছ মরে ভেসে উঠেছে। এত বড় বিপর্যয়ের পরও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কোন কর্মকর্তা এখনো হালদা নদী পরিদর্শনে আসেননি। এদিকে বিশেষজ্ঞরা দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করতে কাজ করে যাচ্ছেন। গতকালও মদুনাঘাটসহ বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে হালদা নদীর দূষিত পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল নগরীর অক্সিজেন মোড়স্থ ম্যাক পেপার এন্ড বোর্ড মিলস লিঃ কারখানাটি বন্ধ করে দেয়া হয়। বর্জ্য নিষ্কাশনে ইটিপি নির্মাণ ও পরিবেশ ছাড়পত্র গ্রহণ না করা পর্যন্ত কারখানাটি বন্ধ থাকবে বলে জানান পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক। তিনি জানান, ১৯৯৪ সালে কারাখানাটি উৎপাদন শুরু করে। পরিবেশগত ছাড়পত্র এবং ইটিপি ছাড়াই কারখানার উৎপাদন শুরু হওয়ায় অপরিশোধিত তরল বর্জ্য হালদা নদীতে পড়ছে।
এ অপরাধে বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে কারখানাটিকে ৪৯ লাখ ৩ হাজার ২৪৪ টাকা ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ ও আদায় করা হয়। সেইসাথে কারখানাটিকে ২০১৭ সালের ফেব্রæয়ারির মধ্যে কারখানাটিকে ওই এলাকা থেকে সরিয়ে অন্য কোন শিল্পাঞ্চলে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। তবে কারখানার মালিকপক্ষ কারখানাটি সেখানে রেখেই বর্জ্য পরিশোধনে ইটিপি স্থাপনের অঙ্গীকার করে। কিন্তু বারবার তাগাদা দেয়ার পরও তারা সে অঙ্গীকার পূরণ করেনি। অপরিশোধিত কারখানা বর্জ্য সরাসরি হালদা নদীতে ফেলে আসছে।
উল্লেখ্য, অক্সিজেন বাইপাস এলাকায় অনন্যা আবাসিক এলাকার মাস্টার ড্রেন নির্মাণে বামনশাহী খালটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই পেপার মিলসহ বায়েজিদ এলাকার সকল তরল বর্জ্য খন্দকিয়া খাল হয়ে হালদা নদীতে পড়ছে।
গতকাল সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের উপস্থিতিতে কর্পোরেশনের কনফারেন্স হলে নগর উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির (সিডিসিসি) ১২তম সভায় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোঃ আজাদুর রহমান মল্লিক জানান, সিডিএ কর্তৃক অনন্যা আবাসিক এলাকাসহ আশপাশের কল কারখানার বর্জ্যরে কারণে হালদা নদীতে দূষণের সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় স্বার্থে এ হালদা নদীকে দূষণ থেকে রক্ষা করার উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। হালদা নদীকে জাতীয় নদী ঘোষনায় সকল কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। মেয়র হালদা রক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেন।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ