Inqilab Logo

শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪, ২২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বাবার ধ্যানে চিকিৎসা!

| প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০১৮, ২:১৪ এএম

মো. নজরুল ইসলাম, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) থেকে : রাজবাড়ীর নিমতলা গ্রামের রেললাইনের পাশে আঞ্জু বেগম বাবা লালন শাহের ধ্যানে বসে অর্ধশত রোগ নিরাময় কেন্দ্র গড়ে তুলেছে। গ্রামাঞ্চলের নিরীহ মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে ধোকা দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। দশ টাকার নজরানার চিকিৎসক আঞ্জু বেগম (৪০) রাজবাড়ী সদর উপজেলার শহীদ ওহাবপুর ইউনিয়নের নিমতলা গ্রামের মো. ইসলাম মোল্লার স্ত্রী। সপ্তাহের শনিবার ও বৃহস্পতিবার শত-শত রোগী রাজবাড়ী জেলাসহ পার্শ¦বর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে। অনেকেই পেয়েছে বাবার ধ্যানে দশ টাকার নিরাময়ী ওষুধ। দশ টাকার চিকিৎসা প্রচারণা চললেও গোপনে চলে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
আঞ্জু ফকীরের বাড়ী সরজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, ফকীর লালন শাহ এর ছবি সংযুক্ত আসনের ধ্যানে বসার অপেক্ষায় দশ টাকার অর্ধশত রোগের চিকিৎসক আঞ্জু বেগম(৪০)। এদিকে দুর-দুরান্ত থেকে আগত শতাধিক রোগী এসে ভীড় জমিয়েছে চিকিৎসকের বাড়ীর উঠানে। অন্যদিকে অর্ধশত পানে চুন, সুপারি ও জর্দা দিয়ে চিকিৎসকের খাবার তৈরি হয়ে গেছে। কখন বসবে ধ্যানে আঞ্জু বেগম এই নিয়ে আলোচনা শুরু হয় রোগীদের মাঝে, যেন অপেক্ষার শেষ নেই। ছোট একটি টিনের ১ চালা ছাপড়া ঘর। ভিতরটা কাগজের ফুল, কাঠের তৈরি আসন, চিকিৎসক আঞ্জু বেগমের হুইল চেয়ার। পাশে খেজুর পাটিতে বসে রয়েছে রোগীরা। আঞ্জু বেগম আসলেন তার আসন ঘরে। পানের বাটা থেকে একটি পান মুখে পুড়ে নিয়ে বসলেন ধ্যানে । পাশে তার স্বামী ইসলাম মোল্লা(৫০) বসে আসেন ধ্যানে রোগীদের বিভিন্ন ওষুধ পণ্য এগিয়ে দিতে। তার মেয়ে মায়ের (আঞ্জু) পায়ের পাশে বসে দশ টাকার নোটগুলো গুছিয়ে নিচ্ছেন। চিকিৎসকের আত্মীয়দের সাথে গোপনে আগত রোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রোগীরা রিক্সা, ভ্যান, অটোরিক্সা যোগে রাজবাড়ী জেলার, ফরিদপুর জেলা ে ও মানিকগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে তারা এসেছে বাবার ধ্যানে আঞ্জু ফকীরের চিকিৎসা সেবা নিতে। ১০ টাকা হতে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে হার্ট, লিভার, ক্যান্সার, কিডনি সমস্যা, শ্বাস কষ্ট, ব্রেনের সমস্যা, স্বামী-স্ত্রীর গোপন রোগ, জাদু টোনা থেকে নিরাময়, ভুত-জ্বিনের আছর থেকে মুক্তি, মাথা, পেট, শরীর ব্যাথাসহ অর্ধশত রোগ নিরাময়ের জন্য ওষুধ তালিকায় রয়েছে তাল মিসরী, চিনি, সরিষার তেল, গোলাপ জল, কালো মুরগির ডিম, কালিজিরা, মেথী, গবরের ছাই। যেমন রোগের ধরণ, তেমন চিকিৎসকের নজরানা। একাধিক ব্যক্তি জানান, তাদের মধ্যে কেউ কেই দীর্ঘ ৫ বছর যাবৎ চিকিৎসা নিয়ে ভালো হওয়ায় তারাও মাঝে মধ্যে অনেক রোগী নিয়ে আসেন। এদের মধ্যে কেউ আজই প্রথম এসেছেন অন্য কারো কাছে আঞ্জু ফকীরের চিকিৎসার কথা শুনে। প্রতিবেদনের প্রতিবেদক নিজেও রোগী সেজে আঞ্জু ফকীরের কাছে গেলে কোন প্রকার সত্যতা ফুটিয়ে তুলতে পারিনি চিকিৎসক। সচেতনমহল ও স্থানীয়রা জানায়, দীর্ঘ ৮/১০ বছর যাবৎ আঞ্জু ফকীরের বিভিন্ন আত্মীয়দের মধ্যে দিয়ে প্রচার ঘটিয়ে প্রতারণা করে চলছেন। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীদের মাসহারা দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে ভন্ডামি। এ ভন্ডামির কারণে ভেঙেছে অনেকের সাজানো সংসার। এমনকি থানায় মামলাও দায়ের হয়। আঞ্জু বেগম (৩৫) ও তার স্বামী মোঃ ইসলাম এর বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর নানান অভিযোগ রয়েছে। ইতিপূর্বে সে এই ভন্ডামি ব্যবসা চালিয়ে মোটা দাম দিয়ে জমি কিনেছে । গড়ে তুলেছেন ধন সম্পদ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ