মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
এম এম খালেদ সাইফুল্লা
সরকারের বদৌলতে নারী মুক্তি ও নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ক স্লোগান শুনতে শুনতে জনগণের যখন অতিষ্ঠ হওয়ার অবস্থা তখনও দেশে নারী নির্যাতন এবং নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা বেড়ে চলেছে। বাড়ছেও অত্যন্ত আশঙ্কাজনক হারে। পুলিশ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার জরিপেরভিত্তিতে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা গেছে, মাত্র এক বছরের ব্যবধানে নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে ৭৪ শতাংশ। ২০১৪ সালে নির্যাতনের শিকার নারীদের সংখ্যা ছিল দু’ হাজার ৮৭৩, অন্যদিকে ২০১৫ সালে সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার আটে। রিপোর্টে জানানো হয়েছে, নারীর প্রতি সহিংসতার প্রায় ৬৮ শতাংশই নথিভুক্ত হয় না। নথিভুক্ত হলে এই সংখ্যা অনেক বেশি হতো। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, নারীর ওপর শুধু নয়, বর্তমান সরকারের আমলে শিশুদের ওপরও নির্যাতন বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যানুযায়ী ২০১০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতনের মোট মামলা ছিল ১৭ হাজার ৭৫২টি। গত বছর এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২১ হাজার ২২০টি। চলতি বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে ‘নারী নিপীড়ন’ শিরোনামে ১০০ মামলার উল্লেখ রয়েছে রিপোর্টে। আলোচ্য সময়ে নারী ও শিশুরা নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ধরণগুলোর মধ্যে ধর্ষণ ও গণধর্ষণ তো রয়েছেই, রয়েছে যৌতুকের জন্য হত্যার মতো নিষ্ঠুরতাও। ধর্ষণের পর হত্যাও যেন স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে- যার সর্বশেষ উদাহরণ দেয়ার জন্য কুমিল্লার কলেজ ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর নাম উল্লেখ করতেই হবে। এ ধরনের আরো অনেক ঘটনার কথাও শোনা যায়। কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে এদেশে সাধারণত নারী নির্যাতনের বিশেষ করে ধর্ষণের ঘটনা গোপন রাখা হয় বলে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা সম্ভব নয়। রিপোর্টে বর্ণিত সময়েও নিশ্চয়ই গোপনীয়তা বজায় রেখেছে অনেকে। সুতরাং ধরে নেয়া যায়, প্রকৃত নির্যাতনের শিকার হয়েছে অনেক বেশিসংখ্যক নারী। বাস্তবে প্রতিদিন নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে নারীরা। কিন্তু ভাষণে-বিবৃতিতে লম্বা কথা বলার এবং নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস ধরনের আনুষ্ঠানিকতা পালনের বাইরে নির্যাতন ও সহিংসতা প্রতিহত করার কোনো চেষ্টা এখনো লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
বিশ্বের অন্য সব দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও যখন নারী মুক্তি ও নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে নানা ধরনের আসর জমানো হচ্ছে তখন নারীর ওপর এই নির্যাতন ও সহিংসতার খবর শুধু আশঙ্কাজনক নয়, নিঃসন্দেহে আপত্তিকরও। পর্যালোচনায় দেখা যাবে, কারণ আসলে সরকারের উদ্যোগহীনতা এবং ক্ষমতাসীনদের সস্তা রাজনীতি। বস্তুত স্বীকার করতেই হবে, সরকার নারীদের নিয়ে শুধু রাজনীতি করছে বলেই দেশে নারী নির্যাতন কমার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। অথচ সস্তা স্লোগানের বাইরে সরকারের যদি সামান্য সদিচ্ছাও থাকতো তাহলেই নারীদের অবস্থা এতটা শোচনীয় হয়ে উঠতো না। সদিচ্ছা না থাকার কারণগুলোও এখানে উল্লেখ করা দরকার। একটি প্রধান কারণ হলো, নির্যাতন ও সহিংসতা যারা চালাচ্ছে তাদের বড় অংশই কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে অভিযোগ রয়েছে। এদের কারো কারো আবার মন্ত্রী-মিনিস্টারদের সঙ্গেও দহরম-মহরম থাকে। ফলে তারা কোনো অপরাধ করলে পুলিশের পক্ষে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয় না। থানা এমনকি মামলা পর্যন্ত নিতে চায় না। মামলা করতে গিয়ে উল্টো হুমকি-ধামকি খেয়েছে এমন নারী ও তাদের স্বজনদের সংখ্যাও কম নয়। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ নিজেও নারীদের ওপর নির্যাতন চালায়। তখন তো নালিশ জানানোর বা বিচার চাওয়ার কোনো উপায় ও পথই থাকে না। এভাবে অসংখ্য নারীর জীবন নষ্ট হয়ে গেছে, ধ্বংস হয়ে গেছে বহুজনের সাধের সংসার। যৌন নির্যাতনের শিকার কত নারী যে বাধ্য হয়ে বিপথে গেছে এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেনি তারও কোনো হিসাব নেই।
আমরা মনে করি, ধরণ যেমনই হোক- নারীর ওপর নির্যাতনকারীদের কোনোক্রমেই ছাড় দেয়া যায় না। এ ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা অবশ্যই সরকারকে পালন করতে হবে। নারীদের নিয়ে সস্তা রাজনীতি বন্ধ করে সরকারের উচিত অবিলম্বে এই জঘন্য ও ভয়াবহ কর্মকা- প্রতিহত করার জন্য সচেষ্ট হয়ে ওঠা। নারী নির্যাতন প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে একটি আইনের খসড়ার কথা বহুদিন ধরে শোনা যাচ্ছে। আইনটিকে অবিলম্বে কার্যকর করা দরকার। নির্যাতিত নারীদের জন্য তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টার ধরনের প্রতিষ্ঠান থাকা দরকার, যাতে নির্যাতিত নারীরা আইনের আশ্রয় নিতে এবং সুবিচার পেতে পারে। অফিস আদালত ও শিল্প-কারখানাসহ কর্মস্থলেও নারীদের জন্য সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সরকারকে একই সঙ্গে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও সদিচ্ছার প্রমাণ দিতে হবে। কারণ, এই অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে যে, ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে অসংখ্য অপরাধী পার পেয়ে গেছে। এখনো যাচ্ছে। এমনটি চলতে থাকলে এবং পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো স্বাধীনভাবে ব্যবস্থা না নিতে পারলে নারী নির্যাতন কোনোদিনই প্রতিহত করা বা কমিয়ে আনা যাবে না। ক্ষমতাসীনদের বুঝতে হবে, লাফিয়ে বেড়ে চলা নারী নির্যাতনের ঘটনায় আর যাই হোক, সরকারের ভাবমর্যাদা অন্তত বাড়ছে না। বরং প্রধানমন্ত্রী নারী বলে উল্টোটাই ঘটছে।
ষ লেখক : যুগ্ম মহাসচিব কেন্দ্রীয় কমিটি ও সভাপতি ঢাকা মহানগর, এলডিপি, চেয়ারম্যান মেহেদী গ্রুপ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।