Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বাজেট পদক্ষেপ- ৩১ ধরনের দেশি পণ্যের ট্যারিফ বেড়েছে

প্রকাশের সময় : ২০ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৫ পিএম, ১৯ জুন, ২০১৮

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : দেশে উৎপাদিত হয় এমন ৩১ ধরনের পণ্যের ট্যারিফ মূল্য বাড়ানো হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে। পণ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো জুস, বিস্কুট, কেক, টমেটো সস বা কেচআপ, এলপি গ্যাস, তৈরি পোশাকের ঝুট, আমসত্ত¡, চশমার ফ্রেম, ডুপ্লেক্স বোর্ড।
ট্যারিফ মূল্য বৃদ্ধির ফলে শুল্ক ও কর বাবদ স্থানীয় উদ্যোক্তাদের খরচ বাড়বে। বলা যায়, এসব উদ্যোক্তার জন্য বাজেটে সুখবর দেওয়া হলো না। অন্যদিকে চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে একই ধরনের পণ্যের আমদানি বাড়তে পারে। আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ট্যারিফ মূল্যের পরিবর্তনটি আনা হয়েছে।
ট্যারিফ মূল্য হলো- উৎপাদন বা প্রস্তুত পর্যায়ে পণ্যের ন্যূনতম খরচের নির্ধারিত মূল্য। শুল্ক ও কর ফাঁকি ঠেকাতে এবং ভোক্তা পর্যায়ে গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহের চিন্তা করে সরকার অনেক সময় বিভিন্ন পণ্যের ট্যারিফ মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। কেননা উৎপাদন মূল্য কমিয়ে দেখিয়ে উৎপাদকেরা শুল্ক ও কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নিতে পারেন। আবার মানহীন বা নি¤œমানের পণ্যের সরবরাহ ঠেকাতেও ট্যারিফ মূল্য বসানো হয়। ট্যারিফ মূল্যের ওপরেই সম্পূরক শুল্ক (যদি থাকে), মূল্য সংযোজন কর (মূসক), অগ্রিম ব্যবসায় ভ্যাট বা এটিভি, অগ্রিম করসহ যাবতীয় শুল্ক ও কর বসানো হয়। ট্যারিফ মূল্য হচ্ছে শুল্ক ও কর বসানোর ভিত্তিমূল্য। ট্যারিফ মূল্য কমানো বা বাড়ানো হলে পণ্যের দাম কমতে বা বাড়তে পারে। সাধারণত ট্যারিফ মূল্য বাড়লে স্থানীয় উৎপাদকেরা সমস্যায় পড়েন।
প্রথমেই দেখা যাক, জুসে কী হলো। দেশের কোনো উদ্যোক্তা আম, আনারস, পেয়ারা ও তেঁতুলের জুস উৎপাদন করলে তাঁর খরচ বাড়বে। কারণ, এসব পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে ট্যারিফ মূল্যে ২৫ শতাংশ বেড়েছে। আগে এক লিটার জুস দেশে উৎপাদন করলে ট্যারিফ মূল্য ধরা হতো ২০ টাকা। এখন থেকে ধরা হবে ২৫ টাকা। এই ২৫ টাকা ধরেই সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট, অগ্রিম করসহ প্রযোজ্য হারে শুল্ক ও কর বসবে। সে ক্ষেত্রে ভোক্তাদের কমপক্ষে ২৫ শতাংশ বেশি অর্থ খরচ করে এসব পণ্য কিনতে হবে। একইভাবে টমেটো পেস্ট ও আমসত্তে¡র ট্যারিফ মূল্য দ্বিগুণ করা হয়েছে। আগে টমেটো পেস্টের প্রতি কেজিতে ট্যারিফ মূল্য ছিল ২০ টাকা, এখন করা হয়েছে ৪০ টাকা। আর আমসত্তে¡র ১৬ গ্রাম প্যাকের ট্যারিফ মূল্য ছিল দুই টাকা, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার টাকা। উৎপাদক মুনাফার হার না কমালে এসব পণ্যের দাম দ্বিগুণ হতে পারে। দেশে প্রাণ গ্রæপসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জুস, আমসত্ত¡সহ এসব পণ্য তৈরি করে থাকে।
অন্যদিকে দেশি টমেটো কেচআপ বা সস এবং আম, আনারস, পেয়ারা, কলার পাল্পের পাশাপাশি তেঁতুলের পেস্টের দামও বাড়তে পারে। বোতলজাত টমেটো সসের ট্যারিফ মূল্য বেড়েছে ১০ টাকা। এখন থেকে প্রতি কেজির দাম কমপক্ষে ৬৫ টাকা ধরতে হবে। এতে উৎপাদকদের কারখানা থেকে বের হওয়ার পর বাজারে আসার আগেই সসের দাম বেড়ে যেতে পারে।
যাদের চোখের সমস্যা আছে, তাদের জন্য সুখবর নেই। দেশে তৈরি চশমার ফ্রেম ও গøাসের ওপর ট্যারিফ মূল্য বাড়ানো হয়েছে। চশমার প্রতি পিস প্লাস্টিক বা ধাতব ফ্রেমে ১০ টাকা করে ট্যারিফ মূল্য বেড়েছে। এর ফলে চশমা ও সানগøাসের দাম ২৫ শতাংশ বাড়তে পারে। প্রতি পিস চশমার প্লাস্টিক ফ্রেম এখন ৪০ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা, মেটাল ফ্রেম (স্প্রিংযুক্ত হোক বা না হোক) ৫০ টাকার পরিবর্তে ৬০ টাকা, প্লাস্টিকের সানগøাস ৪০ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা, ধাতব সানগøাসের ফ্রেম ৫০ টাকার পরিবর্তে ৬০ টাকা ট্যারিফ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আর রিডিং গøাসের প্রতি পিসে ১০ টাকা বাড়িয়ে ৫৫ টাকা করা হয়েছে। এখন দেশে চশমার ফ্রেম ও গøাস তৈরি হচ্ছে। এগুলোর দাম ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বাড়তে পারে। অন্যদিকে বিদেশ থেকে চশমা ফ্রেম ও গøাস আমদানি বাড়তে পারে।
দেশে এলপি গ্যাসের চাহিদা ব্যাপক হারে বাড়ছে। এ অবস্থায় ট্যারিফ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছ, যা আগে ছিল না। এখন থেকে ৪৫ কেজির ঊর্ধ্বে এলপি গ্যাস সরবরাহ করা হলে প্রতি কেজিতে ট্যারিফ মূল্য হবে তিন টাকা। এখন দেখার বিষয়, এটির দাম বাড়ে কি না। তৈরি পোশাক খাতের ঝুটের বিশাল ব্যবসা আছে। সেখানেও ট্যারিফ মূল্য দ্বিগুণ করা হয়েছে। আগে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা ধরে ভ্যাট দিতে হতো। এখন থেকে কটন ইয়ার্ন বর্জ্য ও ডেনিম বর্জ্যে ২০ টাকা কেজি দরে ট্যারিফ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
হাতে তৈরি বিস্কুট ও কেকের ট্যারিফ মূল্য পুনর্র্নিধারণ করা হয়েছে। এতে পাড়া-মহল্লার ছোট উৎপাদকদের ছাড় দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে হাতে তৈরি এক কেজি বিস্কুটের দাম যদি ১৫০ টাকার কম হয়, তাতে ভ্যাট দিতে হবে না। আগে এই সীমা ছিল ১০০ টাকা পর্যন্ত। তবে দাম ১৫০ টাকা পেরোলেই প্রতি কেজির দাম ৬০ টাকা ধরে শুল্ক ও কর বসানো হবে। হাতে তৈরি কেকেও একইভাবে ছাড় দেওয়া হয়েছে। সেখানে প্রতি কেজির দাম ১৫০ টাকা পেরোলেই ৬০ টাকা দরে শুল্ক ও কর বসবে। এ ছাড়া নতুন বাজেটে অন্য যেসব পণ্যের ওপর ট্যারিফ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ট্রান্সফরমার অয়েল, লুববেøন্ডিং অয়েল, ডুপ্লেক্স বোর্ড, কোটেড পেপার, সেলফ কপি পেপার, কৃত্রিম আঁশ, সিআর কয়েল থেকে তৈরি জিপি শিট, সিআই শিট ইত্যাদি

 



 

Show all comments
  • Mohammed Shah Alam Khan ২০ জুন, ২০১৮, ১১:০০ পিএম says : 0
    এই সংবাদটা জাতীর জন্য সত্যই দুর্ভাগ্য জনক একটা সংবাদ। আমরা এখন যারা এসব তরল পানিয় যে মূল্যে পাই সেটা এখন বৃদ্ধি পাবে এতে করে আমাদের ক্রয় ক্ষমতা কমে যাবে এবং বিক্রয় কমে যাবে ফলে উৎপাদনকারি উৎপাদনও কমে যাবে এতে করে তার শ্রমিকের সংখ্যাও কমে যাবে। আবার যারা রফতানি করে তাদেরও মূল্য বৃদ্ধির জন্য ক্রেতা হারাবে এবং তাদের উৎপাদন কমে যাবে এবং শ্রমিক ছাটাই হবে। লোকেরা চাকুরি হারিয়ে অনিশ্চয়তায় নিজেকে হারিয়ে হাহাকার করবে এবং এর প্রভাব পরবে সামাজিক ব্যবস্থায় তাই না?? ট্যাক্স বাড়িয়ে সরকারের পকেট ভরে উন্নয়নের কাজ করা জনগণ এক পর্যায় পর্যন্ত মেনে নেয় কিন্তু বার বার উন্নয়নের নামে বাজেটে ট্যাক্স বাড়িয়ে জনগণের নাভিশ্বাস করে তুলে সেই টাকা যখন কাজের মূল্য বার বার বৃদ্ধির নামে আত্মসাৎ করতে দেখলে জনগণ কতক্ষণ চুপ থাকবে এটাই এখন প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে তাই না?? এমনিতেই সরকারের নীরব ভোটের আতঙ্কে অস্থির তারপর অর্থমন্ত্রী যদি এভাবে প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে জনগণের নাভিশ্বাস করে তুলে দলের সমর্থকদেরকে হারাতে থাকে তাহলে আসন্ন নির্বাচনের চেহারা যদি পরিবর্তিত হয়ে যায় তারজন্য কাকে দায়ি করা যাবে এটাই প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে তাই না?? আল্লাহ্‌ মুক্তিযুদ্ধের দলকে জনগণের অবস্থা বুঝার জ্ঞান দান করুন। আমীন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাজেট

১৩ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ