Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ঈদযাত্রায় স্বস্তি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:১৪ পিএম, ১৪ জুন, ২০১৮

ঈদ যাত্রায় এবার অন্যান্য বারের মতো যানজটের ভোগান্তি নেই। সড়ক পথে যাত্রীরা অনেকটা স্বস্তিতেই বাড়ি ফিরছেন। সেক্ষত্রে বলা যায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী তার কথা রেখেছেন। নদী পথে গতকাল সদরঘাটের লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় থাকলেও তেমন কোন ভোগান্তি ছিল না। প্রচুর লঞ্চ থাকায় যাত্রীরা স্বচ্ছন্দে যেতে পারছেন। তবে লঞ্চ নির্ধারিত সময়ের পড়ে ছাড়ার অভিযোগ করেছেন অনেকে। আবার অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগও যাত্রীদের পক্ষ থেকে আছে। তবে লঞ্চ মালিকরা বলছেন, তারা সরকারের নির্ধারিত ভাড়াই নিচ্ছেন। ঈদ ছাড়া অন্য সময় নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম নেয়া নয়। ঈদের সময় সরকার নির্ধারিত ভাড়া নেয়া হচ্ছে। এবার ট্রেনে যাত্রীদের কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে ট্রেনের সিডিউল এলোমেলো হয়ে পড়েছে। স্টেশনে প্রচন্ড ভিড়ের মধ্যে যাত্রীরা ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে বিরক্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে শিশুদের ভোগান্তি একটু বেশি হচ্ছে। এতে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। রেল স্টেশনের প্লাটফর্মে যেমন যাত্রীদের ভিড় তেমনি ট্রেনের ভিতরে, ছাদে সব খানে যাত্রীদের ঠাসাঠাসি অবস্থা। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ভিড়ের চাপে চিড়েচ্যাপ্টা অবস্থা। আসন ছাড়াও ট্রেনের ভেতরে দাঁড়িয়ে, পাদানিতে ঝুলে, ইঞ্জিনের সামনে পেছনে আর ছাদে চড়ে বাড়ির পথ ধরেছেন ঘরমুখো মানুষ। রেল কতৃপক্ষ বলছেন তারা যাত্রীদের নিরাপদে পৌঁছে দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন। ট্রেন সময় মতো না ছাড়লেও কিছুটা দেরিতে হলেও যাতে যাত্রীরা নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন সেই দিকে রেল কতৃপক্ষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। এতে করে ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়কে তারা খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। যাত্রীদের চাপ বেশি থাকায় ট্রেন দেরি করছে বলে জানান কমলাপুর স্টেশনের ব্যবস্থাপক সিতাংশু চক্রবর্ত্তী। তিনি বলেন, পাঁচটি ট্রেন ছাড়া বাকিগুলো সময়মতো ছেড়ে গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার পাঁচটি বিশেষ ট্রেনসহ মোট ৬৯টি ট্রেন ঢাকা ছেড়ে যায়। এর মধ্যে উত্তরাঞ্চলগামী কয়েকটি ট্রেনের যাত্রায় দেরি বিষাদ ছড়িয়েছে যাত্রীদের মধ্যে। গরমের মধ্যে শিশুদের ছিল চরম ভোগান্তি। চিলাহাটির নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি কমলাপুর ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল সকাল ৮টায়। যাত্রীরা ভোর থেকেই স্টেশনে এসে ট্রেনের অপেক্ষায় ছিলেন। সে ট্রেন ৯টায়ও ছেড়ে যায়নি। এতে যাত্রীরা অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অপেক্ষা করতে করতে একজন ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা ট্রেনে করে সৈয়দপুর পর্যন্ত যাব। সেখান থেকে যেতে হবে বীরগঞ্জে। সকাল ৮টায় ট্রেন ছাড়লে সেটা বিকাল ৫টার দিকে সৈয়দপুর পৌঁছে। কিন্তু আজ তো মনে হচ্ছে রাত ৯টার মতো বেজে যাবে। ওই ট্রেনের আরেক বিরক্ত কণ্ঠে বলেন, ‘এই ট্রেনের টিকেট কিনেই ভুল করেছি। আমি সাধারণত রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে যাই। রংপুর এক্সপ্রেস দেরি করে বলে এবার নীলসাগরের টিকেট কিনেছিলাম। কিন্তু এই ট্রেন তো দেখি আরও বেশি দেরি করল।’
লালমনিরহাট ঈদ স্পেশাল ট্রেনের ছেড়ে যাওয়ার সময় বেলা সোয়া ৯টায়। কিন্তু বেলা সাড়ে ১১টায়ও ট্রেনটি প্ল্যাটফর্মে আসেনি। ওই ট্রেনের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা চরম বিরক্ত। রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন ৫৫ মিনিট দেরি করে ছেড়েছে। এছাড়া কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি ২০ মিনিট পর ছেড়েছে। খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলে তা ছেড়েছে ৭টা ২৫ মিনিটে। সকাল ৯টায় রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলে সেটি দেড় ঘণ্টা দেরি করে বেলা সাড়ে ১০টায় স্টেশন ছেড়ে যায়। দিনাজপুরগামী একতা এক্সপ্রেস ট্রেন আধাঘণ্টা দেরি করেছে। ট্রেনটি বেলা দশটার পরিবর্তে সাড়ে ১০টায় ছেড়ে যায়। ধূমকেতু, সুন্দরবন ট্রেন দুটি দেরি করে স্টেশনে এসেছে। এজন্য এগুলো ছাড়তেও দেরি হয়েছে।
যশোর থেকে বিশেষ সংবাদদাতা মিজানুর রহমান তোতা জানান, রাজধানী ঢাকা ও চট্রগ্রামসহ বিভিন্নস্থানে চাকুরীজীবি, ব্যবসায়ী ও অন্য পেশায় কর্মরত যাদের বাড়ী যশোর, খুলনা ও ঝিনাইদহসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তাদের বাড়ি ফিরতে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। প্রচন্ড গরম, রাস্তাঘাট খারাপ, টিকিট নেই, পরিবার-পরিজন নিয়ে বাস ট্রেন কাউন্টারে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকা, প্রচন্ড ভিড়ে নাজেহাল হওয়াসহ ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ দুর্গতি শেষ নেই।
লঞ্চ যাত্রায় স্বস্তি থাকলেও অতিরিক্ত যাত্রী নেয়ার কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও রয়েছে। আমাদের চাঁদপুর সংবাদদাতা বি এম হান্নান জানান, লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহনে ে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নাড়ির টানে ঘরমুখো মানুষের ¯্রােত এখন নৌ-পথে। লঞ্চগুলোতে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করায় একদিকে যাত্রী দুর্ভোগ, অন্যদিকে নিরাপত্তা ঝুঁকিও বাড়ছে। এ কারনে যে কোন সময় ঘটতে পারে অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা । ৭শ’ থেকে ৮শ’ যাত্রী বহনকারী লঞ্চগুলো এখন ঢাকা থেকে যাত্রী বহনস করছে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রায় ১৫টি যাত্রীবাহী লঞ্চ ঢাকা সদরঘাট থেকে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চাঁদপুর ঘাটে আসছে। ২ হাজারের কম যাত্রী ছিলো খুব কম লঞ্চেই। লঞ্চ মালিক প্রতিনিধি রুহুল আমিন জানান, চাঁদপুর-ঢাকা নৌ-রুটে প্রায় ২৪টি লঞ্চ যাতায়াত করে। এছাড়াও অন্য লাইনের লঞ্চগুলো চাঁদপুর ঘাটে আসেন। সকাল থেকে যত লঞ্চ সদরঘাট থেকে আসছে, সবগুলো অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে আসছে। চাঁদপুর থেকে যে সব লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে যাচ্ছে সেগুলোতে অতিরিক্ত যাত্রী নেই।
আমাদের আরিচা সংবাদদাতা জানান, ঈদকে সামনে রেখে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে পর্যাপ্ত ফেরি থাকায় পূর্বের তুলনায় এবার যানজট পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক রয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানায়, এ নৌরুটে মোট ২০ টি ফেরি সার্বক্ষণিক যানবাহন পারাপারে নিয়োজিত রয়েছে। এর মধ্যে বড় আকারের ৯ টি রো-রো ফেরি, মাঝারি আকারের ১ টি,কে-টাইপ ৩ টি ও ৭ টি ইউটিলিটি ফেরি দিয়ে ঈদের চাপ মোকাবেলা করা হচ্ছে। এদিকে ঘরমুখো যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাস, কারের দীর্ঘ লাইন পড়েছে। বাস ও কার পৃথক সড়ক পথে ওয়ান ওয়ে পদ্ধতিতে ঘাটে প্রবেশ করানো হচ্ছে। ঘাট এলাকায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক টহল অব্যাহত রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ