Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ডিফ ফ্রিজে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার তদন্ত

| প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

০ নুরুল ইসলাম ফারুকী থেকে স্কুলছাত্রী করবী ০ সময় গড়ালেও রহস্যের জট আটকে থাকে
সাখাওয়াত হোসেন : রাজধানীতে সংঘটিত একাধিক চাঞ্চল্যকর খুনের মামলার তদন্তে তেমন অগ্রগতি হচ্ছে না। এতে করে এসব ঘটনায় জড়িতরা আড়ালেই থাকছে। কোনো কোনো মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা একাধিকবার বদল করা হয়েছে। খুনের সাথে জড়িতদের শনাক্ত করতে না পারায় বিচার নিয়ে পরিবারের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।
চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের তালিকায় রয়েছে সুপ্রিম কোর্ট জামে মসজিদের প্রধান খতিব ও টেলিভিশন উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু, রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশনে পল্লবী মহিলা ডিগ্রী কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্রী আঁখি আক্তার, হাজারীবাগে ১২ বছরের স্কুলছাত্রী তাসনিম রহমান করবী, গোপীবাগে কথিত পীর লুৎফর রহমান ফারুক ও তার ছেলেসহ ছয়জন।
নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যাকান্ডের পৌনে চার বছর পার হলেও কোনো ক্লু খুঁজে পায়নি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। ঘটনার শুরুতেই পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হলে থানা পুলিশ তদন্তে অনিহা প্রকাশ করে। পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে মামলার তদন্তভার গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময় নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করলেও তারা কোনো কিনারা করতে ব্যর্থ হয়। মামলার তদন্ত সিআইডিতে যাওয়ার পর অগ্রগতি বলতে তিন দফা তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তনই হয়েছে।
সিআইডি বলছে, তিনটি বিষয়কে ধরে তদন্ত চলছে। এগুলো হচ্ছে জঙ্গি, আর্থিক লেনদেন এবং পূর্বশত্রæতা। ২০১৪ সালের ২৭ অক্টোবর রাতে রাজধানীর ১৭৪, পূর্ব রাজা বাজারের বাসার দোতালায় মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় নিহত ফারুকীর ছেলে ফয়সাল ফারুকী অজ্ঞাত আট-নয়জনকে আসামি করে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা দায়ের করেন।
চট্টগ্রামের সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার ২ বছর পার হয়েছে। এখনো এ মামলার তদন্ত কাজ শেষ হয়নি। মিতু হত্যার রহস্য উদঘাটন ও আসামিরা গ্রেফতার না হওয়ায় হতাশ নিহতের বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন। তিনি দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মেয়ে হত্যায় জড়িতদের বিচার দেখে যেতে চান। এখনো জানতে পারলাম না কেন কে বা কারা মিতুকে হত্যা করেছে। মামলার গতিই পরিবর্তন হয়ে গেছে। মামলার বাদি ও মিতুর স্বামী বাবুল আক্তারকে বাঁচাতে আদালতে চার্জশিট দিতে সময়ক্ষেপন করা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, মামলার বাদিই যেখানে খুনি, ন্যায় বিচারের কি করে আসা করা যায়। ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল নিয়ে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ছুঁড়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় বাবুলের স্ত্রী মিতুকে। চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এডিসি কামরুজ্জামান বলেন, মিতু হত্যা মামলার তদন্ত চলছে। তদন্তে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। তদন্ত শেষ হলেই চার্জশিট দাখিল করা হবে।
রাজধানীর বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে পল্লবী মহিলা ডিগ্রী কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্রী আঁখি আক্তার হত্যা রহস্যের জট খোলেনি। আঁখির চার বন্ধুকে পুলিশ সন্দেহের তালিকায় রেখেছে। গত ২৪ ফেব্রæয়ারি গভীর রাতে পুলিশ বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রাভেল ব্যাগের ভেতর থেকে আঁখির লাশ উদ্ধার করে। প্রথমে তার পরিচয় পাওয়া না গেলেও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে স্বজনরা পরিচয় শনাক্ত করেন। ঢাকা রেলওয়ে থানার ওসি ইয়াসিন ফারুক জানান, ওই ঘটনায় আঁখির বন্ধু সাব্বিরকে জিজ্ঞাবাদ করা হয়েছে। সে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেনি। তবে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও কয়েকজনকে আটকের চেস্টা চলছে। আঁখির বড় মামা নুরুল ইসলাম খান জানান, তারা পুলিশকে মৌখিকভাবে কয়েকজনের নাম জানিয়ে কিছু তথ্যও দিয়েছেন।
২০১২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর হাজারীবাগের বাসায় ১২ বছরের স্কুলছাত্রী তাসনিম রহমান করবীকে শ্বাসরোধে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়। মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আখতারুজ্জামান বলেন, ঘটনার ক্লু পাওয়া যাচ্ছে না। তবে একজন আসামিকে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাকে গ্রেফতার করা গেলে নতুন কোনো তথ্য পাওয়া যাবে।
২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর পুরান গোপীবাগে বাসায় প্রবেশ করে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয় কথিত পীর লুৎফর রহমান ফারুক ও তার ছেলেসহ ছয়জনকে। ছয় খুন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক কাজী গোলাম কবির বলেন, এ ঘটনায় গাফফার ও তরিকুল নামে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে চারজনের নাম পাওয়া গেলেও ঠিকানা পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, ওই মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে জঙ্গি সংগঠন জেএমবির ছয় সদস্য গ্রেফতার হয়েছে।
২০১৫ সালের ১৩ মে পল্লবীতে নিজের ফ্ল্যাটে খুন হন গৃহবধূ সুইটি আক্তার ও তার মামা আমিনুল ইসলাম। জোড়া খুনের ঘটনায়ও দীর্ঘ সময় ধরে অন্ধকারে রয়েছে পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির এসআই মোফাজ্জল হোসেন জানান, সুইটির স্বামীকে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হলেও ঘটনায় সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া অনেক আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ক্লু পাওয়া যাচ্ছে না। তবে পুলিশ রহস্য উদঘাটনে কাজ করে যাচ্ছে।



 

Show all comments
  • আব্বাস ১৫ জুন, ২০১৮, ৬:২৪ এএম says : 0
    আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কি করতেছে ?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মামলা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ