পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাসান সোহেল : ঈদ বাণিজ্য চাঙ্গা দেশের অর্থনীতি। এছাড়া জাতীয় নির্বাচন ও ঈদের উত্তাপে গ্রামীণ অর্থনীতিও ফুরফুরে অবস্থায়। এবারের ঈদ বাজারে কমপক্ষে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেচাকেনা হবে বলে ব্যবসায়ী ও তাদের সমিতিগুলো আশা করছে। শুধুমাত্র পোশাক খাতেই বাণিজ্যের পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকা। পোশাকের বাজারে সারাবছর যে বেচাকেনা হয় তার বড় অংশই হয় ঈদ-উল-ফিতরের আগে।
বড় ফ্যাশন হাউসগুলোর জন্য রোজার ঈদে বিক্রি বছরের মোট বিক্রির কমপক্ষে ২৫ শতাংশ। আর ঈদ বাজারে ছোট পোশাকের দোকানগুলোর বিক্রি সারা বছরের বিক্রির অর্ধেকেরও বেশি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদে ক্রেতাদের মাঝে দেশীয় পণ্যের চাহিদা আগের চেয়ে অনেকটাই বেশি। তবে, কাপড়ের বাজারে পাকিস্তানকে হটিয়ে বাজার অনেকটাই দখল করে নিয়েছে ভারত। থাইল্যান্ড, চীনসহ অন্যান্য বিদেশী পণ্যের চাহিদাও আছে। ঈদের বাড়তি চাহিদার কারণে বাজারে টাকার প্রবাহ বেড়ে যায়। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। ধর্মীয়ভাবে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ। তাই নগদ টাকার চাহিদার কারণে একেবারে নি¤œস্তর থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত বাজারের নিয়ামক উৎসগুলো এ সময়ে অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বেড়ে যায় অর্থের প্রবাহ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে দেখা যায়, ঈদের সময় ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকা বের হয়ে মানুষের পকেটে চলে যায় অনেক বেশি হারে। গত বছর ঈদ পালিত হয় জুন মাসে। ওই জুনে মে মাসের তুলনায় ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার প্রবাহ বাড়ে সাড়ে ১৭ শতাংশ। জুনে ব্যাংকের বাইরে চলে যাওয়া টাকার পরিমাণ এক লাখ ৩৭ হাজার ৫৩১ কোটি টাকা। মে মাসে যা ছিল এক লাখ ১৭ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। মে মাসে এপ্রিলের তুলনায় ব্যাংকের বাইরে যাওয়ার পরিমাণ বাড়ে মাত্র তিন শতাংশ। ঈদ শেষ হওয়ার পর জুলাইয়ে পকেট থেকে টাকা ব্যাংকে চলে যায়, যার ফলে জুলাইয়ে জুনের তুলনায় বাজারে টাকার পরিমাণ আট শতাংশ কমে যায়।
রোজা ও ঈদ উৎসবের অর্থনীতি নিয়ে এফবিসিসিআইয়ের এক সমীক্ষায় বলা হয়, এ সময় ইফতার ও সেহরি উৎসবে যোগ হয় চার হাজার ৮০০ কোটি টাকা। পোশাকের বাজারে যোগ হচ্ছে ৩২ হাজার কোটি টাকা। রমজান ও ঈদে অ্যাপায়ন বাবদ অর্থাৎ ভোগ্যপণ্যের বাজারে বাড়তি যোগ হচ্ছে ২৪ হাজার কোটি টাকা। ধনী মানুষের দেওয়া জাকাত ও ফিতরা বাবদ আসছে ৬০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। পরিবহন খাতে অতিরিক্ত যাচ্ছে ৬০০ কোটি টাকা। ঈদকেকেন্দ্র করে ভ্রমণ ও বিনোদন বাবদ ব্যয় হয় চার হাজার কোটি টাকা। এসব খাতে নিয়মিত প্রবাহের বাইরে অতিরিক্ত যোগ হচ্ছে এক লাখ ২৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
এর বাইরে আরও কয়েকটি খাতের কর্মকান্ড অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে সাড়ে ২০ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বোনাস বাবদ প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা, দেশব্যাপী ৬০ লাখ দোকান কর্মচারীর বোনাস পাঁচ হাজার কোটি টাকা, পোশাক ও বস্ত্র খাতের ৭০ লাখ শ্রমিকের সম্ভাব্য বোনাস তিন হাজার কোটি টাকা, যা ঈদ অর্থনীতিতে বাড়তি আসছে। এ ছাড়া আরও রয়েছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। ঈদের সময়ে প্রবাসীরা তাদের আত্মীয়স্বজনের কাছে বাড়তি ব্যয় মেটাতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়ে থাকেন। এ হিসাবে আরও বাড়তি আসছে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। এসব মিলে ঈদবাজারে বাড়তি যোগ হচ্ছে দেড় থেকে দুই লাখ কোটি টাকা।
ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিবছরই ঈদ অর্থনীতির আকার ১০-১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। ফলে অর্থনীতিও চাঙ্গা হয়ে উঠছে।
এদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এটিই শেষ ঈদুল ফিতর। তাই সব রাজনৈতিক দলের নেতারা ছুটছেন নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায়। সম্ভাব্য প্রার্থীদের আনাগোনায় সরগরম হয়ে উঠছে গ্রামীণ জনপদ। ঈদ আয়োজনে যুক্ত হয়েছে নির্বাচনী আমেজ। রমজান মাসজুড়ে ইফতার মাহফিলসহ নানা কৌশলে প্রচার ও গণসংযোগ করলেও শেষ সময়ে এসে ঈদ শুভেচ্ছা-উপঢৌকনের নামে দু’হাতে নগদ টাকা ছড়াচ্ছেন তারা। গরিবদের মধ্যে বিলাচ্ছেন যাকাতের কাপড়, সেমাই-চিনিসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী।
এর ওপর চাকরিজীবী শহুরে মানুষ শেকড়ের টানে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে বেতন-বোনাসের সঙ্গে সঞ্চয়ের নগদ টাকা নিয়ে ফিরছেন নিজ গাঁয়ে। বিদেশ থেকেও পরিবার-পরিজনের জন্য এসেছে বিপুল প্রবাসী আয়। প্রবাসী ও শহুরে মানুষের যাকাত, ফিতরা ও দান-খয়রাতের অর্থের সিংহভাগই গেছে গ্রামে। সব মিলিয়ে ঈদকে ঘিরে বেড়েছে টাকার লেনদেন, ফলে চাঙ্গা গ্রামীণ অর্থনীতি।
অর্থনীতিবিদরা জানান, ঈদ উপলক্ষে চাকরিজীবী ও শ্রমজীবী মানুষের প্রাপ্ত বোনাসের একটি বড় অংশই যায় গ্রামে। এছাড়া ঈদ উপলক্ষে গ্রামীণ কিছু পণ্যের চাহিদা শহরে বাড়ে। এসব পণ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আয়ও বাড়ে, যা গ্রামীণ অর্থনীতিকে সরগরম করে তোলে।
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্য মতে, এ শিল্পে ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। এসব শ্রমিকের ৯৫ শতাংশই গ্রাম থেকে আসা। যার ৭০ শতাংশই ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি যান। তাই কয়েক মাস আগ থেকেই তারা টাকা জমাতে থাকেন ঈদের জন্য। এর সঙ্গে বেতন- বোনাসের পুরো অর্থই খরচ হয় ঈদকে ঘিরে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, এবার ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে প্রবাসীরা প্রচুর প্রবাসী আয় দেশে পাঠিয়েছে। সারা বছর প্রবাসী আয়ের খরা থাকলেও মে মাসে রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয় এসেছে। সদ্য বিদায়ী মে মাসে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৪৮ কোটি ২৮ লাখ ডলারেরও বেশি প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন, যা একক মাস হিসাবে গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়াও জুন মাসের শুরু থেকেই প্রচুর প্রবাসী আয় আসছে, যার সিংহভাগই গেছে গ্রামে।
এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থী এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রথম সারির নেতারা নির্বাচনী ঈদকে ঘিরে কী পরিমাণ টাকা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় নিয়ে গেছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও তা আনুমানিক দেড় হাজার কোটি টাকার কম নয় বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
তাদের ভাষ্য, ৩০০ আসনের মধ্যে অন্তত ২০০ আসনে গড়ে দুজন করে ৪০০ বিত্তশালী রাজনীতিবিদ রয়েছেন। যারা এবারের ঈদকে ঘিরে দান-খয়রাত-বকশিশ ও শুভেচ্ছা উপহার দেয়ার মধ্য দিয়ে এলাকায় নিজের শক্তিশালী অবস্থান গড়ে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন। আবার তাদের পক্ষে ঘনিষ্ঠজন ও বিশেষ সুযোগ-সুবিধাভোগীরাও অনেকে গোপনে-প্রকাশ্যে বিপুল টাকা উড়াচ্ছেন। এককথায় নির্বাচনী ঈদকে ঘিরে গ্রামে টাকার প্রবাহ সাধারণ সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়েছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ইনকিলাবকে বলেন, ঈদ উপলক্ষে চাকরিজীবী ও শ্রমজীবী সব মানুষই বোনাস পান। এর বড় অংশই গ্রামে যায়। রেমিটেন্স পাঠানোর পরিমাণও বাড়ছে। ঈদ উপলক্ষে গ্রামীণ কিছু পণ্যের চাহিদা শহরে বাড়ে। এসব পণ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আয়ও বাড়ে। সব মিলিয়ে বাড়তি অর্থ উৎসব কেন্দ্র করে গ্রামে যাচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।