পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : টানা ভারী বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানির চাপে সিলেট, খাগড়াছড়ি কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও ফেনীর বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা বিস্তৃতি লাভ করেছে। নতুন নতুন করে প্লাবিত নি¤œাঞ্চল। ফলে দুর্গত এলাকাগুলোতে ঈদ উৎসব নিয়ে শংকা দেখা দিয়েছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে জনজীবন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে হবিগঞ্জে খোয়াই, মৌলভীবাজারের মনু, ধলাই, ফেনীতে মুহুরী নদী ও মাইনী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব জেলায় অনেক স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। ঝুঁকিতে রয়েছে বিভিন্ন উপজেলা শহর রক্ষা বাঁধ। বন্যার কারণে দুই পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িসহ দুর্গত জেলাগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের মহাদুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। বন্ধ রয়েছে বিভিন্ন সড়ক। দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে আকাশের নিচে বসবাস করছে প্লাবিত এলাকার মানুষ। ভেসে গেছে কোটি টাকার মাছ। গবাদি পশুর মৃত্যুসহ নষ্ট হয়েছে অনেক ফসলিজমি ও বাড়িঘর। বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। তলিয়ে গেছে কৃষকের আউশ ক্ষেত। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট। লোকজন বাড়ীঘর ছেড়ে গরু-ছাগল, হাঁস, মুরগীসহ গৃহপালিত পশু, পাখি নিয়ে আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে আশ্রয় নিচ্ছেন। সীমাহীন দুর্ভোগে বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষজন। পানিতে সয়লাব বিভিন্ন এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট ।
সিলেট থেকে ফয়সাল আমীন জানান, সীমান্তবর্তী কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলা সহ সুনামগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সিলেটের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছন্ন রয়েছে কানাইঘাট উপজেলার। জৈন্তাপুরের দরবস্ত সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় কানাইঘাটের সাথে সিলেটের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসের সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার হিসেব অনুযায়ী সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জ পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ২ দশমিক ২৫ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমার কানাইঘাট পয়েন্টে পানি ২ দশমিক ৬ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে কানাইঘাটের বিভিন্ন এলাকা রাস্তা ঘাট পানির নিচে রয়েছে। কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টে ৯৪ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৪০ সেন্টিমিটার, শেরপুর পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গোয়াইনঘাট উপজেলার সারিঘাট থেকে গোয়াইনঘাট রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে । আকষ্মিক এ পাহাড়ী ঢলে মৎস্য সেক্টরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
জকিগঞ্জ(সিলেট)উপজেলা সংবাদদাতা জানান, বাংলাদেশের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর বেড়ী বাঁধ ভেঙে ও অর্ধ শতাধিক এলাকার তীর উপচে পানি লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। বন্যা কবলিত হয়েছেন উপজেলার সবকটি ইউনিয়নের কমপক্ষে ৩৫/৪০টি গ্রামের হাজার হাজার লোকজন। পানি ছড়িয়ে পড়েছে লোকালয়ে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন উপজেলার হাজার হাজার মানুষ। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের আউশ ক্ষেত। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে জকিগঞ্জ-সিলেট প্রধান সড়কের যোগাযোগ ব্যহৃত হওয়ার আশংকা রয়েছে। সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, উপজেলার প্রায় ৩ শতাধিক স্থানে বেড়ী বাঁধের উপর দিয়ে পানি লোকালয়ে আসছে। বন্যা কবলিত এলাকার লোকজনের মধ্যে জ্বর সর্দি ও কাশি রোগ দেখা দিয়েছে।
সাতক্ষীরা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলায় খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাধ ভেঙে পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে অসংখ্য মৎস্য ঘের, ধ্বসে পড়েছে বহু কাঁচা ঘর-বাড়ি। টবেড়ি বাঁধ ভেঙে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে স্কুল, মসজিদ। ভেসে গেছে এসব গ্রামের অসংখ্য মৎস্য ঘের। বিছট জামে মসজিদ বর্তমানে নদীর মধ্যে। এব্যাপারে স্থানীয় আনুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলমগীর আলম অভিযোগ করে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বারবার বলা সত্তে¡ও তারা জরাজীর্ণ বেড়িবাধ সংস্কারে কোন উদ্যোগ নেয় না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও মশিউল আবেদীন জানান, ভাঙনকবলিত এলাকা সংস্কারে রিং বাঁধ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। জোয়ারের জন্য একটু সমস্যা হচ্ছে।
মৌলভীবাজার থেকে এস এম উমেদ আলী জানান, নি¤œাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত করছে বাঁধ ভাঙ্গা নদীর পানি। বন্যার পানির তোরে কালভার্ট ভেঙ্গে চাতলাপুর চেকপোস্টের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ফলে ভারতীয় ও বাংলাদেশ অংশে দুই দেশের যাত্রীরা আটকা পড়ে চরম দুর্ভোগে শিকার হচ্ছেন।
মনু ও ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের মোট ১৮ টি স্থান ভেঙে উপজেলার বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত করেছে। দুই শতাধিক গ্রামের দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ঢলের পানির ¯্রােতের আঘাতে আমতলা বাজারের দুই দিকে দুটি কালভার্ট ভেঙে গেছে। তাছাড়া আমতলা বাজার থেকে চাতলাপুর চেকপোষ্ট পর্যন্ত ৩ কি:মি: সড়ক ৩ ফুট পানিতে নিমজ্জিত হয়। রাজনগরে মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে প্রায় ২০টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। কমলগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদীর পানি কিছুটা কমলেও নতুন ও পুরাতন ৮টি স্থানের ভেঙ্গে বাঁধ দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করছে। প্লাবিত হয়েছে প্রায় ৫০টি গ্রাম।
আসলাম পারভেজ, হাটহাজারী থেকে জানান, হাটহাজারীতে পাহাড়ী ঢল ও বৃষ্টির পানি এবং হালদার ভাঙ্গনে জোয়াড়ের পানি তীব্র ¯্রােতের কারনে নিম্ন এলাকায় প্লাবিত হয়েছে। এ ধরনের বন্যার পানি বিগত ত্রিশ বছরেও দেখা যায়নি বলেও জানান স্থানীয় এলাকাবাসী। উপজেলা জুড়ে আনুমানিত ৩ শতাধিক পুকুর ও মাছের প্রজেক্ট ডুবে যায়। তীব্র ¯্রােতের কারনে পুকুর হ বিভিন্ন বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পানি বাড়ী ঘরে ও লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। পাশা-পাশি দুই পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িসহ উত্তর চট্টগ্রামে ২২টি সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি সড়ক ও বন্ধ রয়েছে।
মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ছাগলনাইয়া থেকে জানান, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামে প্লাবিত হয়েছে ২৫টি গ্রাম। উপজেলায় আটটি এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। এতে কৃষকের ফসলি জমি, পুকুরের মাছসহ রাস্তা-ঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।অপরদিকে ভারী বর্ষণে ফুলগাজীতে মুহুরী নদীর ছয়টি বাঁধ ভেঙে অন্তত নয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন এবং বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন ফেনী জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী।
জি এম মুজিবুর রহমান, আশাশুনি (সাতক্ষীরা) থেকে জানান, আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদীর বিছট গ্রামের ৩ টি পয়েন্টে পাউবো’র জরাজীর্ন বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টার দিকে জোয়ারের প্রবল চাপে বাঁধ ভেঙে যায়। উপজেলার বিছট গ্রামের বাঁধটি দীর্ঘদিনের জরাজীর্ণ ছিল। এলাকাবাসী চরম শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছিল। বাঁধের ৩ টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেলে মুহুর্তের মধ্যে ৬ টি গ্রাম প্লাবিত হয়। অসংখ্য ঘরবাড়ি, শতশত মাছের ঘের প্লাবিত হয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানাগেছে। পানিবন্দী শতাধিক পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে ওয়াপদা বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।