Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

মুন্সীগঞ্জে প্রকাশক হত্যাকান্ড তদন্তে একাধিক সংস্থা

| প্রকাশের সময় : ১৪ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : লেখক ও প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চুকে মতাদর্শগত কারণে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছেন তার পরিবারের সদস্যরা। একই ধারণা মুন্সীগঞ্জের পুলিশ এবং ঢাকার পুলিশের জঙ্গি প্রতিরোধে গঠিত বিশেষায়িত কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের। তদন্তের সাথে সংশ্লিস্ট একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, ধর্ম নিয়ে লেখালেখির কারণে উগ্রপন্থিরা তাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে গতকাল পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
মুন্সীগঞ্জের এসপি জায়েদুল ইসলাম বলেন, আমরা জঙ্গিদের বিষয়টিসহ অন্যান্য বিষয় মাথায় রেখে অনুসন্ধান শুরু করেছি। কারা এবং কেন তাকে হত্যা করলো তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। খুব শিগগির এই হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
হত্যাকান্ডের আগে যে ফার্মেসিতে বসে ছিলেন শাহজাহান বাচ্চু, তার মালিক ডা. আনোয়ার হোসেন আনুকে ঘটনার পর পুলিশ দীর্ঘ সময় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। মধ্যরাতে তাকে ছেড়ে দেয়া হলেও গত মঙ্গলবার সকালে তাকে আবারও থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী আসমা আক্তার জানান, রাতে তার স্বামী তাকে বলেছেন, ঘটনার দিন বিকালে তাকে ফোন দিয়েছিলেন শাহজাহান। পরে তিনি ফার্মেসিতে এলে তারা বসে গল্প করছিলেন। একপর্যায়ে শাহজাহান বাচ্চু পাশের দোকানের দিকে যেতেই গুলি করা হয়। যে দুজন গুলি করেছে ও বোমা ফাটিয়েছে তাদের মাথায় হেলমেট ছিল। পরে তারা দ্রæত মোটরসাইকেলে পালিয়ে যায়। ওই বাজারের আরেক মুদি দোকানি মজিবর রহমান বলেন, ইফতারের আগে বাজারে অন্তত ৫০-৬০ জন লোক ছিল। রাস্তার পাশেই লোকজন ক্যারাম বোর্ড খেলছিল। সন্ত্রাসীরা গুলি করার পর সবাই দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। এরপর সন্ত্রাসীরা বোমা ফাটিয়ে চলে যায়। ২-৩ মিনিটের মধ্যে সবকিছু শেষ হয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা চলে গেলে দোকানদাররা সব দোকান বন্ধ করে ফেলেন।
শাহজাহান বাচ্চুর দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরের দুই ছেলেমেয়ে আঁচল জাহান ও বিশাল জাহানেরও ধারণা, ফেসবুকে ধর্ম নিয়ে লেখার কারণে তাদের বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। বাড়িতে তাদের কাছে এসব বিষয় বলতেন। বাড়ির সঙ্গেই আলাদা একটি টিনশেড ঘরে ঘুমাতেন তাদের বাবা। হুমকির কারণে দিন ১৫ আগে মূল বাড়িতে থাকা শুরু করেছিলেন তিনি। নিহত শাহজাহান বাচ্চুর প্রথম স্ত্রী লুৎফা জাহান থাকেন তার ঢাকার ডেমরার বাসায়। বিপাশা ও দূর্বা নামে সেই ঘরে দুই কন্যা রয়েছে তার। দূর্বা বলেন, তার বাবার সঙ্গে সম্পত্তি বা অন্য কিছু নিয়ে কারও কোনও শত্রুতা ছিল না। তারও ধারণা, লেখালেখির কারণেই তার বাবাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
খুনিরা আগেই রেকি করেছিল
শাহজাহান হত্যাকান্ডের রহস্য অনুসন্ধানকারী পুলিশ ও বন্ধু-স্বজনরা বলছেন, খুনিরা তাকে হয়তো আগে থেকেই অনুসরণ করছিল। মনির হোসেন নামে শাহজাহান বাচ্চুর এক প্রতিবেশী জানান, সোমবার বিকাল ৩টার দিকে তিনি কাকালদি কমিউনিটি ক্লিনিকের সামনের সেতুতে একটি মোটরসাইকেল ও তিনজন ব্যক্তিকে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। তারা এমন জায়গায় বসেছিলেন যেখান থেকে শাহজাহান বাচ্চুর বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তা দেখা যায়। মনির হোসেনের ধারণা, লাল মোটরসাইকেল নিয়ে যারা বসেছিল, তারা খুনিচক্রের সদস্য হতে পারে। কয়েক মাস ধরেই মাঝে মধ্যে ওই সেতুতে মোটরসাইকেলে করে শার্ট-প্যান্ট পরা অচেনা লোকজনকে বসে থাকতে দেখেছেন তিনি। আগে তারা ধারণা করেছিলেন, তারা গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন হতে পারে। এখন মনে হচ্ছে উগ্রপন্থি দলের সদস্য। তারাই হয়তো শাহজাহানের বাসা থেকে বের হয়ে ফার্মেসিতে যাওয়ার কথা জানিয়েছে। গত ১১জুন সোমবার সন্ধ্যায় সিরাজদিখানের পূর্ব কাকালদি গ্রামের ছোট্ট একটি বাজারের একটি ফার্মেসিতে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন শাহজাহান। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ফার্মেসি থেকে বেরিয়ে পাশের একটি মুদি দোকানে যাওয়ার সময় সড়কের ওপরেই তাকে কাছ থেকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। দুটি মোটরসাইকেলে আসা চার দুর্বৃত্ত হত্যার পর বোমা ফাটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারাসহ ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি আব্দল্লাহ আল মামুন এবং সিটিটিসির একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ