পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা ইশতিয়াক শাহীন। গতকাল বুধবার ছুটির দিন ব্যাংক বন্ধ থাকায় জরুরি প্রয়োজনে টাকা তুলতে এসছিলেন এটিএম বুথে। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সাউথইষ্ট ব্যাংকের এই গ্রাহক বুথে প্রবেশ করেই হতাশ। নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনার কারণে টাকা তুলতে পারেননি। বের হয়ে পাশেই অবস্থিত ইসলামী ব্যাংকের বুথে টাকা তুলার জন্য এগিয়ে গেলে সেখানে শার্টার বন্ধ পান। নিরাপত্তারক্ষীরা জানান, এই বুথে টাকা নেই। এ সময় ইশতিয়াক শাহীন এর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান, দুপুর ২ টায় তার গাড়ী। পরিবার নিয়ে ঈদে বাড়ী যাবেন। কিন্তু কোন বুথে টাকা পাচ্ছি না। শুধু এবার নয় এ ধরনের ভোগান্তিতে গত ঈদেও পড়েছিলেন। তিনি জানান, এটিএম বুথে টাকার তুলার অভিজ্ঞতার তার একার নয়; তার পরিচিত অনেকেই এ ধরনের ভোগান্তিতে পড়েছেন। নেটওয়ার্ক সমস্যা, টাকা না থাকা, কার্ড আটকে যাওয়া, টাকা বের না হওয়া, বুথ মেশিনে তেল না থাকা, বুথ থেকে জাল-ছেঁড়া নোট সরবরাহসহ বিভিন্ন হয়রানির শিকার হওয়া অভিজ্ঞ গ্রাহকের সংখ্যা কম নয়। তারা শঙ্কায় আছেন এই ভেবে যে, আসন্ন ঈদের ছুটিতে বুথের নিরাপত্তা ও পরিবেশ স্বাভাবিক থাকবে কি না। এদিকে ঈদ কেন্দ্রীক এটিএম বুথ নিয়ে বিড়ম্বনার শঙ্কা থাকলেও মোবাইল ব্যাংকিয়ে নেই বলে জানিয়েছে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। সাউথইষ্ট ব্যাংকের ফাস্ট এসিসট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক ইনকিলাবকে বলেন, ঈদের সময়ে টাকা উত্তোলনের চাপ একটু বেশি থাকে। যেহেতু অভিযোগ পেয়েছি। কাল বৃহষ্পতিবার অফিস খোলা তাই এটিএম বুথ সংক্রান্ত সকল সমস্যার সমাধান করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
গ্রাহকদের সহজে সার্বক্ষনিক সেবা দিতে ব্যাংকের অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম) সেবা চালু করেছে ব্যাংকগুলো। ছুটির দিনগুলোতে ব্যাংক বন্ধ থাকায় টাকা উত্তোলনের একমাত্র ভরসা এই এটিএম বুথ। কিন্তু বুথে টাকা তুলতে গেলে ভোগান্তির যেন অন্ত নেই। বেশির ভাগ এটিএম বুথে গিয়ে গ্রাহকরা এসব অভিযোগ করলেও কোনো তোয়াক্কা করছে না সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছেও আসছে এ নিয়ে অহরহ অভিযোগ। গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দ্রæত ও উন্নত সেবা পেতে এবং বাড়তি ঝামেলা এড়াতে যারা এটিএম কার্ড ব্যবহার করছেন তারাই পড়ছেন বিড়ম্বনায়।
এদিকে গ্রাহক হয়রানির বিষয়টি জানার পর ব্যাংকগুলোকে পর্যাপ্ত টাকা রাখার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটির সময়ে ব্যাংকের এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা রাখার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি এটিএম বুথ, পয়েন্ট অব সেল (পিওএস), ই-পেমেন্ট গেটওয়ে, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস)-এর মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন লেনদেনের ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অপরদিকে এটিএম বুথের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর গ্রাহকদের প্রতারণা ঠেকাতে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক বলে জানা গেছে। পরিদর্শনে বুথগুলোতে জাল ও ছেঁড়া নোট রাখা, সেবা প্রদানের রেকর্ডিং হচ্ছে কি না, মেশিনগুলো ঠিকমতো কাজ করছে কি না ইত্যাদি বিষয় খতিয়ে দেখা হবে। গ্রাহক হয়রানি ও প্রতারণা বন্ধে গঠিত ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি ও কাস্টমার সার্ভিসেস বিভাগের একটি টিম এ পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
তফসিলি ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো সার্কুলারে অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম) বুথের ক্ষেত্রে বলা হয়েছেÑসার্বক্ষণিক এটিএম সেবা নিশ্চিত করতে হবে; এটিএম বুথে কোনো ধরনের কারিগরি ত্রæটি দেখা দিলে দ্রæততম সময়ে সমাধান করতে হবে; পর্যাপ্ত টাকা সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে; বুথে সার্বক্ষণিক পাহারাদাদের সতর্ক অবস্থানসহ অন্যান্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পয়েন্ট অব সেল (পিওএস)-এর ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক পিওএস সেবা নিশ্চিত করা এবং জাল-জালিয়াতি রোধে মার্চেন্ট এবং গ্রাহককে সচেতন করতে হবে। ই-পেমেন্ট গেটওয়ের ক্ষেত্রে কার্ডভিত্তিক ‘কার্ড নট প্রেজেন্ট’ লেনদেনের ক্ষেত্রে টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (টু এফএ) ব্যবস্থা চালু রখতে হবে।
মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রদানকারী সকল ব্যাংক এবং তাদের সাবসিডিয়ারী কোম্পানিকে নিরবচ্ছিন্ন লেনদেন নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে যেকোনো অংকের লেনদেনের তথ্য এসএমএস এলার্ট সার্ভিসের মাধ্যমে গ্রাহককে অবহিত করতে হবে; ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে সব ধরনের পরিশোধ সেবার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের সতকর্তা অবলম্বনে প্রচার-প্রচারণা চালানো; গ্রাহককে প্রতারিত করা যাবে না এবং সার্বক্ষণিক হেল্প লাইন সহায়তা প্রদান করতে হবে এবং ইতিপূর্বে জারিকৃত এ সংক্রান্ত পরিপত্রের নির্দেশনা যথাযথভাবে পরিপালন করতে হবে।
মোবইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী বিক্যাশের কর্পোরেট এ্যান্ড কমিউনিকেশন হেড সামসুদ্দিন হায়দার ডালিম ইনকিলাবকে বলেন, মোবাইল নেটওয়ার্কের সাথে এই সেবা জড়িত। তাই মোবাইল নেটওয়ার্ক থাকলেও বিক্যাশের সেবা পাবে। এছাড়া নতুন করে আরেকটি সেবা বিক্যাশ অ্যাপ চালু করা হয়েছে। এই সেবা পেতে ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে। তবে ঈদ কেন্দ্রীক মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় কোন ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না বলে জানান সামসুদ্দিন হায়দার ডালিম।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকের সাড়ে ৯ হাজার টি এটিএম বুথ রয়েছে। এসব বুথ থেকে টাকা উত্তোলনে বিভিন্ন ব্যাংক ইস্যু করেছে ১ কোটি ২৮ লাখ ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড। এর মধ্যে ১ কোটি ১৮ লাখ ডেবিট কার্ড এবং ৯ লাখ ৪৩ হাজার ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী। সবচেয়ে বেশি বুথ রয়েছে ডাচ্্-বাংলা ব্যাংকের সাড়ে ৪ হাজার টি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এটিএম ইসলামী ব্যাংকের, তৃতীয় অবস্থানে ব্র্যাক ব্যাংক। এ ছাড়া এবি ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, সাউথইস্ট ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, এইচএসবিসি ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, হাবিব ব্যাংক, ব্যাংক আল-ফালাহ এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের বুথ রয়েছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকেরও কিছু এটিএম বুথ সেবা রয়েছে। বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে বেসিক ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকও এটিএম বুথ সেবা রয়েছে। এ ব্যাপারে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, আমরা সব সময় সজাগ রয়েছি। গ্রাহকরা যেন অসুবিধায় না পড়ে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।