পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বন্দর নগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। গতকাল (মঙ্গলবার) তৃতীয় দিনের মতো ভারী বৃষ্টিপাত, পাহাড়ি ঢল ও সামুদ্রিক জোয়ারে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। টানা বর্ষণ, ঢল ও জোয়ারের কারণে সৃষ্ট পানিবদ্ধতায় ফল-ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঢলের তোড়ে ভেসে গেছে শত শত পুকুর দীঘি জলাশয়ে চাষের মাছ। চট্টগ্রাম অঞ্চলের অনেক জায়গায় এখনও পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে পাহাড়-টিলার ধারে বসবাসরত অসংখ্য মানুষ। প্রশাসন ইতোমধ্যে অনেককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে। এ অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার আঞ্চলিক মহাসড়ক, রাস্তা-ঘাটে পাহাড়ধসের মাটিতে ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে মাহে রমজানে মানুষের নানামুখী কষ্ট-দুর্ভোগও বেড়ে গেছে। অনেক বসতঘর কাদা-পানি-বালিতে সয়লাব। মানুষ চুলা জ্বালাতে পারছে না। শুকনো খাবার কিনে ইফতার ও সাহরি সেরে নিতে হচ্ছে অনেক রোজাদারকে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, গতকাল বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড পার্বত্য রাঙ্গামাটিতে ২৬৪ মিলিমিটার। উত্তর বঙ্গোপসাগরে বর্ষার মৌসুমী বায়ু জোরালো থাকায় আরও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ঝড়ো হাওয়ার কারণে সাগর উপকূল উত্তাল রয়েছে। সমুদ্র বন্দরে ৩নং সতর্ক সঙ্কেত বহাল রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে আমদানি মালামাল লাইটারিং খালাস ব্যবস্থা অচল। বন্দরের পণ্য পরিবহনও কমে গেছে। সাগরে মাছ শিকার বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলজুড়ে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া জেঁকে বসার ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বৃহত্তর জেলার মিরসরাই, ফটিকছড়ি, চন্দনাইশ, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারীসহ বিভিন্ন স্থানে টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বিস্তীর্ণ এলাকায় লাখো মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। তাদের দুর্ভোগ সীমাহীন। ফটিকছড়ির কাঞ্চনপুরে ঢলের তোড়ে বাড়িঘর ভেসে গিয়ে লোকজন গাছের ওপর আশ্রয় নেয়। তাদের উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।
এদিকে তিন দিনের টানা প্রবল বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারে চট্টগ্রাম মহানগরীর ব্যাপক এলাকা গতকালও হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে তলিয়ে যায়। সকালে নগরীর বাকলিয়া সরকারি স্কুল মাঠে জাল ফেলে স্থানীয় লোকজনকে মাছ ধরতে দেখা গেছে। এলাকাবাসী জানান, চকবাজার ও বাকলিয়ার বেশক’টি পুকুর-জলাশয় প্লাবিত হয়ে চাষের মাছ ভেসে গেছে। সেই মাছ ছড়িয়ে পড়েছে ডুবে থাকা মাঠ-ঘাট, সড়কে। তাই লোকজন জাল, টেঁটা দিয়ে ও বিভিন্ন উপায়ে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। বর্ষণের সঙ্গে গতকালও জোয়ারের তোড়ে আগ্রবাদ সিডিএ, এক্সেস রোড, হালিশহর এলাকা কোমর সমান পানিতে নিমজ্জিত হয়। আগ্রবাদ সিডিএ ও এক্সেস রোডের ওপর দিয়ে নৌকাযোগে কর্মমুখী লোকজনকে চলাফেরা করতে দেখা গেছে। গতবছর বর্ষায় ও তার আগে ডুবে থাকা সড়কে নৌকাযোগে এলাকাবাসীকে চলাচল করতে হয়।
সর্বশেষ আবহাওয়া পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা গেছে, বর্ষার মৌসুমী বায়ু উত্তর বঙ্গোপসাগরে জোরালো অবস্থায় রয়েছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমূদ্র বন্দরকে ৩নং স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সাথে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
ভারী বর্ষণের সতর্কতায় আবহাওয়াবিদ এ কে এম রুহুল কুদ্দুছ জানান, প্রবল মৌসুমী বায়ুর কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এর প্রভাবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী থেকে অতিভারী (৮৯ মিলিমিটারেরও বেশি) বর্ষণ হতে পারে। অধিক ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভ‚মিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
চন্দনাইশ সংবাদাতা জানান, টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার সবকটি ইউনিয়নে বিভিন্ন ফসল, ক্ষেত-খামার পানিতে তলিয়ে গিয়েছে। চাষীরা ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান। হরেক রকমের শাক-সবজি, কাঁচা মরিচ, চীনা বাদাম, ডাল পানিতে ডুবে গেছে। চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি অফিসার কামরুম মোয়াজ্জেমা জানান, গতকাল (মঙ্গলবার) পর্যন্ত ২৪ হেক্টর জমিতে আউশ ধান ও ৬১৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন স্থানে মাছ চাষীদের মাছের খামার পানিতে তলিয়ে গেছে।
মীরসরাই সংবাদদাতা জানান, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার অনেকস্থানে বসতঘর, হাট-বাজার পানিতে তলিয়ে গেছে। পাহাড়ি এলাকায় এখনও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছে অনেকে। পাহাড়ি ঢলে মাছের প্রকল্পগুলোতে ঝুকিতে রয়েছে। মৌসুমী শাক-সবজি ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। এতে চাষিদের মাথায় হাত। মায়ানী, মঘাদিয়া, দুর্গাপর, কাটাছরা, ওচমানপুর, সাহেরখালী এলাকায় বাড়িঘর রাস্তাঘাটে পানি উঠেছে। ওয়াহেদপুর, খৈয়াছরা, করেরহাট, তালবাড়িয়া এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে মানুষ বসবাস করছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, তাদেরকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।