Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কালোবাজারে ট্রেনের টিকিট

বাস ও লঞ্চের টিকিট চড়া দামে বিক্রি

| প্রকাশের সময় : ১২ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : সময় তখন রাত ৯টা। কমলাপুর স্টেশনের ১৮ নং কাউন্টার। এ কাউন্টার থেকে দেয়া হয় সংরক্ষিত টিকিট। নির্ধারিত টোকেন নিয়ে বেশ কয়েকজন হাজির। কিন্তু কাউন্টারের ওপাড়ের বুকিং সহকারি সোলায়মান রিপন ব্যস্ত ভিতরে থাকা ব্যক্তিদের নিয়ে। একজন কালোবাজারি লাইন ঠেলে কাউন্টারের সামনে গিয়ে রিপনকে উদ্দেশ্য করে বললো, আমাকে আরও কয়েকটা দাও। বুকিং সহকারি সোলায়মান রিপন প্যান্টের পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে অনেকগুলো টিকিট থেকে কয়েকটা ওই কালোবাজারির হাতে তুলে দিলেন। গুণে নিলেন কয়েক হাজার টাকা। অথচ ওই সময় রেলের বাণিজ্যিক বিভাগের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ওই কাউন্টারের ভিতরেই অবস্থান করছিলেন। গত শুক্রবার রাতে কমলাপুর স্টেশনের ১৮ নং কাউন্টারে যারা গিয়েছিলেন তাদের অনেকেই কাঙ্খিত টিকিট পাননি। ব্যস্ততার অজুহাতে বুকিং সহকারি রিপন কাউন্টারে দাঁড়ানো অনেকেইর কথাও শুনতে চাননি। অথচ কালোবাজারি দালালদের কথায় চাহিদামতো টিকিট দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। ভুক্তভোগি একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেছেন, টিকিট কালোবাজারির সাথে শুধু বুকিং সহকারি রিপন নয়, উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও জড়িত। তারাও এই টাকার ভাগ পায়। ঈদের অগ্রিম ট্রেনের টিকিট বিক্রির সময় দেখা গেছে, হাজার হাজার মানুষ টিকিট আগের দিন থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও প্রত্যাশিত টিকিট পাননি। অথচ এখন চড়াদামে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে কালোবাজারিদের কাছে। বিপুল নামে এক কালোবাজারি জানায়, টিকিট যেদিন ছাড়া হয়েছে সেদিনই রেলের লোকজন টিকিট কেটে রেখেছে। সেখান থেকে টিকিটপ্রতি দেড়শ থেকে দুশ’ টাকা বেশি দিয়ে এখন কালোবাজারিরা সেগুলো বিক্রি করছে। জামান নামে একজন চাকরিজীবী জানান, কালোবাজারিদের কাছে থেকে তিনি ১৪ জুনের সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের দুটো এসি চেয়ারের টিকিট কিনেছেন ৫ হাজার টাকায়। একই অবস্থা বাস ও লঞ্চে।
ঈদ এলেই সক্রিয় হয় কালোবাজারিরা। বাস, ট্রেন ও লঞ্চের টিকিট চলে যায় কালোবাজারিদের হাতে। গত বছরের মতো এবারও সড়ক-মহাসড়কের বেহাল অবস্থার কারনে ট্রেনের দিকে ঝুঁকেছে যাত্রীরা। ঈদ উপলক্ষে গত ১ জুন থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। প্রথম দিনে হাজার হাজার যাত্রী টিকিটের জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। এরপর দিন যতো যায় টিকিটের জন্য ভিড় ততো বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে ১৪ জুনের টিকিটের জন্য মানুষের লাইন স্টেশন এলাকা পেরিয়ে রাস্তা ছাড়িয়ে যায়। অনেকেরই অভিযোগ, লাইনে দাঁড়িয়েও তারা টিকিট পাননি। বিশেষ করে লাইনের একেবারে সামনে থেকেই কেউ কেউ এসি কেবিনের টিকিট পাননি বলে অভিযোগ করেন। রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি ছিল ভিড় বেশি তাই অনেকেই প্রত্যাশিত টিকিট পাননি। কিন্তু এখন কালোবাজারে ঠিকই সেই টিকিট মিলছে। কিভাবে সম্ভব হচ্ছে তা? জানতে চাইলে রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, এটা সংশ্লিষ্টরাই বলতে পারবে। ওই কর্মকর্তা বলেন, কোটা ও রেল কর্মচারিদের সংরক্ষিত টিকিটের আড়ালে কিছু টিকিট এদিক-ওদিক করতে পারে। তাই বলে বেশিরভাগ টিকিট বাইরে পাওয়া যাচ্ছে সেটা ঠিক নয়। তবে তিনি স্বীকার করেন ভিআইপিদের চাপে সাধারণ যাত্রীদের বাদ দিয়ে তাদেরকে টিকিট দিতে বাধ্য হচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, অগ্রিম টিকিট বিক্রির দিন থেকেই বাসের টিকেটও কালোবাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে গাবতলী টার্মিনালকেন্দ্রীক উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলগামী দূরপাল্লার বাসগুলোর টিকিট চড়া দামে কালোবাজারে বিক্রি হতে দেখা গেছে। ভুক্তভোগিদের মতে, টিকিট না পাওয়ার চেয়ে নির্ধারিত তারিখে চড়া দামে পাওয়াও ভালো। প্রতি বছরই বিআরটিএ কালোবাজারিরোধে নানা তৎপরতার কথা বললেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। লঞ্চের ক্ষেত্রেও তাই। দক্ষিণাঞ্চলের বিলাসবহুল লঞ্চগুলোর ভিআইপি কেবিনের টিকিট এবারও কালোবাজারে চড়া দামে বিক্রি হয়েছে বলে একাধিক ভুক্তভোগি জানান। গত রোরবার দুদকের একটি দল সদরঘাটে গিয়ে হাতেগোনা ৬টি লঞ্চের কাউন্টার খোলা দেখতে পেয়েছেন। বাকী কাউন্টারগুলো কেনো খোলা হয়নি তা জানতে চাইলে ভুক্তভোগিরা বলেছেন, সব লঞ্চের টিকিট ফোনে ফোনে বুকিং দেয়া হয়। আর ফোনে বুকিং মানেই হলো বেশি দামে বিক্রি করা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কালোবাজার

৮ আগস্ট, ২০২০
৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ