বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব
রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতেই তার প্রতি কারা কর্তৃপক্ষের অবহেলার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। রোববার সকালে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
গতকাল শনিবার বিকেলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চার চিকিৎসক কারাগারে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের জানান, দাঁড়ানো অবস্থা থেকে গত ৫ জুন
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মেঝেতে পড়ে গিয়েছিলেন। তখন কী হয়েছিল, তা তিনি বুঝতে পারেননি। সে সময়ে প্রায় ৫-৭ মিনিট অজ্ঞান ছিলেন
বিএনপি নেত্রী। আমাদের ধারণা, তার মাইল্ড স্ট্রোক হয়েছিল।
চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির কথাও বলেন।
পরে সন্ধ্যায় কারা অধিদফতর আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার পড়ে যাওয়ার বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ অবগত নয়। তার ‘মাইল্ড স্ট্রোকের’ বিষয়টিও তারা জানেন না।’
এ প্রসঙ্গ টেনে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ‘কারাগারে ‘মাইল্ড স্ট্রোকের’ পর
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ৫-৭ মিনিট অজ্ঞান ছিলেন। গতকাল শনিবার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা তার সঙ্গে সাক্ষাতের পর বিষয়টি জেনেছেন। অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন- কারাগারে বেগম খালেদা জিয়া যে পড়ে গিয়েছিলেন, সে সম্পর্কে কারা কর্তৃপক্ষ অবগত নয়।’
তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও অসুস্থতা নিয়ে কতটা অবহেলা করা হচ্ছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে সেটা পরিষ্কার হয়ে গেল। কারা কর্তৃপক্ষ সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছে বলেই বন্দি খালেদা জিয়ার গুরুতর শারীরিক অসুস্থার বিষয়ে ভ্রুক্ষেপহীন থেকেছে।’
রিজভী বলেন, ‘কারাগারে অজ্ঞান হয়ে ৫-৭ মিনিট পড়েছিলেন, অথচ সেটি কারা কর্তৃপক্ষ জানে না। তার মানে এটাই প্রমাণিত হয়, বেগম জিয়া কারা কর্তৃপক্ষের কতখানি অবহেলার শিকার! সরকার
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রতি কতটা অমানবিক তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে ফুটে উঠেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার দেশনেত্রীর অসুস্থতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরাও কোন কোন বিষয়ে জরুরি চিকিৎসা দরকার, সে বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু, সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষ সব সময় এসব দাবি এড়িয়ে চলছে। এ বিষয়ে এখনো তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।’
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা জেনে দেশবাসী গভীরভাবে উদ্বিগ্ন উল্লেখ করে
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ব্যবস্থা না নিয়ে সরকার খালেদা জিয়ার অসুস্থতাকে আরও গুরুতর করে তাকে রাজনৈতিক ময়দান থেকে সরিয়ে দেয়ার চক্রান্ত করছে কিনা তা নিয়ে মানুষের মনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য দেশনেত্রীর চিকিৎসা নিয়ে টালবাহানারই নামান্তর।’
তিনি বলেন, ‘
বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি জানাচ্ছি— দ্রুত ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করে খালেদা জিয়া চিকিৎসার সুযোগ দিন। একইসঙ্গে ঈদের আগেই তাকে মুক্তি দিন।’
খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া না হলে আন্দোলনের হুমিক দিয়ে রিজভী বলেন, ‘সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে জনগণকে আর কাবু করা যাবে না। দিল্লির আয়নায় বিশ্বকে দেখতে গিয়ে দেশের জাতীয় স্বার্থ প্রতিবেশীর পদতলে ঠেলে দিয়ে সরকার নিজেকে নির্ভার মনে করলেও কোনো লাভ হবে না। নিজ দেশবাসীর অধিকারকে বিপন্ন করে জনগণের স্বার্থ যারা বিকিয়ে দেয় তাদের পরিণতি হবে ভয়াবহ।’
উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি পুরোনো ঢাকার বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামান খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। এরপর থেকে তাকে নাজিম উদ্দিন রোডের কারাগারে একমাত্র বন্দি হিসেবে রাখা হয়েছে।
ইতোমধ্যে আপিলের পর সর্বোচ্চ আদালত খালেদা জিয়াকে এই মামলায় জামিন দিয়েছেন। তবে আরও বেশ কয়েকটি মামলা চলমান থাকায় এখনই তিনি জামিন পাচ্ছেন না।