Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্বব্যাপী বাড়ছে ওষুধ প্রতিরোধক রোগ অতিরিক্ত ব্যবহার রোধই একমাত্র উপায়

ফরেন পলিসি | প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সারাবিশ্বে ওষুধ প্রতিরোধক রোগের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার ও ওষুধ প্রতিরোধের মধ্যে উচ্চ সম্পর্ক রয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার বন্ধের বিশ্বব্যপী প্রচেষ্টাই শুধু এ হুমকি রোধ করতে পারে।
২০১৬ সালে আমার ৭০ বছর বয়স্কা দাদির হিপ রিপ্লেসমেন্ট অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হল। ধারণা করা হয়েছিল যে এ জন্য তাকে দু’দিন হাসপাতালে থাকতে হবে। কিন্তু অপ্রত্যাশিত ভাবে তা পরিণত হল ১২ মাসের দুঃস্বপ্নে। চিকিৎসকরা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে এটা হবে একটি ব্যথামুক্ত অস্ত্রোপচার , তিনি দ্রুত আরোগ্য লাভ করবেন, আর দু’সপ্তাহের মধ্যেই নিজের পায়ের উপর দাঁড়াতে পারবেন।
কিন্তু তা যখন হল না তখন মাসের পর মাস হাসপাতালে থেকে দাদির মনোবল ধীরে ধীরে হ্রাস পেল। প্রাথমিক অস্ত্রোপচারের পর তার হিপে সৃষ্ট ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে তিনি বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিকের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলেন। তিনি যে সব অ্যান্টিবায়োটিক নিচ্ছিলেন সেগুলোর কাজ করা শেষ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেল। ছড়িয়ে পড়ল ইনফেকশন ।
প্রায় চার মাসে আরো তিন দফা অস্ত্রোপচারের পর ডাক্তাররা তাকে অন্যতম ‘শেষ ভরসা’ অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে পরিচিত শক্তিশালী সিদ্ধান্ত অ্যান্টিবায়োটিক কলস্টিন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তারা আমাদের হুঁশিয়ার করে দিলেন যে এ ওষুধটি টক্সিক বা বিষাক্ত। এ ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় দাদির কিডনি বিকল হতে শুরু করে। হাসপাতালে দাদির কক্ষের বাইরে হলওয়েতে ডাক্তাররা আমাদের সতর্ক করে দিলেন যে এ ওষুধটিই আমাদের একমাত্র ভরসা।
বহু লোকই সামান্য গলা ব্যথা বা জমাট সাইনাসিসের মত অসুস্থতার জন্য পেনিসিলিনের মত অ্যান্টিবায়োটিক নিয়েছে। কিন্তু আমরা খুব কম লোকই উপলব্ধি করি যে এর ফলে বিশ্ব কত কম নিরাপদ হয়ে পড়ছে।
ব্যাকটেরিয়া প্রধানত প্রাকৃতিক বিবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের ক্ষেত্রে প্রতিরোধ তৈরি করে যা কিনা ডারউইনের ‘যোগ্যতমরাই বেঁচে থাকবে’র ধারণাকে প্রদর্শন করে। ডাক্তাররা যখন নোংরা ব্যাকটেরিয়ার সাথে লড়াইয়ের জন্য ওষুধ প্রয়োগ করেন , কিছু ব্যাকটেরিয়া অনিবার্যভাবে তাদের বিরুদ্ধে ডাক্তারদের সর্বোত্তম লড়াইয়ের চেষ্টা সত্তে¡ও বাঁচার পথ খুঁজে নেয়। বেঁচে যাওয়া কোনো ব্যাকটেরিয়া দ্রুতই বহু হয়ে ওঠে এবং সময়ের ব্যবধানে শক্তিশালী, বিস্তৃত হয় ও অন্যদের সংক্রমণ করে। ডাক্তাররা যখন আরো শক্তিশালী ওষুধের ব্যবস্থাপত্র দেন (বা রোগী নিজেই নিজের চিকিৎসা করে) অধিক থেকে অধিক সংখ্যায় ব্যাকটেরিয়া জন্ম নিতে থাকে এবং অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল প্রতিরোধ ছড়িয়ে পড়া অব্যাহত থাকে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুপারবাগ থেকে ক্রমবর্ধমান হুমকি আলোড়ন সৃষ্টি করতে শুরু করেছে। জাতিসংঘ গত বছর অ্যন্টিমাইক্রোবায়াল প্রতিরোধকে অ-উপেক্ষণীয় সংকট বলে অভিহিত করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্যাথোজেনগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি করেছে। ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ও’ নেইলের রিপোর্টে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে যে অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল প্রতিরোধের কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ প্রতি বছর ১ কোটি লোকের মৃত্যু হতে পারে যদি প্রতিদিনের সংক্রমণ ও অসুস্থতা ধীরে ধরে অচিকিৎসিত থাকে এবং যদি না ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিগুলো দ্রুত পর্যাপ্ত নতুন অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করে।
অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল প্রতিরোধ ইতিমধ্যেই প্রতিদিনের কাটাকুটি ও ইনফেকশনের চিকিৎসার প্রতি হুমকি সৃষ্টি শুরু করেছে। ডাক্তারগণ ব্যাকটেরিয়ার বিরদ্ধে লড়াই করার জন্য যে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহার করেন ব্যাকটেরিয়া যদি অধিক মাত্রায় সেগুলোর প্রতিরোধী হয়ে ওঠে তবে আধুনিক চিকিৎসার রুটিন বিষয়গুলো, যেমন হিপ সার্জারি, শিগগিরই অসম্ভব হয়ে পড়বে। একটি শিশুর স্ট্রেপ গলা চিকিৎসা কঠিন হবে এবং কয়েক বছরের মধ্যেই কার্ডিয়াক সার্জারি বা সিজারিয়ান সেকশন অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে যা চিকিৎসা পেশাকে আদিম যুগে নিয়ে যাবে।
অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল প্রতিরোধ সম্প্রতি এত গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছেছে যা অর্থনীতির ভাষায় বললে ভালো বোঝা যাবেঃ অ্যান্টিবায়োটিকের চাহিদা সরবরাহকে ছাড়িয়ে গেছে। চাহিদার দিক দিয়ে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ব্যাখ্যামূলক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আয় বৃদ্ধি ও উন্নত স্বাস্থ্য সেবা সুবিধা শুধু পশ্চিমা দুনিয়াতেই নয়, উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যাপক ব্যবহারে সক্ষম করেছে। দুর্ভাগ্যবশত অ্যান্টিবায়োটিকের কিছু আধুনিক ব্যবহার অপ্রয়োজনীয় (যেমন ভাইরাল ইনফেকশনের ক্ষেত্রে) এবং অত্যধিক (গবাদিপশুর ক্ষেত্রে)। সিডিসি ২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি তিনটি প্রেসক্রিপশনের একটি অপ্রয়োজনীয়। অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের আবির্ভাব নিজে থেকে চাহিদা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভ‚মিকা রাখছে, কারণ ডাক্তাররা প্রতিরোধক ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত, অসুস্থ রোগীদের তাদের প্রেসক্রিপশনে আরো নিবিড়মাত্রায় অ্যান্টবায়োটিক দিতে বাধ্য হন। এর ফল হচ্ছে যে একটি ওষুধে যেখানে ৫দিনের মধ্যে চিকিৎসা হতে পারত তা চিকিৎসার জন্য এখন দু’তিন রকমের অ্যান্টিবায়োটিকসহ কয়েক সপ্তাহ লেগে যায়।
সরবরাহের ক্ষেত্রে দু’টি প্রধান সমস্যা আছে। প্রথমত, যখন বিদ্যমান অ্যান্টিবায়োটিকে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ তৈরি করে তখন প্রচলিত হাসপাতালের ওষুধ ভান্ডারে কার্যকর ওষুধ কমে আসে। নিউমোনিয়া, যক্ষা ও ডিসেন্ট্রির মত রোগে সহজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত পেনিসিলিনের মত সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক আর এখন ফলপ্রসূ নয়। দ্বিতীয়ত, নতুন অ্যান্টিবায়োটিকের উন্নয়ন নাটকীয় ভাবে ধীর হয়ে আসছে। ওষুধ কোম্পানিগুলো ক্যান্সার ও অন্যান্য ক্রনিক রোগের বিরুদ্ধে ড়াই করতে, যা প্রধানত ধনী দেশগুলোর রোগীদের আক্রান্ত করে, তাদের অধিকাংশ সম্পদ নিয়োজিত করছে । বীমা কোম্পানিগুলো রোগীদের টাকা পরিশোধ করে যা কিনা অনেক বেশি লোভনীয়। সর্বশেষ নতুন শ্রেণির অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি হয়েছিল ১৯৮০-র দশকে।
সৌভাগ্যবশত, করিতকর্মা নীতিনির্ধারক ও চিকিৎসক সম্প্রদায় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে শুরু করেছেন। উদাহরণ স্বরূপ, অ্যান্টিবায়োটিকের অপচয়মূলক ব্যবহার কমাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পশুখাদ্যে শরীর বর্ধক েিসবে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন ২০১৭ সালে তা বলবৎ করে। বহু দেশই ভাইরাল ইনফেকশনের জন্য প্রয়োজন না হলেও অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার কমাতে অধিকতর কঠোর ব্যবস্থা বলবত করে। তা সত্তে¡ও প্রেসক্রিপশন ছাড়াই বিশ্বে ৫০ শতাংশেরও বেশি অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার হয়ে থাকে। সরবরাহের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ ও চীনা সরকার নতুন অ্যান্টিবায়োটিক তৈরিতে ওষুধ কোম্পানিগুলোকে প্রণোদনা যোগাতে একটি গবেষণা তহবিল প্রতিষ্ঠা করেছে।
দি অ্যাকসেস টু মেডিক্যাল ফাউন্ডেশন কোন কোন ওষুধ কোম্পানি শুধ নতুন ওষুধই তৈরি করছে না, বিদ্যমান ওষুধগুলোর অপব্যবহারও বন্ধ করছে তা মূল্যায়নে একটি নতুন সূচক প্রতিষ্ঠা করেছে। কোম্পানিগুলো তাদের বিতরণ ও বিক্রয় নেটওয়ার্কে কড়াকড়ি করতে পারে যাতে শুধুমাত্র সঠিক ব্যবহারের জন্যই অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করা হয়, গবাদিপশু চাষী বা প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোনো ব্যক্তির কাছে নয়। তারা যে সব চিকিৎসক পেশাদারদের সাথে কাজ করে তাদেরও শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, অ্যান্টিবায়োটিকের অপ্রয়োজনীয় বাজারজাতকরণ ও বিক্রি বৃদ্ধি সীমিত করা এবং অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি ও ব্যবহার তদারক করার জন্য অভ্যন্তরীণ ও সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
বৈশি^ক আবহাওয়া পরিবর্তনের মত অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ বিষয়টি একটি সমস্যা যা মোকাবেলায় এক ধরনের সমন্বিত বিশ্বজনীন ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বা ্ইউ-র একা কঠোরতা অবলম্বন যথেষ্ট নয়। সাংহাই বা বোম্বে থেকে যে কেউ প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া বহন করে ১৫ ঘন্টায় নিউইয়র্ক চলে আসতে পারে- এ রকম একটি বিশ্বে চীন ও ভারতের মত দেশের এ লড়াইয়ে যোগ দিতে হবে।
অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল প্রতিরোধ চ্যালেঞ্জের সাথে আমাদের জলবায়ুকে আক্রান্ত করা সর্বজনীন ট্র্যাজেডির কিছু মিল আছে, নীতি প্রণেতারা এটাকে ভালোভাবে মোকাবেলার জন্য এ লড়াই থেকে কষ্টার্জিত কিছু শিক্ষাকে সুবিধা হিসেবে ব্যবহার করতে সক্ষম হবেন।
প্যারিস জলবায়ু চুক্তির আলোকে অভিনেতাদের এক বৃহত্তর জোটের সমাবেশ ও আমাদের সামনের অভিন্ন চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষিতে স্বার্থ রক্ষায় অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল প্রতিরোধ লড়াইয়ে সহায়তায় দেশগুলোকে পৃথক ভ‚মিকা রাখায় সক্ষম করতে একটি বৈশ্বিক কাঠামো সর্বোত্তম পন্থা হতে পারে। যে সব দেশ তাদের প্রতিশ্রুতি রাখতে ব্যর্থ তাদের জবাবদিহি করতে প্যারিস চুক্তির অক্ষমতা সংশোধনে সাহায্য করতে বৈশ্বিক পুরস্কার তহবিলের আকারে একটি আর্থিক পুরস্কার সেসব দেশগুলোর জন্য প্রবর্তন করা যেতে পারে যারা তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ বা তারও বেশি কিছু করবে। এ পদক্ষেপ যা লাঠির চেয়ে মূলার উপর অধিক নির্ভরশীল, অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল প্রতিরোধে সমন্বিত বৈশ্বিক লড়াইয়ে অনুঘটকের কার্যকর পূর্ব প্রচেষ্টা হতে পারে।
কলিস্টিন দিয়ে আমার দাদির চিকিৎসা শুরুর কয়েকদিনের মধ্যে চিকিৎসকরা আমাদের জানালেন যে তারা সতর্ক আশাবাদী। ইনফেকশনের বিস্তৃতির গতি মন্থর হয়ে এসেছে। ্অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তিনি সুস্থ হন ও তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। ডাক্তাররা এটা বলতে চাননি, কিন্তু আমরা সবাই জানতামঃ এ পর্যায়ে আমরা ভাগ্যবান ছিলাম। শেষ ভরসা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। যদি বিশ্ব সম্প্রদায় দ্রুত কাজ করতে ব্যর্থ হয় এবং এই শেষ রুপালি বুলেট যদি কাজ বন্ধ করে আমরা যাকে আধুনিক ওষুধ বলে জানি, চিরকালের জন্য তা পরিবর্তিত হবে।
*নিবন্ধকার রিজু আগরওয়াল একজন প্রকৌশলি ও নীতি বিশ্লেষক। তিনি বিশ্ব জালানি পরিষদ কর্তৃক ভবিষ্যত জালানি নেতা মনোনীত হয়েছেন এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের একজন গ্লোবাল শেপার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিশ্বব্যাপী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ