Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আইন ও বিচার বিভাগে ১ হাজার ৫২৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ জুন, ২০১৮, ৮:৪০ পিএম

আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আইন ও বিচার বিভাগের জন্য এক হাজার ৫২৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের জন্য ১৮০ কোটি ২২ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাজেট বক্তৃতায় এ প্রস্তাব করেন। আইন ও বিচার বিভাগের জন্য এক হাজার ৫২৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রস্তাবের মধ্যে পরিচালন খাতে ১ হাজার ৪২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা এবং উন্নয়ন খাতে ৪৮০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

২০১৭-১৮ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে আইন ও বিচার বিভাগের জন্য পরিচালন ও উন্নয়ন খাত মিলিয়ে মোট এক হাজার ৪৮০ কোটি ৩০ লাখ ৮৬ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টে ২৩টি এজলাস ও চেম্বার
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৩টি এবং হাইকোর্ট বিভাগে ২০টি নতুন এজলাস বা কোর্টসহ চেম্বার নির্মাণ/সংস্কার করা হবে। ২০১৮-২০১৯ সালের বাৎসরিক বাজেটে এটি বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সুপ্রিম কোর্টের জন্য ১৮০ কোটি ২২ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিচালন খাতেই এ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে সুপ্রিম কোর্টের জন্য জন্য পরিচালন খাতে ১৬৮ কোটি ২৯ লাখ ৭৩ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়।
২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে সুপ্রিম কোর্টে উল্লেখযোগ্য যেসব প্রকল্প/কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে সেগুলো হলো- আপিল বিভাগে ৩টি এবং হাইকোর্ট বিভাগে ২০টি নতুন এজলাসসহ চেম্বার নির্মাণ, জাজেস লাইব্রেরীকে ডিজিটাল লাইব্রেরীতে রুপান্তর, সুপ্রিম কোর্টের জন্য একটি স্বতন্ত্র বাজেট অনুবিভাগ প্রতিষ্ঠা, এবং সুপ্রিম কোর্টের ডাটা সেন্টার, সার্ভার ও লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক সংস্কার করা হবে।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, বিচার প্রার্থীদের কাছে আইনের সেবা সহজগম্য করতে বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। স্বল্প সময়ে জনগণকে বিচারিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বিচার ব্যবস্থায় ই-জুডিশিয়ারি কার্যক্রম নিশ্চিত করতে আইসিটি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হচ্ছে।

 

 

 

বিজিএপিএমইএ’র প্রতিক্রিয়া
আবারো গার্মেন্টস পশ্চাৎ সংযোগ শিল্পকে বঞ্চিত করা হয়েছে


অর্থনৈতিক রিপোর্টার
২০১৭-১৮ অর্থ বছরের জন্য সময়োপযোগী ও সুদূর প্রসারী ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাবের জন্য অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছে গার্মেন্টস পশ্চাৎ সংযোগ শিল্পের সংগঠন গার্মেন্টস এক্সেসরিজ এ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ)। তবে আবারো এই শিল্পকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে সংগঠনটির এক বিবৃতিতে। বিবৃতিতে বিজিএপিএমইএ বলেছে, এ বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বৃদ্ধি করা হয়েছে। যা অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ কিন্তু আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল বর্তমান কর্পোরেট ট্যাক্স ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা। কিন্তু ঘোষিত বাজেটে এর কোন প্রতিফলন ঘটেনি। বর্তমানে গার্মেন্টস শিল্পের কাঁচামালের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধির কারণে আমাদের উৎপাদন খরচ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে, আমাদের উৎপাদিত পণ্য কম দামে রপ্তানি করতে হচ্ছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বিজিএপিএমইএ’র সভাপতি মোঃ আবদুল কাদের খান বিবৃতিতে বলেন, গার্মেন্টস শিল্পের বর্তমানে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং সেক্টর গার্মেন্টস শিল্পের পশ্চাৎ সংযোগ শিল্প হিসেবে কাজ করছে। এ শিল্পের প্রায় ৯৫ শতাংশ এক্সেসরিজ পণ্য তৈরি পোশাক শিল্পে সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু এ সেক্টরকে তৈরী পোশাক শিল্পের ন্যায় সমান সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে না। তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য যেখানে ১৫ শতাংশ কর্পোরেট ট্যাক্স ঘোষনা করা হয়েছে, সেখানে এ সেক্টরের জন্য ৩৫ শতাংশ কর্পোরেট ট্যাক্স রয়েছে। তাই এ শিল্পের বিকাশের কথা চিন্তা করে সরকারের কাছে আমাদের দাবি গার্মেন্টস এক্সেসরিজ সেক্টরের জন্য কর্পোরেট ট্যাক্স ১৫ শতাংশ করা হোক। কারণ এক্সেসরিজ সেক্টর তৈরি পোশাক শিল্পের পরিপূরক শিল্প হিসেবে কাজ করে আসছে। অন্যদিকে, ৩৫ শতাংশ কর্পোরেট ট্যাক্স নতুন বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করবে। নতুন বিনিয়োগের জন্য সরকারের প্রতি সংগঠনের দাবি কর্পোরেট ট্যাক্স ১৫ শতাংশ করা হোক।###

 

 

চমক বিহীন বাজেট -ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বাজেটে নতুন কোনো চমক নেই। গতকাল বাজেট পরবর্তী তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ মন্তব্য করেন। চলতি অর্থবছর যা ছিল আগামী অর্থবছরেও তাই রয়েছে। তাই এক কথায় এ বাজেটকে স্থিতাবস্থার বাজেট বলে অভিহিত করে তিনি বলেন, পুরনো কাঠামো ও পুরনো চিন্তার মধ্যেই বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। রাজধানীর লালমাটিয়া অবস্থিত সিপিডির কার্যালয়ে বাজেট বক্তব্য শোনার পর উপস্থিত গণমাধ্যমকে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে করপোরেট কর কমানো হয়েছে। এক্ষেত্রে মালিকপক্ষেরই বেশি লাভ হবে। কেন এ কর কমানো হয়েছে তার পেছনে যৌক্তিক ও প্রশাসনিক কোনো কারণ দেখছি না। ব্যাংকিং খাতে নৈরাজ্যের মধ্যে এ ধরনের করপোরেট কর ছাড় দেওয়া ঠিক হয়নি।
রোহিঙ্গাদের জন্য কি পরিমান অর্থ খরচ হচ্ছে সেরকম কোনো আর্থিক মূল্যায়ন করা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্রের ওপর চাপ কমিয়ে ব্যাংকিং খাতকে চাঙ্গা করা উচিত ছিল। কিন্তু এই ঘোষিত বাজেটকে দেখে মনে হচ্ছে সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকতে হবে। সিপিডির দীর্ঘদিনের দাবি ছিলো চাল আমদানি ওপর শুল্ক কমানো হবে, এবার এটা বাজেটে কমানো হয়েছে। সিপিডি খুশি হয়েছে। কৃষক এটাতে লাভবান হবে, যোগ করেন এই বিশেষজ্ঞ।

 


ভ্যাটের আওতায় আসছে অনলাইন কেনাকাটা
স্টাফ রিপোর্টার
নগরজীবনের ব্যস্ততা, যানজটসহ নানা ঝক্কিঝামেলা থেকে বেঁচে থাকতে ক্রমেই অনলাইনমুখী কেনাকাটায় ঝুঁকছে মানুষ। অনলাইন মার্কেটে কেনাকাটার আগ্রহ বৃদ্ধি হওয়ার কারণে প্রতিদিনই বাড়ছে কেনাবেচার ওয়েবসাইট ও ফেইসবুক পেইজ। বিনাপূঁজি ও ঝুঁকিহীন হওয়ায় নারী-পূরুষ সকল ধরণের উদ্যোক্তায় যুক্ত হয়েছেন এতে। তবে নতুন অর্থবছরে কেনাকাটার ক্ষেত্রে বাড়তি খরচের ক্ষেত্র তৈরি করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। গতকাল (বৃহস্পতিবার) জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ইন্টারনেটভিত্তিক কেনাকাটা ই-কমার্সকে (অনলাইন ব্যবসা) ভ্যাটের আওতায় আনার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ফেইসবুকের মাধ্যমে কেনাকাটাসহ সব ধরনের ই-কমার্সের ওপর অভিন্ন ৫ শতাংশ হারে ভ্যাটের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী বলেন বর্তমানে ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে পণ্য ও সেবার ক্রয়-বিক্রয় যথেষ্ট বেড়েছে। এই পরিসরকে আরও বৃদ্ধি করতে ‘ভার্চুয়াল বিজনেস’ নামের একটি সেবার সংজ্ঞা সৃষ্টি করা হয়েছে। অনলাইন ভিত্তিক যেকোনো পণ্য-সেবা ক্রয়-বিক্রয় বা হস্তান্তরকে এই সেবার আওতাভুক্ত করা সম্ভব হবে। তাই ভার্চুয়াল বিজনেস সেবার ওপর ৫ শতাংশ হারে মূসক (ভ্যাট) সংযোজন করার প্রস্তাব করছি।
এর আগে ২০১৫ সালেও প্রস্তাবিত বাজেটে ই-কমার্সের ওপর ৪ শতাংশ ভ্যাট রাখা হয়েছিল। অবশ্য পরে এটি বাদ দেওয়া হয়। এ ধরনের ব্যবসা সংশ্লিষ্টরা আইটি ও ই-কমার্সকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু পরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর দাবিতে অর্থমন্ত্রী এই খাতকে শৈশব সময় ধরে ভ্যাট প্রত্যাহার করেন। এরপর দুই অর্থবছরে এই খাতে আর ভ্যাট আরোপ করা হয়নি।
ই-কমার্স ব্যবসা সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিদিন ২০ লাখ মানুষ মানুষ অনলাইনে কেনাকাটা করছেন। বার্ষিক ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে এই বাজারের আকার এখন প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। দেশে বর্তমানে সক্রিয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৫৯ লাখ। সেই তুলনায় ই-কমার্স ব্যবহারকারীর সংখ্যা কম হলেও ভবিষ্যতে এই সংখ্যা বাড়বে বলেই মনে করা হয়।
তবে ভার্চুয়াল বাণিজ্যে মূসক আরোপের প্রস্তাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল। তিনি বলেন, অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা ই-কর্মাস ও এফ-কমার্সে এ ধরণের কর আরোপ করা হলে উদীয়মান এ খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ খাতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। বর্তমানে দেশে এক হাজারের বেশি ই-কমার্স কোম্পানি, ফেইসবুকভিত্তিক এফ-কমার্স প্রায় ২৫ হাজার এবং এক হাজারের মতো অনলাইন শপ রয়েছে জানিয়ে তমাল বলেন, ই-কমার্স ও এফ-কমার্স ছাড়াও অন্যান্য নানা ধরণের ভার্চুয়াল ব্যবসা সেবাও রয়েছে।####

 

দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা
বিশেষ সংবাদদাতা
পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ অবস্থানে ভবিষ্যতে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা আছে সরকারের। গতকাল সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে মোট ৫৩ হাজার ৮১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার কথা জানানোর সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত একথা জানান। অর্থমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ অর্ধেকের বেশি শেষ হয়েছে। চলমান আছে দ্বিতীয় কাঁচপুর, দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় গোমতী সেতু নির্মাণের কাজ। গলাচিপা, পায়রা ও কচা নদীর উপর সেতু নির্মাণ এবং পাটুরিয়া গোয়ালন্দ অবস্থানে ভবিষ্যতে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে এবং ২০২২ সাল নাগাদ এর কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের মধ্যে সরাসরি চলাচলের সুযোগ তৈরির জন্য ঢাকা ইস্টওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটি এশিয়ান হাইওয়ের সাথে যুক্ত থাকবে। নগর পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে বর্তমানে বেশ কয়েকটি কার্যক্রম চলমান আছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, হজরত শাহজালাল (রা.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে গাজীপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ ও উভয়দিকে ২৫ হাজার যাত্রী পরিবহনে সক্ষম বাস র‌্যাপিট ট্রানজিটের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। উত্তরা তৃতীয় ফেইজ হতে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত নির্মাণাধীন বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ পূর্ণ উদ্যমে চলছে। ২০২০ সালের মধ্যে মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ শেষ করার আশা প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী অর্থবছরে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ শুরু করব। অর্থমন্ত্রী বলেন, বৃহত্তর ঢাকার জন্য নিউ ইয়র্কের আদলে একটি মেট্রো যোগাযোগ কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠাপূর্বক সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সমন্বিত করে একটি একক পরিচালনা সংগঠন স্থাপন করা যথাযথ হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবহৃত ভূমির উপর পিপিপি’র আওতায় শপিং মল, ফাইভ স্টার হোটেল, মেডিকেল কলেজ নির্মাণ এবং বিদ্যমান রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতাল আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
২০১৯ সালের মধ্যে ৪টি বোয়িং ৭৮৭-৮ উড়োজাহাজ সংগ্রহ ও ২টি ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ কেনার পরিকল্পনা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিমানে আমরা যথেষ্ট বিনিয়োগ করে চলেছি, কিন্তু বিমান এখনো তেমন ভালো সেবাদান করতে সক্ষম হয়ে উঠতে পারেনি। তিনি বলেন, বিমানকে সরকারি সংস্থার পরিবর্তে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করার উদ্যোগটি আমার মনে হয় এ প্রেক্ষাপটে অপরিহার্য। ###

 

 

বাজেট বাস্তবায়নে প্রধান চ্যালেঞ্জ দক্ষতা ও কর্মসংস্থান -মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মোঃ আজিজুল ইসলাম বলেছেন, দেশের ইতিহাসে সর্ব্বোচ এ বাজেট বাস্তবায়নে প্রশাসনিক দক্ষতা, দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন এবং যুবশক্তির কর্মসংস্থানকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, যে বাজেট দেয়া হচ্ছে, এর বাস্তবায়ন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এটি সব সময় বলে আসছি। প্রতিবার এমন বাড়তি বা বড় আকারের বাজেট দেয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে তা লক্ষ্যে পৌছাতে পারেনা। এবারও তাই হবে বলে মনে হচ্ছে। দ্বিতীয়ত চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বাজেট লক্ষ্যমাত্রার জন্য প্রশাসনিক যে দক্ষতা প্রয়োজন তা আমাদের নেই। যেখনে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার অভাব রযেছে। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী তথাকথিত সামাজিক সমতা এবং বৈষম্য মুক্ত হওয়া কথা বলেছেন। তার সরকারের আমলে এ বিষয়ে সবগুলো স্তরে বৈষম্য বেড়েছে। যদিও সরকার দারিদ্র্য বিমোচনে কার্যক্রম অব্যাহত রাখছে। তবে এ খাতে যে হারে বরাদ্দ ও বাস্তবয়ন হওয়া দরকার তা হচ্ছে না। তাই এটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। একইভাবে শিক্ষিত ও যুব শক্তিদের যে কর্মসংস্থান প্রয়োজন তা কাঙ্খিতভাবে হচ্ছেনা। সেজন্য দেশের ভবিষ্যতের জন্য নিরাপদ কর্মসংস্থান বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে। একই সঙ্গে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ এবং অবকাঠামো খাতে উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারের দক্ষতার অভাবের কথা তিনি উল্লেখ করেছেন।

 

মানের দিকে নজর
শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রায় ৬৮ হাজার কোটি টাকায় বাজেট প্রস্তাব
* রাজধানীতে স্কুলের জন্য শুল্কমুক্ত ডেডিকেটেড স্কুল বাস চালুর প্রস্তাব
* অবকাঠামো উন্নয়নে দিকে নজর
* শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভূক্তি সুনিদিষ্ট ঘোষণা নেই
স্টাফ রিপোর্টার
প্রতি অর্থবছরের মতো এবারও ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়েছে সরকার। বাজেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে। এই খাতে মোট ৬৭ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। বিগত যে কোন সময়ের তুলনায় এই অর্থবছরের সামগ্রিক শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে এটাই সর্বোচ্চ বরাদ্দ। অর্থমন্ত্রী গতকাল (বৃহস্পতিবার) জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন উপলক্ষে বাজেট বক্তৃতায় শিক্ষাখাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার কথা জানান। যা বাজেটের মোট বরাদ্দের ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে কমেছে গতঅর্থবছরের তুলনায় বরাদ্দের হার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ ছিল ১৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। সামগ্রিকভাবে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে চলতি অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করা হয় ৬৫ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে সেটি কমিয়ে করা হয় ৫৯ হাজার ৯২৮ কোটি।
সবার জন্য গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষাখাতে ৫৩ হাজার ৫৪ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি হচ্ছে কোন খাতে আগামী বছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ। আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী, একটি দেশের শিক্ষা খাত জিডিপির ৬ শতাংশ বা বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ পেলে তা আদর্শ ধরা হয়। বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী জানান, শিক্ষার মোট ৫৩ হাজার ৫৪ কোটি টাকার বাজেটের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষার খাতে ২২ হাজার ৪৬৬ কোটি, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে ২৪ হাজার ৮৮৮ এবং কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগে ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এসব অর্থে ১০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন, উপবৃত্তি, পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, স্কুল ফিডিং কার্যক্রম ইত্যাদির পরিধি বাড়াবো। পাশাপাশি, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উন্নত শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে ছেলে ও মেয়েদের জন্য পৃথক ওয়াশরুমসহ ৬৫ হাজার শ্রেণিকক্ষ, ১০ হাজার ৫০০ শিক্ষক কক্ষ, ৫ হাজার বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ও ৩০ হাজার খেলার সামগ্রী বিতরণ করা হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ খাতে সারাদেশে ১০০টি উপজেলায় ১টি করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ নির্মাণ করা হবে। ২০১৮-১৮ অর্থ বাজেটে দেশের ৩৮৯টি উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া ৪টি বিভাগীয় শহরে ৪টি মহিলা পলিটেকনিক, প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে গার্লস টেকনিক্যাল স্কুল, ২৩টি জেলায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন এবং সব বিভাগে একটি করে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মাদরাসা শিক্ষার আধুনিকায়নে ৩৫টি মডেল মাদরাসা স্থাপন ও ৫২টি মাদরাসায় অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে এবং দেশের ৬৫৩টি মাদরাসায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, দক্ষতার ঘাটতির কারণে প্রবাসে বাংলাদেশি কর্মীরা যথাযথ মজুরি পায় না। অভিবাসী শ্রমিকদের দীর্ঘমেয়াদে মধ্যপ্রাচ্যসহ আরবদেশে মানসম্মত কর্মসংস্থানের সুযোগ লাভের জন্য কর্মসংস্থানবান্ধব কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সুযোগ বাড়ানোর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। শিক্ষায় ভর্তির হার ইতোমধ্যে অনেকখানি অগ্রসর হয়েছে। এখন শিক্ষার মান বাড়ানো দিকে নজর দিতে হবে। পূর্বের ধারাবাহিকতায় বিদ্যালয়বিহীন এলাকায় আরো ১ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক শিক্ষার জন্য সব ইউনিয়ন ও কয়েকটি শহরে আইসিটি বেইজ্ড কমিউনিটি লার্নিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হবে। ৬৪টি জেলায় ৬৪টি জীবিকায়ন ও জীবনব্যাপী শিখনকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা আছে আমাদের।
মানসম্মত মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার জন্য সরকারি কলেজে বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ ও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মাল্টিমিডিয়াসহ শ্রেণিকক্ষ, ল্যাংগুয়েজ-কাম-আইসিটি ল্যাব, হোস্টেল নির্মাণ ও প্রয়োজনীয় আসবাব ও সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা হবে। ২৬ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৪৬ হাজার ৩৪০টি মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ এবং ২ হাজার ১২০টি স্মার্ট শ্রেণিকক্ষ তৈরির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রশ্নপত্র প্রণয়নে গোপনীয়তা নিশ্চিত করার জন্য সকল শিক্ষা বোর্ডের সমন্বিত উদ্যোগে প্রশ্নব্যাংক তৈরির চেষ্টা চলছে। সারাদেশে ১০০টি উপজেলায় ১টি করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ নির্মাণ এবং অবশিষ্ট ৩৮৯টি উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন, বিদ্যমান প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন, ৪টি বিভাগীয় শহরে ৪টি মহিলা পলিটেকনিক, প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে গার্লস টেকনিক্যাল স্কুল, ২৩টি জেলায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন এবং সকল বিভাগে একটি করে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মাদরাসা শিক্ষার আধুনিকায়নে ৩৫টি মডেল মাদরাসা স্থাপন ও ৫২টি মাদরাসায় অনার্স কোর্স চালু এবং দেশের ৬৫৩টি মাদরাসায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্ততায় বলেন, ঢাকা শহরে স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য অধিকাংশ স্কুলেই কোন স্কুল বাস নেই। তাই অভিভাবকরা নিজস্ব গাড়ী ব্যবহার করে তাদের সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যেতে বাধ্য হয়, যা ঢাকা মহানগরীতে যানজট সৃষ্টি হয়। উন্নত দেশের ন্যায় স্কুলের জন্য ডেডিকেটেড স্কুল বাস চালু করে যানজট এবং ছাত্রদের স্কুলে যাতায়াত সহজতর ও নিরাপদ করা যেতে পারে। এ লক্ষ্যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা এজেন্সী স্কুল বাস সার্ভিস চালুর আগ্রহ প্রকাশ করলে তা যথাযথ বিবেচনায় বিশেষ শুল্ক সুবিধায় আমদানির সুযোগ দেয়া হবে।
এদিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে ১২ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে ২ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।####

 


বাধ্যতামুলক হচ্ছে ইএফডি
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আহরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) ব্যবহার বাধ্যতামুলক হচ্ছে। এখন থেকে ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিষ্ট্রারের (ইসিআর) পরিবর্তে ইএফডি ব্যবহার করতে হবে বড় বড় রিসোর্ট হোটেল ও অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।
গতকাল আগামী অর্থবছরের জন্য বাজেট প্রস্তাব করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘সারাদেশের বড় বড় রিসোর্ট হোটেল ও অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইসিআর ব্যবহারের পরিবর্তে ইএফডি স্থাপন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাথে ইএফডি ব্যবহারকারীদের মধ্যে অনলাইন সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হবে। ফলে আইনানুগ রাজস্ব আদায় বাড়বে।’
এদিকে জানা গেছে, আগামী এক বছরের মধ্যে এনবিআর সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইএফডির ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায়। এ কারণেই আসন্ন বাজেটে এ বিষয়ে নির্দেশনা এসেছে। এ অত্যাধুনিক ডিভাইস এনবিআরের কেন্দ্রিয় সার্ভারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। কোনো ব্যক্তি একটি পণ্য কেনার পর দোকান থেকে সরবরাহ করা চালানে এনবিআরের নির্দিষ্ট কোডসহ সেটি প্রিন্ট হবে। ফলে ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টি এড়ানো যাবে।
নতুন পদ্ধতিতে ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে যে চালান সরবরাহ করা হবে, সেটিতে এনবিআরের কোড সংযুক্ত না থাকলে বুঝতে হবে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। ফলে ভ্যাট ফাঁকি সহজে ধরা যাবে। এছাড়া ভোক্তাও নিশ্চিত হতে পারবেন তার প্রদত্ত ভ্যাট রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হচ্ছে কি না।

 

 


প্রবৃদ্ধির আশা ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ
ক্স মূল্যস্ফীতি নামবে ৫ দশমিক ৬০ শতাংশে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
৭ দশমিক ৪০ শতাংশ লক্ষ্যের বিপরীতে প্রাথমিক হিসাবে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির এ অর্জন সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আগের দুই অর্থবছরও লক্ষ্যমাত্রার চাইতে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। সফলতার এ ধাবাহিকতা ধরে রাখতে ২০১৮-১৯ অর্থবছর ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে চায় সরকার। এক্ষেত্রে আশাবাদীও অর্থমন্ত্রী। গতকাল জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা বাজেটে এমন লক্ষ্যমাত্রার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
জিডিপিতে বড় প্রবৃদ্ধির পাশাপশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় ধরণের সফলতা আশা করছেন অর্থমন্ত্রী। আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে সাড়ে ৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য বেধে দেয়া হয়েছিল। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে গত ১২ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি দাড়িয়েছে ৫ দশমিক ৮১ শতাংশে। দুই মাস ধরে মূল্যস্ফীাতর হার কিছুটা নি¤œমূখী রয়েছে।
চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফলতাকে বাজেট বক্তৃতায় বড় করে তুলে ধরেছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি সংসদে বলেন, চলতি বছর ৭ দশমিক ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। ইতোমধ্যে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপণ করেছে। মাঝারি ও বৃহৎ শিল্প সূচক প্রায় ১৪ শতাংশ বেড়েছে। বন্যায় প্রথম দিকে কৃষিখাতে উৎপাদন ব্যাহত হলেও ভর্তুকি, কৃষি উপকরণ সরবরাহ ও অন্যান্য সহায়ক কার্যক্রমে আমন ও বোরোর উৎপাদন বেড়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যক্তিগত ভোগ ও সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির কারণে অভ্যন্তরীণ চাহিদা শক্তিশালী হয়েছে। এর পরও বৈশ্বিক পরিমন্ডলে উৎপাদন ও বাণিজ্যে প্রাণসঞ্চারের ফলে রপ্তানি, প্রবাস আয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়ছে। এ সব বিষয় জিডিপি প্রবৃদ্ধির উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আমরা লক্ষ্যভিত্তিক আয় হস্তান্তর কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এগুলোর ভোগ গুণক সাধারণ শক্তিশালী হয়ে থাকে। অন্যদিকে দেশের শিল্প ও কৃষিখাতের প্রকৃতি মজুরি বৃদ্ধির ধারা অব্যহত রয়েছে। এর ফলে ব্যক্তি খাতের ভোগব্যয় বাড়বে। এ ছাড়া সার্বিকভাবে বাজেটের আকার বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারি খাতের ভোগ ব্যয়ও উল্লেখযোগ্যহারে বাড়বে বলেও তিনি মনে করেন।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, অর্থমন্ত্রী অভ্যন্তরীণ চাহিদার মধ্যে বিনিয়োগ ব্যয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ । সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) আকার বাড়ানো হয়েছে। এর বাস্তবায়ন সময়মতো করার জন্য চলমান কার্যক্রমগুলোকে আরো জোরদার করা হবে। ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগের প্রধান প্রতিবন্ধকতাগুলো আমরা চিহ্নিত করে তা অপসারণে সরকার তৎপর হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
স্বস্থির সঙ্গে অর্থনীতিতে কিছুটা শঙ্কাও যুক্ত হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বাজেট বক্তৃতায় বলেন, চাহিদা বাড়লেও সরবরাহ বাড়েনি তাল মিলিয়ে। এর ফলে বছরের প্রথম তিনমাসে বৈশ্বিক পণ্যমূল্য সার্বিকভাবে বেড়েছে। চলতি বছল অপরিশোধিত তেলের মূল্য ব্যারেল প্রতি ৬৫ মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে। ২০১৭ সালে তেলের দাম ছিল ব্যরেলপ্রতি ৫৩ মার্কিন ডলার। ৩ বছর স্থির থাকার পর কৃষিপণ্যের মূল্য বাড়ছে। ধাতব পণ্যের মূল্য ৯ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া, ভারত ও চীনসহ প্রতিবেশী দেশসমূহেও মূল্যস্ফীতির গতিধারা ঊর্ধ্বমুখী।
বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশে নেয়া সম্ভব বলে দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ২০১৭ সালে দ্রুততম প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী শীর্ষ দশটি দেশের তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে। স্থানীয় সরকারের ঢালাও সংস্কার করে প্রবৃদ্ধি আরও বাড়ানো যাবে। এ অবস্থায় প্রবৃদ্ধি ধরে রাখাতে আগামী অর্থবছর বিনিয়োগের পরিমাণ জিডিপির ৩১ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৩ দশমিক ৫৪ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে জিডিপির ২৫ দশমিক ১৫ শতাংশ।
উল্লেখ্য, এক বছরে ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো এক বছরে জীবন যাত্রার ব্যয় ১০০ টাকায় ৫ টাকা ৬০ পয়সা বাড়বে। চলতি বছর ১০০ টাকায় যে পণ্য পাওয়াযায় তা কিনতে এক বছর পর ১০৫ টাকা ৫০ পয়সা লাগছে। আয় না বাড়লে এই পরিমাণ মূল্যের পণ্য কম কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। তবে মূল্যস্ফীতি বাদ দিয়েই ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাজেট

১৩ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ