Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রীর বেশকিছু পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ জুন, ২০১৮, ৪:৩৫ পিএম

২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে বেশকিছু পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। যেসব পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ছোট ফ্ল্যাট, ফার্নিচার, কসমেটিক্স ও টয়লেট্রিজ পণ্য, পোশাক, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবা ইত্যাদি

গাড়ি

নিজ নামে যাদের দুটি গাড়ি আছে তাদের উপর ১০ শতাংশ হারে সারচার্জ বসানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এর ফলে একাধিক গাড়ি ব্যবহারকারীদের বাড়তি অর্থ গুনতে হবে।

বাড়ি : প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে তুলনামূলকভাবে ছোট ফ্লাট বা বাড়িতে ক্রেতাদের ওপর ভ্যাটের হার বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে মধ্যবিত্তদের আবাসনের জন্য বাড়তি অর্থ গুণতে হবে। তবে মাঝারি আকারের (১১০১ থেকে ১৬০০ বর্গফুট) ফ্ল্যাট কেনার খরচ কমতে পারে। গতকাল সংসদে বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ১১০০ বর্গফুট বা এর চেয়ে ছোট এপার্টমেন্ট বিক্রির ওপর ভ্যাট ২ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন। এর আগে এই আকারের ফ্ল্যাটে ১ দশমিক ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট ছিল। তবে ১১০১ বর্গফুট থেকে ১৬০০ বর্গফুটের এপার্টমেন্টে ভ্যাটের হার কমানোর প্রস্তাব এসেছে। এক্ষেত্রে ভ্যাট ২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হচ্ছে। ফলে অপেক্ষাকৃত উচ্চ আয়ের ফ্ল্যাট ক্রেতাদের মুখে হাসি ফুটবে। ১৬০০ বর্গফুটের ওপরের ফ্ল্যাটের ৪ দশমিক ৫ শতাংশ ভ্যাট অপরিবর্তি থাকছে। তবে এক্ষেত্রে আর পরোক্ষ কর থাকবে না। এদিকে যারা পুরনো ফ্ল্যাট কিনবেন তাদেরও খরচ বাড়তে পারে। কারণ নতুন অর্থবছরে পুরনো ফ্ল্যাট পুনঃনিবন্ধনে ২ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে।

কসমেটিক্স ও টয়লেট্রিজ পণ্য : প্রস্তাবিত বাজেটে কসমেটিকস ও টয়লেট্রিজ পণ্যের ওপর নতুন করে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপ করা হয়েছে। এতে এসব পণ্যের দাম বাড়বে। প্রস্তাবিত বাজেটে পুরুষের শেভিং পণ্য, ওয়াশরুম ফ্রেশনারসহ সমজাতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ভ্যাট আরোপের কথা বলা হয়েছে। এসব পণ্যে ভ্যাটের হার ১০-১৫ শতাংশে উন্নীত করা হচ্ছে। সেখানে প্রসাধনী সামগ্রীর ওপর ১০ শতাংশ ভ্যাট আরোপের কথা বলা হয়েছে। তবে প্রস্তাব অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি বাড়ছে টয়লেট্রিজ পণ্যের দাম। এর মধ্যে সিরামিক বাথটাব, জাকুজ্জি, শাওয়ার ও শাওয়ার ট্রে রয়েছে। এসব পণ্যে বিদ্যমান ২০ শতাংশ ভ্যাট বাড়িয়ে ৩০ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

আমদানি করা চাল : আমদানি করা চালের উপর রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর ফলে সব ধরনের চাল আমদানিতে শুল্ক ২৫ শতাংশ ও রেগুলেটরি শুল্ক ৩ শতাংশ প্রযোজ্য হবে। ফলে আমদানি করা চালের দাম বাড়তে পারে।

ফার্নিচার : ফ্ল্যাট কেনার পর ঘর সাজানোর আসবাবপত্র কিনতে গেলে আগামী অর্থবছর বাড়তি চাপে পড়তে হতে পারে ক্রেতাদের। ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে আসবাবপত্র উৎপাদন ও বিপণন পর্যায়ে ১ শতাংশ করে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বর্তমানে আসবাবপত্র উৎপাদন পর্যায়ে ৬ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয়। আগামী অর্থবছর থেকে তা ৭ শতাংশ হারে প্রস্তাব করেছেন

অর্থমন্ত্রী। আর বিপণন পর্যায়ে ৪ শতাংশ ভ্যাট পরিবর্তন করে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।

পোশাক : বর্তমানে নিজস্ব ব্র্যান্ড সংবলিত তৈরি পোশাক বিক্রিতে ৪ শতাংশ হারে ভ্যাট আছে। সরকার আগামী অর্থবছর থেকে এ খাতে ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রস্তাব করেছে। এ ছাড়া স্থানীয় বাজারে বিক্রির জন্য ব্র্যান্ডবিহীন পোশাক পণ্য বিপণনের ক্ষেত্রেও ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপিত হবে।

তথ্যপ্রযুক্তি : তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবার ওপর বর্তমানে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতে ভ্যাট হার ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করছেন অর্থমন্ত্রী। এতে এ খাতে ব্যয় বাড়বে। সম্প্রতি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তথ্যপ্রযুক্তি সেবা গ্রহণের মাত্রা বেড়েছে। এতে মানুষের জীবনযাপনের ব্যয় বাড়তে পারে।

ই-কমার্সে ভ্যাট : বর্তমানে ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে পণ্য বা সেবা কেনাবেচা অনেক বেড়েছে। এভাবে পণ্য ও সেবার পরিসর আরও বাড়াতে ‘ভার্চুয়াল বিজনেস’ নামে একটি সংজ্ঞা দেয়া হচ্ছে বাজেটে। অনলাইনভিত্তিক যেকোনো পণ্য ও সেবার ক্রয়-বিক্রয় বা হস্তান্তর এ সেবার আওতাভুক্ত হবে। এই ভার্চুয়াল বিজনেস সেবার ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ট্যারিফ ভ্যালু বাড়ছে অনেক পণ্যে : সরকার দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে ট্যারিফ ভ্যালু নির্ধারণ করে তার ওপর ভ্যাট আরোপ করে। ট্যারিফ ভ্যালু সাধারণত বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক কম হয়। ফলে একই হারে ভ্যাট আরোপ হলেও আমদানি পণ্যের চেয়ে দেশি পণ্যের ভ্যাট দিতে হয় কম। আসছে বাজেটে বিভিন্ন পণ্যের ট্যারিফ ভ্যালু যৌক্তিকীকরণের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে। এ তালিকায় রয়েছে- টমেটো পেস্ট, কেচাপ, সস, বিভিন্ন ফলের পাল্প, ফলের জুস, ব্যবহার অযোগ্য ট্রান্সফর্মার অয়েল, লুবব্লেন্ডিং অয়েল, বিভিন্ন ধরনের পেপার ও পেপার প্রোডাক্ট, কটন ইয়ার্ন বর্জ্য, ওয়েস্ট ডেনিম, ষ্টক্র্যাপ/শিপ ষ্টক্র্যাপ, সিআর কয়েল, জিপি শিট, সিআই শিট, রঙিন সিআই শিট, ব্লেড, চশমার ফ্রেম ও সানগ্লাস।

আমদানিতে অগ্রিম ভ্যাট বাড়ছে : আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম ভ্যাট ও ব্যবসায়ী পর্যায়ের ভ্যাট ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। আমদানিতে এর প্রভাব পড়তে পারে। বর্তমানে প্রায় ১১০০ ধরনের পণ্য আমদানি হয়, যেখানে ভ্যাট দিতে হয়। এর বাইরে অ্যানার্জি ড্রিংক, সানস্ক্রিন, সানগ্লাস, সিগারেট, সিরামিক, ফিলামেন ল্যাম্প, পলিথিন, লিপস্টিক, পুরনো ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন ফি, আমদানি করা মোবাইল ফোন, বিদেশি চকোলেট, কফি, গ্রিন টি, আমদানি করা বাদাম, আমদানি মধু, ইউপিএস, আইপিএস, স্টাবিলাইজার, ছাপাখানার পণ্য, প্লাস্টিক ব্যাগ, মোবাইল ব্যাটারি চার্জার, নেলপলিশ, অ্যালকোহল বিক্রয়কারী হোটেল রেস্তোরাঁয় সেবার মান, হেলিকপ্টার সেবা, বিড়ি, জর্দা এবং গুল। ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ