পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : দশম জাতীয় সংসদের ২১ তম অধিবেশন শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশন শুরুর দিনে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনাসহ অধিকাংশ মন্ত্রী এমপিরা উপস্থিত ছিলেন। এরআগে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে অধিবেশন ১২ জুলাই পর্যন্ত চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করবেন।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বেলা ১১টায় অধিবেশনের শুরুতেই তিনি সব এমপি ও দেশবাসীকে রমজানের শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, বাজেট অধিবেশন খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি আশা করি সরকারি ও বিরোধী দলের মাননীয় সংসদ সদস্যরা সরকারি আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সুচিন্তিত মতামত দিয়ে বাজেটকে আরও বাস্তবমুখী করার ওপর আলোচনা করবেন।
সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, কার্যউপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রমজান মাসে প্রতিদিন অধিবেশন শুরু হবে সকাল সাড়ে ১০টায়। ঈদের পর প্রতিদিন অধিবেশন শুরু হবে বিকেল ৩টায়। স্পিকার প্রয়োজনে অধিবেশনের মেয়াদ ও সময়সীমা বাড়াতে ও কমাতে পারবেন। স্পিকারের সভাপতিত্বে কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে কমিটির সদস্য বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, এইচএম এরশাদ, বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, সমাজকল্যান মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, মইন উদ্দীন খান বাদল ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক উপস্থিত ছিলেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিশেষ আমন্ত্রণে বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।
অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাবনার পর পুরো অধিবেশনজুড়ে তার ওপরে আলোচনা করবেন সংসদ সদস্যরা। সংবিধান অনুযায়ী ৩০ জুনের মধ্যেই নতুন অর্থবছরের বাজেট পাস করতে হবে। বাজেট অধিবেশন সাধারণত দীর্ঘ সময় হয়ে থাকে। সংসদের অন্যান্য অধিবেশন বিকালে বসলেও রোজার মাস হওয়ায় এ অধিবেশনের কিছুদিনের কার্যক্রম দিনের প্রথমভাগে শুরু হবে। বাজেটের ওপর ৪০ ঘণ্টা আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। বৈঠকের সিদ্ধান্তনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট পাস হওয়া পর্যন্ত প্রতি বৃহস্পতিবার ৪টি সরকারি দিবস হিসেবে গণ্য হবে। ১০ ও ১১ জুন সম্পূরক বাজেট আলোচনার পর পাস করা হবে। এছাড়া ২৭ জুন অর্থবিল এবং ২৮ জুন ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট পাস করা হবে।
এ অধিবেশনে উত্থাপনের জন্য ৪টি সরকারি বিলের নোটিশ পাওয়া গেছে। এছাড়া সংসদে পাসের অপেক্ষায় ৪টি, কমিটিতে পরীক্ষাধীন ০৭টি ও উত্থাপনের অপেক্ষায় ২টিসহ অনিস্পন্ন মোট ১৭টি সরকারি বিল এবং অনিষ্পন্ন ০৯টি বেসরকারি বিল এ অধিবেশনে রয়েছে। এ অধিবেশনে উত্থাপনের জন্য কোন বেসরকারি বিলের নোটিশ পাওয়া যায়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য ১৫০টি ও সাধারণ প্রশ্ন ২ হাজার ৫০৭টিসহ মোট ২ হাজার ৬৫৭টি প্রশ্ন পাওয়া গেছে। এছাড়া সিদ্ধান্ত প্রস্তাব ১৭১টি ও মনোযোগ আকর্ষণের ৪২টি এবং সংক্ষিপ্ত আলোচনার জন্য ১টি নোটিশ পাওয়া গেছে।
শোকপ্রস্তাব গ্রহণ
অধিবেশনের শুরুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। দশম সংসদের এমপি একেএম মাঈদুল ইসলামসহ সাবেক দুই মন্ত্রী, একজন প্রতিমন্ত্রী এবং একজন হুইপসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মৃত্যুতে আনীত শোক প্রস্তাবটি সর্বসম্মত ভাবে গৃহীত হয়। প্রস্তাবে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়। পরে প্রয়াতদের আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মনোনয়ন
এর আগে অধিবেশনের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মনোনয়ন দেয়া হয়। যারা স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে সংসদের বৈঠক পরিচালনা করবেন। সভাপতিমন্ডলীর সদস্যরা হলেন- আবুল কালাম আজাদ, শামসুল হক টুকু, মাহবুব আলী, ফখরুল ইমাম ও সফুরা বেগম।
বাজেট উত্থাপন
আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের জন্য বাজেট প্রস্তাবনা উত্থাপন করবেন। এবারের বাজেটের আকার হবে ৪ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকারও বেশী। যা দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বাজেট। এবারো ডিজিটাল ডিসপ্লের মাধ্যমে বাজেট উপস্থাপন ও বক্তৃতা করবেন অর্থমন্ত্রী। এবার তার সাথে যুক্ত হবে একটি ভিডিও চিত্র। ওই ভিডিও চিত্রে বর্তমান সরকারের সামগ্রিক সাফল্য তুলে ধরা হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাজেট সংসদে উপস্থাপনের আগে তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন নেয়া হবে। মন্ত্রিসভার বৈঠক সংসদ ভবনে হবে। মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর তা রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। এই দিন সংসদ ভবনে উপস্থিত থাকবেন রাষ্ট্রপতি। তিনি অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা শুনবনে। সংসদে উত্থাপিত প্রস্তাবনা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা শেষে আগামী ২৮ জুন পাস হবে। এরআগে চলতি অর্থ বছরের সম্পুরক বাজেট পাস হবে।
শোকপ্রস্তাব গৃহীত
চলমান দশম সংসদে কুড়িগ্রাম-৩ উলিপুর আসনের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এমপি মাঈদুল ইসলাম ও সাবেক চার মন্ত্রী-প্রতমন্ত্রীর মৃত্যুতে সংসদে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। এর আগে সংসদে আনা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করা হয়। শোকপ্রস্তাব শেষে সংসদে দুই মিনিট নীরবতা পালন ও মৃতের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। পরে রেওয়াজ অনুযায়ী সংসদের অন্যান্য কার্যক্রম স্থগিত রেখে অধিবেশন মুলতবি করেন স্পিকার।
শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আ স ম ফিরোজ, প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, মসিউর রহমান রাঙ্গা, ফখরুল ইমাম, তাজুল ইসলাম, রওশন আরা মান্নান, নুরুল ইসলাম ওমর, নুর-ই হাসনা লিলি চৌধুরী প্রমূখ। আলোচনায় রওশন এরশাদ বলেন, মাঈদুল ইসলাম সত্যিকার অর্থে একজন সৎ মানুষ ছিলেন। ভালো রাজনীতিবিদ ছিলেন। তার মৃত্যুতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা কেউ পূরণ করতে পারবেন বলে মনে হয় না। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ১৯৭২ সালে তার সঙ্গে আমার পরিচয়। তার বিশেষ গুণ ছিলো তিনি সদাহাস্য বিনয়ী ছিলেন। তিনি ভোজন রসিক ছিলেন। সেদিকে আমারও দুর্বলতা আছে। তিনি অনেকবার তার মোহাম্মদপুরের বাসায় খাইয়েছেন। আমার বাসায় অনেকবার খাবার পাঠিয়েছেন। কুড়িগ্রামের উন্নয়ন তার স্বপ্ন ছিলো। তিনি একটি বাঁধ দিয়ে কুড়িগ্রামের দুর্দশা লাঘবে সচেষ্ট ছিলেন। মঙ্গাকে হটিয়ে কুড়িগ্রামকে উন্নয়নশীল এলাকায় রূপান্তর করেছেন।বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, তিনি অত্যন্ত বিনয়ী ছিলেন। মন্ত্রী হিসেবেও তিনি অনেক মন্ত্রণালয় দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করেছেন। নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, তিনি চিলমারী বন্দরের জন্য বারবার আমার কাছে আসতেন। আমরা দ্রæত সেই চিলমারী বন্দরের কাজ শুরু করছি। এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, তার শূণ্যতা আমাদের ব্যথিত করেছে। তিনি আসাম রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন। সেখান থেকে তিনি কুড়িগ্রামে এসে অবস্থান নেন। একজন ছাত্র রাজনীতিক হিসেবেও তিনি উজ্জল ছিলেন।
কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, একেএম মাঈদুল ইসলাম অত্যন্ত দয়াশীল, দানশীল, ধন্যাঢ্য ব্যাক্তি ছিলেন। তিনি কাসেম গ্রæপ অব কোম্পানির অন্যতম পরিচালক ছিলেন। টাকা খরচ করার জন্য তিনি ছটফট করতেন।
যাদের মুত্যুতে শোকপ্রস্তাব
কুড়িগ্রামের উলিপুরের এমপি মাঈদুল ইসলাম ছাড়াও সংসদে সাবেক ১০ জন এমপি-মন্ত্রীর মৃত্যুতে শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। তারা হলেন- সাবেক তথ্য মন্ত্রী এম শামসুল ইসলাম ও মামদুদুর রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবিএম শাহজাহান, সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল ইসলাম, সাবেক এমপি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাহাব বুদ্দিন, খন্দকার মো. খুররম, বেগম আমিনা বারী, চমন আরা বেগম এবং সংসদ সচিবালয়ের সহকারি গ্রন্থাগারিক মো. ইকবাল। এছাড়াও কবি বেলাল চৌধুরী, বিচারপতি আমিরুল কবীর চৌধুরী, ভাষাসৈনিক জাতীয় অধ্যাপক মোস্তাফা নূরউল আলমসহ দেমের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মৃত্যুতে শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।