Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গণপরিবহনে চাঁদাবাজির হটস্পট আশুলিয়া

প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১০:৪০ পিএম, ৩ জুন, ২০১৮

সেলিম আহমেদ, সাভার থেকে : ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় ঈদকে সামনে রেখে ছোট বড় গণপরিবহনে চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। প্রতিদিন এসব পরিবহন থেকে সর্বনি¤œ দশ টাকা থেকে শুরু করে মাসিক এক হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর ঈদ এলেই যেন চাঁদাবাজির মাত্রা বেড়ে যায় আরও কয়েকগুণ। তবে চাঁদাবাজির নেপথ্যে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও পুলিশের সংশ্লিষ্টতা থাকায় প্রতিনিয়ত তারা নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন বলেও অভিযোগ তাদের।
গত ২৬ মে বাইপাইল এলাকায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সড়ক পরিদর্শনে এসে চাঁদাবাজি বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা প্রদান করেন। কিন্তু তারপরও পুলিশ রহস্যজনক কারণে এসব চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে, আশুলিয়ার নবীনগর, নয়ারহাট ও ধামরাইয়ের ইসলামপুর, কালামপুর, শ্রীরামপুরসহ বেশ কিছু জায়গায় বিভিন্ন পরিবহনে চাঁদাবাজিতে জড়িত প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশ। এছাড়া নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের নবীনগর ও বাইপাইল এলাকায় এই চাঁদাবাজির মাত্রা আরো অধিক। শুধুমাত্র বাইপাইল ত্রিমোড়ে মাহিন্দ্রা পরিবহন থেকে মাসে প্রায় ৩০ লাখ, আশুলিয়া ক্ল্যাসিক থেকে সাড়ে ১১ লাখ, অন্যান্য পরিবহন থেকে প্রায় ১ লাখ ও নয়ারহাট এলাকায় বিভিন্ন গণপরিবহন থেকে প্রায় ৬ লাখ টাকা চাঁদা উত্তোলনের তথ্য পাওয়া গেছে।
বাদল, আকবর ও সোবহানসহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকার একাধিক মাহেন্দ্রা চালক অভিযোগ করে বলেন, টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের আশুলিয়া বাজার থেকে বাইপাইল পর্যন্ত প্রায় ৪ শতাধিক অবৈধ থ্রি হুইলার মাহিন্দ্রা পরিবহন চলে। যেগুলোর কোনো কাগজ নেই। আর সে জন্য এসব পরিবহন থেকে প্রতিদিন গাড়ি প্রতি ১৩০ টাকা করে চাঁদা আদায় করেন ধামসোনা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য ও যুবলীগ নেতা মঈনুল ইসলাম ভূঁইয়ার লোক আপেল। এছাড়া বাইপাইল ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীর হেসেনের নির্দেশে জাকির নামে একজন আলাদাভাবে ২৫০০ টাকা করে মাসোহারা আদায় করে। এমনকি নতুন কেউ এই সড়কে মাহিন্দ্রা চালাতে চাইলে চাঁদাবাজ জাকিরের নিকট ৫-১০ হাজার টাকা ফি দিয়ে ভর্তি হতে হয়। আর কোনো চালক যদি মাসোহারা দিতে না পারে কিংবা দিতে না চায় তাহলে জাকির সার্জেন্টের মাধ্যমে ঐ চালকের পরিবহনটি আটকে দিয়ে ১০-৩০ হাজার টাকা জোরপূর্বক আদায় করে। মাঝে মধ্যে মাসোহারার জন্য চালকদের মারধর করে জাকির। কিন্তু চাঁদাবাজ জাকির স্থানীয় নেতা ও ট্রাফিক পুলিশের ছত্রছায়ায় থাকায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস পায় না কেউই। এছাড়া আশুলিয়া থানা যুবলীগের সাবেক নেতা শাহাদাত হোসেন খানসহ অনেকেই চাঁদাবাজির সাথে সম্পৃক্ত আছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। সবচেয়ে চাঁদার পরিমাণ বেশি গুণতে হয় নবীনগর থেকে মহাখালী রুটের আশুলিয়া ক্ল্যাসিক পরিবহনের বাসগুলোকে। প্রতিদিন সড়কের বিভিন্ন স্থানে তাদের ৭০টি বাসের জন্য পৃথক ভাবে ১৫৬০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। এর মধ্যে এয়ারপোর্ট এলাকায় ২’শ, বিশ্বরোড এলাকায় ৩’শ, মহাখালী টার্মিনালে সাড়ে ৩’শ, নবীনগরে ১৬০ ও বাইপাইলে সাড়ে ৫’শ টাকা। এছাড়া ইপিজেড থেকে মিরপুরগামী আলিফ, মোহনা ও আব্দুল্লাহপুর থেকে নবীনগরগামী হিউম্যান হলারগুলোকে ৩০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা গুণতে হয়। অভিযোগের সত্যতা জানতে চাঁদা উত্তোলনকারী জাকিরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে বাইপাইলের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীর হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কোনো চাঁদা তুলি না। চাঁদা অন্যরা তুলে। পরিবহন থেকে চাঁদাবাজী বন্ধে আমি নিজেও কাজ করে যাচ্ছি।
এদিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নবীনগর, বাইপাইল, পল্লীবিদ্যুৎ ও বলিভদ্র এলাকায় রেন্ট-এ কারের চালকদের নিকট থেকে জয় নামে এক ব্যক্তি আশুলিয়া থানার হয়ে চাঁদা আদায় করে বলে অভিযোগ চালকদের। প্রতি মাসে ৫০০ থেকে ৭০০ করে টাকা দিতে হয় প্রাইভেটকার চালকদের। অপরদিকে একই মহাসড়কের আশুলিয়া থানাধীন নয়ারহাট এলাকায় দিনের যে কোনো সময় গেলেই চোখে পড়বে গণপরিবহন থেকে চাঁদা সংগ্রহের খোলামেলা দৃশ্য। লেগুনা, ট্রাক ও গণপরিবহনের একাধিক চালক অভিযোগ করে বলেন, নয়ারহাট এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনেই ডি-লিংক, স্বজন, ভিলেজ লাইন, পদ্মা লাইন, মানিকগঞ্জ পরিবহন ও লেগুনাসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক বিভিন্ন পরিবহন থেকে দৈনিক গড়ে ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা উত্তোলন করা হয়। প্রসঙ্গত; গত ১১মার্চ দুপুরে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের জামগড়া এলাকায় অটো রিকশা চালক আব্দুল মালেকের (৩২) কাছে চাঁদা চেয়ে না পেয়ে নুরুল আমিন নামে এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য তাকে বেধড়ক মারধর করে। এর আগে গত বছরের ৩০ জুন সকাল সাড়ে ১০টায় বাইপাইল ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে অটোরিকশা চালক শামীম শিকদারের অটোরিকশার ব্যাটারি খুলে নেয়। পরে ফেরত দেয়ার জন্য ৪ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে ট্রাফিক পুলিশ। এর প্রতিবাদে পাশের দোকান থেকে কেরোসিন কিনে গায়ে আগুন দেয় শামীম। এ ধরনের আলোচিত একাধিক ঘটনা থাকলেও আজও বন্ধ হয়নি চাঁদাবাজি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চাঁদাবাজি

১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ