Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আবাসনের মন্দা এড়াতে তহবিল চায় রিহ্যাব

অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রাখার পক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

আবাসন খাতে কম সুদে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যে ৫০ হাজার কোটি টাকার একটি পুন:অর্থায়ন তহবিল চায় এ খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)। ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে আবাসনে নিবন্ধন কর ৭ শতাংশে নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি। নির্মাণ সামগ্রীর দাম কমিয়ে আনা, সেকেন্ডারি বাজারে নাম মাত্র নিবন্ধন করে ফ্ল্যাট হস্তান্তর ও অপ্রদর্শিত অর্থ আবাসনে বিনিয়োগের দাবি জানিয়েছে রিহ্যাব। একই সঙ্গে সবার জন্য আবাসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা থাকলেও এই আবাসন খাত এখন নানা সংকটে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসনে প্রতিবছর বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হলেও জনগণের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। উচ্চমাত্রার রেজিষ্ট্রিশন ফি, ব্যাংক ঋণের অভাব ও উচ্চ সুদহারে ১০ হাজার প্লট-ফ্লাট অবিক্রিত থাকায় আবাসনে মন্দাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এই খাতকে গতিশীল ও প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা অনুযায়ী সকলের জন্য আবাসন নিশ্চিতে কালো বা অপ্রদর্শিত অর্থ ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে।
জাতীয় অর্থনীতিতে আবাসন খাতের অবদান নিয়ে আয়োজিত এক গোল টেবিল বৈঠকে এ সব দাবি তুলে ধরেন রিহ্যাব নেতারা। বাজেট ঘোষণার প্রাক্কালে খাত সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়েই এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন।
গতকাল শনিবার রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে রিহ্যাব ও সেন্টার ফর কমিউনিকেশন নেটওয়ার্কের (সিসিএন) যৌথ আয়োজনে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বক্তব্য রাখেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যন্ড অ্যাসোসিয়েশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন), রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন, সিনিয়র সহ সভাপতি নুরুন্নবী চৌধুরী (শাওন), সাবেক মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশীদ, রাজউকের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী এমদাদুল হক, রি রোলিং মিল এসোসিয়েশনের সহ সভাপতি মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক প্রমূখ।
রিহ্যাবের দাবি আদায়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, অর্থনীতিতে আবাসন খাতের ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে। এ খাতের সঙ্গে অনেকগুলো খাতের ব্যবসা জড়িত আছে। আর বাসস্থান মানুষের মৌলিক অধিকার। সরকার এ অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট। এই খাতে ১৫ শতাংশ নিবন্ধন ব্যয় থাকতে পারে না। এই খাত চাঙ্গা থাকলে লিংকেজ শিল্প আরো বিকশিত হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
অপ্রদর্শিত অর্থ সঠিক পদ্ধতিতে প্রদর্শনের সুযোগ জাতীয় বাজেটে রাখা উচিৎ বলে মন্তব্য করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তোফায়েল আহমেদ বলেন, হঠাৎ করে এটা বন্ধ করা ঠিক হবে না। একে আমি কালো টাকা বলবো না। কারণ কোনও কারণে গ্রাহক হয়তো এ টাকার কথা জানেননি। যখন জেনেছেন তখন তিনি সেটা প্রদর্শনের সুযোগ পেতে পারে। সেটা যথাযথ নিয়মে হবে।
দেশের ব্যাংকিং খাত ক্ষতিগ্রস্থ হলে উন্নয়ন কাজে আসবে না বলেও অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, এ খাতকে গুরুত্ব দিতে হবে, যত্নশীল হতে হবে। সতর্কতার সঙ্গে ব্যাংক খাত নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গ্রাহক ব্যাংকে চেকের পরিমাণ টাকা না পেলে সেটা সমস্যা। ইসলামী ব্যাংকেও এখন টাকা পাওয়া মুশকিল। গ্রাহককে সেখানেও চেক জমা দিয়ে বসে থাকতে হয়।
রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, বাজেটে বিভিন্ন খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকলেও আবাসন খাতে ক্রেতাদের জন্য সরকারি কোন তহবিল নেই। ১৪ থেকে ১৬ শতাংশের উচ্চ নিবন্ধন কমিয়ে ৭ শতাংশ করার দাবি করেন তিনি। একই সাথে সেকেন্ডারি বাজার ব্যবস্থা গতিশীল করতে দ্বিতীয় বার ফ্ল্যাট ক্রয়ে নিবন্ধন ব্যয় কমানোর দাবি জানান রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট।
নুরুন্নবী চৌধুরী (শাওন) বলেন, গৃহায়ন খাতে ঋণের সুদ হার এক অংকে নামার পর সম্প্রতি আবার তা ডাবল ডিজিটে চলে গেছে। ফলে এই খাত একটু ঘুঁরে দাঁড়ানোর পর আবার স্থবিরতার দিকে যাচ্ছে। আবাসন খাতকে গুরুত্ব দিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে ৫০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠনের দাবি জানান তিনি।
শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন) বলেন, নির্মাণ খাতের বেশ কিছু সামগ্রী বিশেষ করে সিমেন্টের দাম এখনও বেশি। আবাসন খাতেরসম্ভাবনা ধরে রাখতে নির্মাণ সামগ্রীর ব্যয় কমাতে হবে।
কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ব্যাংকে এখন লুটপাট হচ্ছে। আগে ব্যাংকের মালিক ছিল জনগণ। এখন উদ্যোক্তোরাই মালিক। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে তিনি বলেন, রাজউক আরেক দুর্ভোগের নাম। ঘুষ দিতে পারলে ১৫ দিনে প্ল্যান পাস হয়। আর না দিতে পারলে এটা নেই সেটা নেই বলে ১০ বছর লাগবে। এমদাদুল ইসলাম বলেন, ফ্লাইওভারেও এখন বৃষ্টির পানি জমে থাকে। এটা পরিকল্পনার সমস্যা। এত বড় দায়িত্ব রাজউকের একার পক্ষে পালন করা সম্ভব নয়। এর এজ্য আলাদা ক্ষমতা দিয়ে একটা ডিপার্টমেন্ট করতে হবে।
অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন রি-রোলিং মিল এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক, এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেন, বারভিডা সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন, সিএনআরবি’র সভাপতি এমএস সেকিল চৌধুরী প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ