পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জিকু রায় চৌধুরী (১৬), প্রতীক মজুমদার (১৫), জয় বড়–য়া চৌধুরী (১৮), মোঃ আসিফ (১৮), নূর হোসেন বাপ্পী, (২০) মোঃ আরমান (১৯), আলী হোসেন (১৯)- এরা কেউ পেশাদার অপরাধী নয়। কিন্তু তারা পেশাদার অপরাধীদের হার মানিয়েছে। খুন দিয়েই তাদের অপরাধ শুরু। পুলিশ বলছে তারা নির্মম-নৃশংসতায় পেশাদার খুনিদেরও ছাড়িয়ে গেছে। তারা বয়সে সবাই কিশোর-তরুন, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী। খুনের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়া এবং গ্রেফতারের পর অকপটে দায় স্বীকার আর লোমহর্ষক খুনের বর্ণনা দেওয়ার ঘটনায় হতবাক পুলিশ এবং আদালতের বিচারকরা। অন্যদিকে অব্যাহত কিশোর অপরাধের ঘটনায় চট্টগ্রামের সর্বত্র বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা।
নগরীর বন্দর থানার সল্টগোলা ক্রসিং এলাকার নিজ বাসায় রূপালী ব্যাংক কর্মকর্তা সজল নন্দী খুনের ঘটনায় জিকু রায় চৌধুরী, প্রতীক মজুমদার ও জয় বড়–য়া চৌধুরীকে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই। ২৯ লাখ টাকার লোভে ওই তিন কিশোর দিবালোকে বাসায় হানা দিয়ে সজল নন্দীকে গলাকেটে হত্যা করে। মোঃ আসিফ, নূর হোসেন বাপ্পী ও মোঃ আরমানকে গ্রেফতার করা হয় নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় আরাফাত খুনের ঘটনায়। একটি জিমে ব্যায়াম করার সময় কথা কাটাকাটির জের ধরে ওই তিনজন আরমানকে গলা কেটে হত্যা করে।
অন্যদিকে মোঃ আলী হোসেনকে গ্রেফতার করা হয় নগরীর আকবর শাহ এলাকায় সুজন নামে এক যুবকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায়। নগরীর অভিজাত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ছাত্রী তাসফিয়া আমীন খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হয় এলিমেন্টারী স্কুলের এক শিক্ষার্থীসহ দুই কিশোর। ওই ঘটনায় তাসফিয়ার বাবা ব্যবসায়ী মোঃ আমীন ৬ কিশোর-যুবককে আসামী করে হত্যা মামলা করেন। এর আগে নগরীর জামালখান সড়কে প্রকাশ্যে দিনের আলোতে অসংখ্য মানুষের সামনে কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র আদনান ইসরাফকে কুপিয়ে খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হয় ৫ কিশোর। তারা হলো মঈন খাঁন, সাব্বির খান ও মুনতাছির মোস্তফা, এখলাছ উদ্দীন আরমান এবং আবদুল্লাহ আল সাঈদ।
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মঈন উদ্দীন বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তা সজল নন্দীকে খুনের ঘটনায় গ্রেফতার তিন কিশোর অবলিলায় খুনের বর্ণনা দিয়েছে। তারা এতটাই ভয়ঙ্কর যে খুনের পর পালানোর চিন্তাও করেনি। বাসা-বাড়িতে স্বাভাবিক ছিল তারা। তিনি বলেন, সজল নন্দীর ছেলে সৈকত তার নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া বন্ধু প্রতীককে জানিয়েছিল, তার বাবা ব্যাংক থেকে ২৯ লাখ টাকা লোন পেয়েছে। তথ্যটি পরে সেই বন্ধু তার অপর দুই বন্ধুকে জানায়। তখনই তারা খুনের পরিকল্পনা করে, নিউমার্কেট থেকে একটি ছুরি কিনে আনে। গ্রেফতারের পর ওই তিনজন জানিয়েছে, ঘটনার দিন গত রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সজলের স্ত্রী চাকরিতে যাওয়ার পর সৈকতের ব্যবহৃত সাইকেলটি কেনার কথা বলে সল্টগোলায় তাদের বাসায় ঢোকে তারা। এক পর্যায়ে সাইকেল কেনা নিয়ে সজলের সঙ্গে তাদের বিতন্ডা হয়। এসময় জিকু তালা দিয়ে সজলের মাথায় আঘাত করে। সজল চিৎকার করলে প্রতীক মজুমদার তার মুখ চেপে ধরে এবং বাকি দুই জন গামছা দিয়ে তার পা বেঁধে ফেলে। পরে জয় বড়ুয়া তার কাছে থাকা ছুরি দিয়ে সজলের গলা কাটে। পিবিআই কর্মকর্তারা বলছেন তারা নৃশংসভাবে সজলকে খুনের পরও তাদের মধ্যে কোন অনুশোচনা নেই। তাদের বিরুদ্ধে আগে কোন অপরাধের রের্কড নেই। পরিবার ও প্রতিবেশিদের কাছেও তারা সাদাসিদে এবং ভাল ছাত্র হিসাবে পরিচিত।
গত ২১ মে রাতে নগরীর চান্দগাঁও থানার কামাল বাজার এলাকায় মোঃ আরাফাত নামে এক যুবককে অসংখ্য মানুষের সামনে গলা কেটে হত্যার পর লাশ ফেলে যাওয়া হয় রাস্তায়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে আরমান নমে একজন খুনের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়। পুলিশ জানায় আরমান কামাল বাজার এলাকার পপুলার জিমের তত্তাবধায়ক। নিহত আরাফাত ওই জিমে নিয়মিত ব্যায়াম করতেন। মহানগর হাকিম আদালতে জবানবন্দি দেয় আরমান। জবানবন্দিতে জিম খোলা নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে আরাফাতকে খুন করার কথা স্বীকার করে সে। এরআগে ২২ মে ভোরে মোহরা ইস্পাহানি শ্রমিক কলোনি থেকে আসিফ ও নূর হোসেন বাপ্পী নামের দুই জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা জানিয়েছে নিহত আরাফাত তাদের বন্ধু, ঝগড়ার জেরে খুনের ঘটনা ঘটে। পুলিশ বলছে ওই তিনজনের বিরুদ্ধে আগে অপরাধের কোন রের্কড নেই। তুচ্ছ ঘটনায় তারা নিজেদের বন্ধুকে গলা কেটে হত্যা করেছে।
গত রোববার রাতে নগরীর আকবর শাহ এলাকায় মোঃ সুজন নামে এক যুবককে ছুরিকাঘাতে খুনের ঘটনার প্রধান আসামি আলী হোসেনকে গ্রেফতার করে পিবিআই। আদাতে খুনের দায় স্বীকার করে সে। তার বড় ভাই নুরু এবং খুন হওয়া সুজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ভাই নুরুকে মারধর করতে দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে সুজনকে খুন করার কথা স্বীকার করে সে। আদালতে খুনের বিস্তারিত বর্ণনাও দেয় সে। পিবিআই কর্মকর্তারা বলছেন, বড় ভাই তার বন্ধুর সাথে মারামারি করছে এমন দৃশ্য দেখে উত্তেজিত হয়ে উঠে আলী হোসেন। এসময় রেগে গিয়ে আলী সুজনকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে।
নগরীর জামাল খান সড়কে স্কুল ছাত্র আদনান খুনের ঘটনায় গ্রেফতার পাঁচ কিশোরও খুনের বর্ণনা দিয়েছে। তারা জানিয়েছে বড়ভাইদের নির্দেশ পালন করতে আদনানকে খুন করে। সম্প্রতি নগরীর আরও কয়েকটি চাঞ্চল্যকর খুন ও অস্ত্রবাজির ঘটনায় কিশোরদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। অনেকে গ্রেফতারও হয়েছে। পুলিশ বলছে উঠতি এসব কিশোর-যুবকরা এতটায় বেপরোয়া যে তারা অপরাধ করেও বড় গলায় কথা বলছে। সামাজিক অস্থিরতা ও অবক্ষয়ের কারণে কিশোররা খুনসহ ভয়ঙ্কর অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। অনেকে অর্থের লোভে চুরি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে বলে মনে করেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।