Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

আনোয়ারার ইয়াবা গডফাদাররা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে

আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) থেকে জাহেদুল হক | প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইয়াবা রাজ্যে কক্সবাজারের পরেই চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপক‚ল বেশ আলোচিত। সারাদেশে মাদকবিরোধী অভিযান চললেও এ উপজেলার চিহ্নিত ইয়াবা গডফাদাররা অধরাই রয়ে গেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়ে গডফাদাররা আত্মগোপনে চলে গেছে। তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে পুরো উপজেলা। ছিঁচকে মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সেবনকারীদের ছাড়া তেমন উল্লেখযোগ্য কাউকে এখনও গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় প্রভাবশালী নেতার অধিক মুনাফা-বাণিজ্য ও পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ থাকায় বন্ধ হচ্ছে না মরণ নেশা ইয়াবার চোরাচালান। আর এ কারণে বরাবরই অধরা থাকছেন নেপথ্যে থাকা ইয়াবা চোরাচালান সিন্ডিকেটের মূলহোতারা। মাঝপথের সরবরাহকারী, খুচরা বিক্রেতা ও সেবনকারীরা গ্রেফতার হলেও দুর্বল মামলা বা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে তারাও বেরিয়ে যাচ্ছেন। এসব কারণে চোরাচালান বন্ধের বদলে উল্টো গ্রাম-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়ছে তারুণ্য ধ্বংসের এ হাতিয়ার। বিনিময়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন জড়িতরা। সূত্র জানায়, এ উপজেলার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী জাফর আহমদ ওরফে জাপ্পু ২০১৫ সালের ২৫ জুলাই র‌্যাবের সাথে বন্ধুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর ইয়াবা কারবারিরা কিছুদিন আত্মগোপনে চলে যায়। এরপর থানার তৎকালীন ওসি আবদুল লতিফের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেন ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। ২০১৬ সালের শেষের দিকে পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) দুলাল মাহমুদ থানায় যোগদানের পর থেকে বেশ কয়েকটি বড় বড় ইয়াবার চালান আটক করে আলোচনায় আসেন তিনি। এ সময় পুলিশের চারটি পৃথক অভিযানে ৬ লাখ ৩০ হাজার পিস ইয়াবাসহ কয়েকজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। এটিই ছিল থানা পুলিশের রেকর্ডে সবচেয়ে বড় চালান। তখন থেকে চিহ্নিত ইয়াবা গডফাদাররা এলাকা ছেড়ে কেউ কেউ শহরে আবার অনেকে বিদেশে চলে যায়। সেখান থেকেই তারা নিয়ন্ত্রণ করছে সর্বনাশা ইয়াবা চোরাচালান। আনোয়ারা থানার এএসআই রেজাউল করিম জানান, মাদকবিরোধী অভিযানে গত এক মাসে ১০৬৪ পিস ইয়াবা, ২২৭ লিটার চোলাই মদ ও ৩ কেজি একশ গ্রাম গাঁজাসহ ২০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এসব ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ১৯টি মামলা রুজু করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকা অনুযায়ী আনোয়ারায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে চিহ্নিত অর্ধশতাধিক গডফাদার। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আনোয়ারাসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। আনোয়ারার তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা কারবারির মধ্যে উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের খোর্দ্দ গহিরা গ্রামের আবু ছালাম ওরফে আবু, নুরুল ইসলাম ওরফে মনু, শেখ মোহাম্মদ, মো.ইউছুপ ওরফে কালা মনু, আবুল কাশেম ওরফে আবুল হাছি, আবদুচ ছবুর, আলমগীর ওরফে ডবল্ল্যা, নুরুল আজম ওরফে ডলি, সোলাইমান ওরফে মানু, মোহাম্মদ ওসমান, মোহাম্মদ সেলিম, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে ফড়ি জাহাঙ্গীর, খয়রাত আলী, মামুনুর রশিদ ওরফে ফু-মামুন, নুরুল আলম, ইদ্রিস ওরফে কালাইয়া, সামশুল আলম, মোহাম্মদ মুছা, জামাল উদ্দিন, তাজু, মনসুর, জসিম উদ্দিন, মোহাম্মদ সেলিম, মিন্টু, কামাল উদ্দিন,আবদুচ সোবহান। দক্ষিণ পরুয়াপাড়ার নুর ছৈয়দ, আহমদ নবী, হোসেন ওরফে বাঁশি, ইব্রাহিম ওরফে সুরুত, আবদুচ ছাত্তার, জসিম উদ্দিন, সফি ওরফে লাম্বু। উত্তর পরুয়াপাড়ার মোহাম্মদ জাফর, আনোয়ার, আজগর আলী। পশ্চিম রায়পুরের আবদুল জলিল ওরফে নূন জলিল, মোজাহের, আবদুন নুর, মো.বাবু, মো.ওসমান, নওশা মিয়া মেম্বার, মোহাম্মদ ইলিয়াছ, ইউনুছ, আবদুল মালেক ওরফে গরু মালেক, আবদুল খালেক, মাহমুদুল হক, সোলাইমান। দক্ষিণ গহিরার কফিল উদ্দিন, মো.সরোয়ার, আবদুল মজিদ, জহির ওরফে জকু মাঝি। মধ্য গহিরার আবুল ফয়েজ, শফিকুর রহমান, মো.লোকমান, মো.সেলিম, আবদুর রহিম, নুরুল ইসলাম, মো.নাছির। পূর্ব গহিরার নুরুল হক ওরফে সোর্স নুরু, মোজাহের। চুন্নাপাড়ার আবদুল জব্বার ওরফে পট্টিবদ, মুকাররম। হাজীপাড়ার নাছির উদ্দিন। বারশত ইউনিয়নের দুধকুমড়া গ্রামের জালাল উদ্দিন, ইউছুপ, আবদুর রহিম, সেলিম ওরফে কুত্তা সেলিম, এরফান। বটতলীর ইউপি সদস্য দিদারুল আলম। বরুমচড়া ইউনিয়নের বø্যাকার আনোয়ার। এরা সমাজস্বীকৃত ও তালিকায় থাকা পরেও নিরাপরাধীর মতো প্রশাসনের চশমার সামনে চলাফেরা থেকে শুরু করে মাদক ব্যবসাও ঠিকঠাক চালিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হলেও প্রশাসন বলছে, এসব মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে তারা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। এ ব্যাপারে আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদ ইনকিলাবকে জানান, শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী কিছু গ্রেফতার হলেও বাকীরা এলাকায় না থাকায় গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। তবে মাদক নির্মূলে পুলিশের নিত্য অভিযান চলছে। যে কোন মূল্যে মাদক ব্যবসা নির্মূল করার দৃঢ়তা ব্যক্ত করলেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইয়াবা

১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ