Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভিযানের খবর রাখছেন মাদক ব্যবসায়ীরা! তবুও থেমে নেই কুমিল্লায় মাদক ব্যবসা

| প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল, চান্দিনা থেকে : মাদক ব্যবসায়ীরা এখন মাদকদ্রব্য সরাতে ব্যস্ত। একই সঙ্গে আত্মগোপনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা। সারাদেশেরে ন্যায় কুমিল্লায়ও মাদক বিরোধি অভিযানে নেমেছে পুলিশ। তবে কুমিল্ল­ায় গত কয়েক দিনের বন্দুকযুদ্ধে ১২ জন মাদক বিক্রেতা মারা গেলেও, থেমে নেই মাদক বেচাকেনা। অবাধে মাদক ব্যবসা চলছে জমজমাট। সাধারণ মানুষের অরক্ষিত এলাকায় মাদক এর আস্তানায় বেড়েছে উঠতি বয়সী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশাদার মানুষ। পুলিশ প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে চলছে মাদকদ্রব্যের আমদানী ও রপ্তানী। তবে মাঝে মাঝে ধরাও পড়ছে পুলিশের অভিযানে। গতকাল মঙলবার ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনা উপজেলার বাগুর বাসস্টেশনে থেকে ২৮ বোতল ফেনসিডিলসহ জোসনা বেগম (২৫) নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়াও গত ২৮ মে এক কেজি গাঁজাসহ মোঃ রেজাউল নামের এক ব্যক্তিকে তিতাস থানা পুলিশ আটক করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৮ মাসের সাজা প্রদান করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ২৭ মে কুমিল্লার পেন্নাই গ্রামের হুমায়নের পুত্র জহিরুল ইসলামকে ৬৫ পিছ ইয়াবাসহ গ্রেফতার করেন। ২৬ মে দাউদকান্দি থানার ভিকতলা গ্রামের মোঃ মহসিন মিয়ার পুত্র নাদিম হোসেন নাজিম (১৮) কে ৩৮ পিছ ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়। ২৫ মে দাউদকান্দির মালীগাওঁ গ্রামের সামছুদ্দোহাকে ৬৯ পিছ ইয়াবাসহ ট্যাবলেটসহ গ্রেফতার করে গৌরীপুর ফাঁড়ি পুলিশ। ২৩ মে দাউদকান্দি মডেল থানাধীন বাসরা গ্রামের আল আমিন (২৮) কে ৫০ পিছ ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়। ২২ মে গৌরীপুরের পেন্নাই গ্রামের সোহাগ (৩২) নামের এক যুবক ৫৭ পিছ ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার করে। ২০ মে কুমিল্লার তিতাস থানার বন্দরামপুর গ্রামের আল আমিন ও উত্তর আকালিয়া গ্রামের আসিফ দুই জনের কাছ থেকে ৫ হাজার পিছ ইয়াবা দাউদকান্দি মডেল থানায় পুলিশ গ্রেফতার করে। তারা জানায় টেকনাফ হতে ইয়াবা ক্রয় করে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক হয়ে কুমিল্লায় আসছিলেন। তবে এইসব ছোট ছোট মাদক ব্যবসায়ীরা ধরা পড়লেও বড় বড় মাদকব্যবসায়ী নামধারীরা ধরা না পড়ায় থেমে নেই কুমিল্লার মাদক ব্যাবসা যেন থলের ভিতর লুকিয়ে আছে প্রধান বিড়াল। প্রধান বিড়ালরা এখন ইয়াবা গাঁজাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে ব্যস্ত রয়েছে। সূত্র জানায়, মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কতিপয় পুলিশ সদস্যের গোপন আঁতাত রয়েছে। মাসিক চুক্তিতে তারা মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোহারা নিয়ে থাকেন। এদের মাধ্যমেই সব খবর আগেভাগেই পৌঁছে যায় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে। মাদক ব্যবসায়ীরা আগেই বিশেষ অভিযানের খবর পেয়ে গেছে। খবর পেয়ে তারা ইতিমধ্যে গুছিয়ে ফেলেছে। মালপত্রও সরিয়ে ফেলেছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে গা-ঢাকা দিতে হলে সে ব্যবস্থাও করে রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে সহকারি পুলিশ সুপার (চান্দিনা-দাউদকান্দি সার্কেল) মো.মহিদুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাব বলেন, অভিযানের সাফল্যের ব্যাপারে তারা আশাবাদী। মাদক ব্যবসায়ীদের অভিযানের খবর আগেভাগেই জেনে যাওয়া প্রসঙ্গে পুলিশের ত্তই কর্মকর্তা বলেন জানলেও তারা পুলিশের জাল থেকে বের হতে পারবে না। পুলিশ অভিযানের ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক। সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নামবে পুলিশ। তারা এ অভিযানের ব্যাপারে সবার সহযোগিতা কামনা করেন। এদিকে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার পরও কুমিল্লায় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে পার পেয়ে যাচ্ছে মহিলা মাদক পাচারকারীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েও সুকৌশলে একাধিক নাম ব্যবহার করে পাচাকারী মহিলারা পাড় পেয়ে গিয়ে আবার জড়িয়ে পড়ছেন মাদক পাচারে। বিগতদিনে পুলিশের হাতে মাদকসহ আটক মহিলাদের এমন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। নাম ঠিকানা ভূল থাকায় আদালত মহিলা পাচারকারীদের কম সময়ে জামিন নিয়ে তারা আবার মাদক পাচার শুরু করে। ঢাকা চট্রগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন কায়দায় মহিলারা মাদক পাচার করে বিভিন্ন জেলা শহরের প্রধান প্রধান ব্যবসায়ীদের কাছে পৌছে দিয়ে খুচরা বিকি কিনি ও জেলার এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় এই মাদক বিক্রি ও সরবরাহ কাজে রয়েছেন নারীরা। অভাবী ঘরের এ মানুষ গুলো মাঝে মধ্যে ধরা পড়লেও প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীরা থেকে যাচ্ছে ধরা ছুয়ার বাইরে। একটি প্রভাবশালী মহল সমাজের হতদরিদ্র মহিলাদের বেছে নিয়ে এ কাজ করাছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল ২৯ মে মঙলবার ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনা উপজেলার বাগুর বাস ষ্টেশনে ২৮ বোতল ফেনসিডিলসহ জোসনা বেগম (২৫) নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত জোসনা জানায়, কুমিল্লার শুয়াগাজী থেকে তারা ঢাকায় পৌছে দেওয়ার কথা ছিল বলে জানায়। তিনি অভাবের তাড়ানায় মাদক পাচারে লিপ্ত হয়েছেন বলে জানায় সাংবাদিকদের জানান। এ বিষয়ে জানতে সহকারি পুলিশ সুপার মো.মহিদুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাব বলেন, মহিলা মাদক পাচারকারীরা সঠিক ঠিকানা ব্যবহার না করায় মামলা তদন্ত ও অভিযোগপত্র গঠনে জটিলতার সৃষ্টি হয়। পরে আদালতের ওয়ারেন্টমূলে আসামী গ্রেফতারে পুলিশকে হয়রানীর স্বীকার হতে হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ