Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চৌদ্দগ্রামে রফতানিমুখী জুতা ফ্যাক্টরির গুদামে রহস্যজনক আগুন

| প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সংবাদদাতা : ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা ঋণ, শ্রমিকদের বেতন ও ঈদ বোনাস না দিতে এবং ইন্স্যুরেন্স থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা ক্ষতিপূরণ পেতে রহস্যজনক আগুনের ঘটনা ঘটেছে জিল ওয়ারস্ নামের একটি রপ্তানীমুখী জুতা ফ্যাক্টরীর গুদামে। এমন অভিযোগ করেছেন কারখানায় কর্মরত শ্রমিক ও বিভিন্ন সুত্র। প্রায় ১৫ ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে সোমবার সকালে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন নানকরা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আগুনে মালামাল পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় রোববার রাতেই চৌদ্দগ্রাম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে কারখানার নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা অভিযোগ করে বলেন, আগে আমরা প্রতিদিন ওভার টাইম করতে হতো। ওভার টাইম কাজ না করলে শ্রমিকদের ছাটাই করে দেয়া হতো। কিন্তু রমজানের কয়েকদিন আগে থেকে কোন প্রকার ঘোষণা ছাড়াই ওভার টাইম কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। এরই মধ্যে বিভিন্ন অনিয়ম ও ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে একটি গোডাউন সিলগালা করেন কাস্টমস্ কর্তৃপক্ষ। কয়েকদিন আগে থেকে শ্রমিকদের বেতন ও ঈদ বোনাস না দেয়ার হুমকি দেয় কারখানার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে ভবনের ৬ষ্ঠ তলায় কোন ধরনের বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকলেও আগুন লাগার ঘটনায় ব্যাপক রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।শুধু তাই নয় এর তিনদিন কারখানার প্রায় ২১ লাখ টাকার বিদূৎএর বকেয়া বিলের কারনে পল্লি বিদুৎ-২ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। বিষয়টা স্বিকার করেছেন পল্লী বিদুৎ চৌদ্দগ্রাম শাখা। বকেয়া বিল পরিশোধ করার পর গতকাল মঙ্গলবার সংযোগ দেওয়া হয়। এছাড়াও ওই ভবনে বিদুৎ এর কোন অস্তিত নেই সেখানে ৬ষ্ঠ তলায আগুন লাগলো কিভাবে?
অনেকে জানান, রোববার দেড়টার দিকে আগুনের ঘটনা ঘটলেও রহস্যজনকভাবে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হয় বিকেল ৩টার দিকে। এনিয়ে শ্রমিক ও স্থানীয় জনগণের মাঝে নানা প্রশ্নের দেখা দিয়েছে। এজন্য ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যে ঘটনাস্থলে যাওয়া সাংবাদিকদের কাউকে ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। কারণ-তারা ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে ফেলবে। দীর্ঘক্ষণ পর পুলিশের সহায়তায় সাংবাদিকরা ভিতরে প্রবেশ করে। চৌদ্দগ্রাম থানায় দায়েরকৃত সাধারণ ডায়েরীতে ফ্যাক্টরীর ম্যানেজার শের বাহাদুর রহমান উল্লেখ করেন, ফ্যাক্টরীর ভবনের ৬ষ্ঠ তলায় রোববার বিকেল ৩টায় আগুনের সুত্রপাত ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের চৌদ্দগ্রামের ১টি ইউনিট আগুনে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। ততক্ষণে আগুনের লেলিহান শিখা সারা ফ্লোরে ছড়িয়ে যায়। পরবর্তীতে কুমিল্লা, ফেনী ও চট্টগ্রাম থেকে আরও ছয়টি ইউনিটের ১৫টি গাড়ি আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা চালায়। দীর্ঘ ১৫ ঘন্টা চেষ্টা চালানোর পর সোমবার সকালে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে দুই লাখ চুয়াত্তর হাজার ফেয়ার তৈরিকৃত জুতা আগুনে পুড়ে যায়। এতে প্রায় ১৭ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সোমবার সকালে ফ্যাক্টরি ম্যানেজার শের বাহাদুরের নেতৃত্বে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ৩ সদস্য বিশিষ্ট পৃথক কমিটি গঠনা করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রাম বিভাগের মিডিয়া সেলের পরিচালক মোঃ জসিম উদ্দিন জানান, চট্টগ্রামের উপ পরিচালকের নেতৃত্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগুনের সুত্রপাত বা কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা এ মুহুর্তে বলা সম্ভব নয়। তবে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে তিনি জানান।এদিকে চৌদ্দগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল ফয়সল জানান, খবর পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার চৌদ্দগ্রাম সার্কেল মোঃ সাইফুল ইসলাম নেতৃত্বে তাৎক্ষণিকভাবে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মানুষজনকে নিরাপদ দুরত্বে নিয়ে আসি। এবিষয়ে ফ্যাক্টরীর পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ