Inqilab Logo

সোমবার, ২৭ মে ২০২৪, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে হাজারো প্রশ্ন : ইউজিসি’র একচোখা নীতি

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি ততবেশি উন্নত। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সীমিত হওয়ায় দেশে বেসরকারি পর্যায়ে গড়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়। এই সুযোগে রাজনৈতিক সুবিধায় অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। দেশের উচ্চ শিক্ষা দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ওই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ, শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষার মান, আয়-ব্যায়সহ যাবতীয় বিষয়াদি দেখভালের দায়িত্ব ইউজিসি’র। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি যেন হয়ে পড়েছে মেরুদন্ডহীন। কেউ কেউ নাম দিয়েছেন ‘ম্যানেজ মাষ্টার’। চেয়ারমান পদে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেয়ায় প্রতিষ্ঠানটির কাজকর্মে ‘একচোখা নীতি’ গ্রহণে অভ্যস্ত। মূল ব্যাক্তি সরকারের তোয়াজনীতিতে ব্যস্ত থাকায় উচ্চ শিক্ষার মান দেখভালের চেয়ে স্বজনপ্রীতিই সেখানে হয়ে ওঠে আসল নীতি। মাঝে মাঝে বিজ্ঞপ্তি, গণবিজ্ঞন্তি দেয়া হয় বটে; সেগুলো নিয়েও বিতর্ক উঠছে। ১৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যাপারে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ২২ মে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সরকার বন্ধ করে দিয়েছে; কয়েকটির মালিকানা নিয়ে মামলা চলছে; কয়েকটির ক্যাম্পাস অনুমোদিত নয় এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতিই নেই। এছাড়া বাংলাদেশে এখনও কোনো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা, ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়নি। এ তথ্য জানিয়ে কোনো বিদেশি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে প্রতারণার শিকার না হতেও শিক্ষার্থীদের সতর্ক করেছে ইউজিসি। মূলত প্রতিবছর এইচএসসি পরীক্ষার পর এধরণের একটি করে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিজেদের দায় সেরে নেয় মঞ্জুরি কমিশন। প্রতিবারই রাঘব বোয়ালদের বাদ দিয়ে কেবল চুনোপুঁটিদের নামে অভিযোগ দিয়ে এবং সেগুলোতে ভর্তির সতর্কতা দিয়ে হাক-ডাক ছাড়ে উচ্চ শিক্ষার নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটি। এবার গত ২২ মে যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খোদ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিতেই। রাঘব বোয়ালদের বাদ দিয়ে চুনোপুঁটিদের অভিযুক্ত করায় বির্তকের মুখে পড়েছে মঞ্জুরি কমিশন। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকরাও প্রশ্ন তুলেছেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়ার কারণে গত ফেব্রæয়ারি মাসে বেসরকারি ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়কে শোকজ এবং এদের মধ্যে ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসের কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় সেগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি’র সর্বোচ্চ পর্যায়ে বৈঠকে। কিন্তু সম্প্রতি দেয়া ইউজিসি’র গণবিজ্ঞপ্তিতে এ ১২টি মধ্যে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেই। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হলে তাদের ভবিষ্যৎ কি তার ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। এটা নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি’র মধ্যে। সূত্র জানিয়েছে, এ গণবিজ্ঞপ্তি চ‚ড়ান্ত হওয়ার পর সে তালিকা চলে যায় অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে। এরপর ইউজিসি’র চেয়ারম্যানের টেবিলের এক সপ্তাহ আটকে থাকার পর অনেক প্রভাবশালী বিশ্ববিদ্যালয়ের নামও সেখান থেকে উধাও হয়ে যায়। অভিযুক্ত না হওয়ার পরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নতুন করে ঢুকানো হয়। যাদের বিরুদ্ধে আউটার ক্যাম্পাস চালানোর কোনো অভিযোগ নেই। অথচ রাজধানীতে প্রকাশ্যে আউটার ক্যাম্পাস চালিয়ে সনদ বাণিজ্য করার অভিযোগ থাকলেও এদের নাম তালিকায় আসেনি। এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। এ শাখার একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত ছিল অভিযুক্ত সবার বিরুদ্ধে গণহারে সর্তক করে গণবিজ্ঞপ্তি দেয়ার। কিন্তু ইউজিসি তা না করে নামসর্বস্ব কিছু বিশ্ববিদ্যালয়কে সতর্ক করলে রাঘববোয়ালদের ছাড় দিয়েছে। এটাকে আমি ম্যানেজ বিজ্ঞপ্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বিজ্ঞপ্তির ব্যাপারে ইউজিসি’র চেয়ারম্যানের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট শাখার উপ-পরিচালক জেসমিন পারভীন বলেন, এ ব্যাপারে কথা বলার এখতিয়ার কেবল চেয়ারম্যান স্যারের। গত ২২ মে ইউজিসি’র গণবিজ্ঞপ্তিতে ১৪ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে সতর্কতা জারি করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মালিকানা দ্ব›দ্ব, অনুমোদন না নিয়ে ক্যাম্পাস চালানো এবং সরকার বন্ধ করার পর কোর্টের আদেশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার অভিযোগ আনা হয়। সতর্ক জারি করা ১৪ বিশ্ববিদ্যালয়: ইউজিসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইবাইস ইউনিভার্সিটি, ট্রাস্টি বোর্ড দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক মামলা করেছে। দ্ব›দ্ব নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পদক্ষেপের বিষয়েও একটি গ্রুপ আদালতে মামলা করে ওই পদক্ষেপের বিষয়ে স্থগিতাদেশ পেয়েছে। আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ২০০৬ সালের ২২ অক্টোবর এই বিশ্ববিদ্যালয় সরকার বন্ধ করে দেয়। পরে আদালতে রিট আবেদন করে স্থগিতাদেশ নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্র্বর্তীকালীন রায়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫, কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, অষ্টম তলা, বনানী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৫৪/১ প্রগতি স্মরণী, বারিধারা, নর্দ্দা, পুলিশ স্টেশন, গুলশানের ঠিকানা অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু ওই ঠিকানার ক্যাম্পাস পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা, ২০০৬ সালের ২২ অক্টোবর এই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয় সরকার। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট আবেদন করলে কোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে রায় দেয়। পরে গত ৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালুর অনুমতি দেয়। সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, আদালতের রায় অনুযায়ী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩৯, মেহেদীবাগ, চট্টগ্রাম এবং ২২ শহীদ মির্জালেন চট্টগ্রামে ক্যাম্পাস ছাড়া অন্য সব ক্যাম্পাস অবৈধ হওয়ায় অবৈধ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখতে ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর ইউজিসিকে নির্দেশনা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই বছর ১৩ ডিসেম্বর ইউজিসি ওই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে শিক্ষার্থী ভর্তি না করাতে চিঠি দেয়। ইউজিসির এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রিট করলে আদালত ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দেয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে দুটি মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে। গণ বিশ্ববিদ্যালয়, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অননুমোদিত প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়ার জন্য কমিশন ২০১৭ সালের ২৬ এপ্রিল পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে রিট করলে ২০১৭ সালের ২৯ মে আদালত গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ, ইনভায়রনমেন্ট সায়েন্স, এমবিবিএস, বিডিএস এবং ফিজিওথেরাপি প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি আমলে নিতে ইউজিসিকে নির্দেশনা দেয়। দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, আদালতের আদেশে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর সব আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কুইন্স ইউনিভার্সিটি, সরকার এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ করে দিলেও ২০১৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর শর্ত সাপেক্ষে এক বছরের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেয়। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। ৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের অননুমোদিত ক্যাম্পাস: ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ফয়জ লেক, খুলশী, চট্টগ্রামের ক্যাম্পাসকে অনুমোদিত স্থায়ী ক্যাম্পাস জানিয়ে ইউজিসি বলছে, ধানমন্ডির ৬৩ সেন্ট্রাল রোডে বিশ্ববিদ্যালয়টির অননুমোদিত ক্যাম্পাস আছে। গত ১৫ মে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক চিঠিতে অননুমোদিত ক্যাম্পাস বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে। দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের অনুমোদিত স্থায়ী ক্যাম্পাস সৃষ্টিগড়, শিবপুর, নরসিংদী এবং অস্থায়ী ক্যাম্পাসের ঠিকানা- ৩/২ ব্লক-এ, আসাদ এভিনিউ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। ঢাকার উত্তরার আব্দুল্লাহপুরে বিশ্ববিদ্যালয়টির অননুমোদিত একটি ক্যাম্পাস আছে। ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়ার অনুমোদিত অস্থায়ী ক্যাম্পাস বাড়ি ৭৬-৭৭, রোড ১৪, ব্লক-বি, বনানী, ঢাকা। তবে বাড়ি-৭২, রোড-১৭, ব্লক-সি, বনানী, ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টির একটি অননুমোদিত ক্যাম্পাস আছে। অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যালয়ের অনুমোদিত স্থায়ী ক্যাম্পাসের ঠিকানা প্লট-২০১, সেক্টর-১৫, খানটেক, উত্তরা, ঢাকা। এই বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকার উত্তরায় ১২ নম্বর সেক্টরের বাড়ি-৫১, শাহ মখদুম রোড এবং বাড়ি-০২, সোনারগাঁও রোডে দুটি অননুমোদিত ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে। ট্রাস্টি বোর্ড নিয়ে দ্ব›দ্ব-মামলা: ঢাকার ইবাইস ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, কুমিল্লার ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি ও সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ড নিয়ে দ্ব›দ্ব এবং আদালতে মামলা বিচারাধীন। বিজ্ঞপ্তি নিয়ে প্রশ্ন: তবে অনুমোদনহীন ক্যাম্পাস নিয়ে ঘাপলা পাকিয়েছে ইউজিসি নিজেই। সেখানে বলা হয়, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির চট্টগ্রামের ক্যাম্পাসের বাইরে ধানমন্ডির ৬৩ সেন্ট্রাল রোডে বিশ্ববিদ্যালয়টির অনুমোদিত ক্যাম্পাস আছে বলে জানানো হয়। কিন্তু গত ১৫ মে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত ক্যাম্পাস বন্ধ করা হয়েছে ইউজিসিকে জানানো পরও তাদের নামে সর্তকতা জারি করেছে। দি পিপল্স ইউনিভার্সিটি রাজধানীর আসাদ এভিনিউর বাইরে উত্তরার আবদুল্লাহপুরে বিশ্ববিদ্যালয়টির অননুমোদিত একটি ক্যাম্পাস ২০১৫ সালে বন্ধ করার পরও এখন এ ক্যাম্পাসের নামে সর্তকতা জারি করে আসছে। ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়ার অনুমোদিত ক্যাম্পাস বনানীর ১৪ নং রোডের ৭৬-৭৭ নং বাড়ি। পাশেই ১৭ নং রোডের ৭২ নং বাড়িতে ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির বিভাগ ও ল্যাব চালুর অনুমতি রয়েছে ২০১৬ সাল থেকে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিকে এ অনুমতি চিঠি আলাদাভাবে দেয়ার পরও একটি বিভাগের ভবনকে অনুমোদনহীন ক্যাম্পাস বলে বিজ্ঞপ্তিতে চালিয়ে দিয়েছে ইউজিসি। ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়ার সহকারী রেজিস্ট্রার জুয়েল ইসলাম বলেন, অনুমোদিত ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের জায়গা সংকুলান না হওয়া ওই বাড়ি ভাড়া করা হয়। সেখানে কোন ধরনের ভর্তি তো দূরের কথা শিক্ষক ও আমাদের কোনো স্টাফ অবস্থান করেন না। এটাকে আউটার ক্যাম্পাস কীভাবে বললো ইউজিসি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিকে এ বাড়ি ভাড়ার বিষয়টি অবগত করে ২০১৬ সালে অনুমতি নেয়া হয়েছে। তারপরও প্রতিবছর কোনো কারণ ছাড়াই এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, রাজধানীর শুক্রবাদ এলাকায় মার্কেট দখল করে এবং ডজনখানেক ভাড়াবাড়িতে কার্যক্রম চালাচ্ছে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি। তারা স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার দাবি করলেও বেশির ভাগ কার্যক্রম ভাড়াবাড়িতেই চলছে। শুধু তাই নয়, স্থায়ী ক্যাম্পাসে প্রোগ্রাম চালানোর কথা বলে অনুমতি নিয়ে তা ভাড়াবাড়িতে ভর্তি নেয়া হচ্ছে। আর উত্তরাতে রয়েছে আরেকটি ক্যাম্পাস। যেখানে প্রকাশে ছাত্র ভর্তি করানো হয়। রাজধানীর বসুন্ধরা শপিংমল সংলগ্ন সিটি ক্যাম্পাস চালাচ্ছে সিটি ইউনিভার্সিটি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী ক্যাম্পাস সাভারের হলেও এখানে ভর্তি থেকে শুরু করে সব কার্যক্রম চলে। এ ক্যাম্পাসের অনুমোদন না থাকায় সরজমিন পরিদর্শনে আসেন সাবেক একজন শিক্ষাসচিব। ভর্তি থেকে শুরু করে সব কার্যক্রম পরিচালনায় হওয়ায় এটা বন্ধ করার জন্য বলা হয় ইউজিসিকে। তিন বছরের বেশি সময় হওয়ার পরও তা বন্ধ হয়নি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা ক্ষমতাসীন দলের একজন নেতার। রাজধানীর বনানীতে মূল ক্যাম্পাস হলেও ফার্মগেট ও নিউমার্কেট এলাকায় আরেকটি ক্যাম্পাস চালাচ্ছে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়। দুই জায়গায় চলে ভর্তি কার্যক্রম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক এটির মালিক হলেও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পরিষদের একজন রয়েছেন এর পিছনে। ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ধানমন্ডির ৩ নম্বর রোডের ১৫/২ নম্বর বাড়িতে পরিচালনার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু তারা রাজধানীর আরও ডজনখানেক ঠিকানায় ক্যাম্পাস খুলে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। এসব ক্যাম্পাসের কোনোটিই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদিত নয়। আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি (এআইইউবি) একইভাবে ৫টির বেশি অবৈধ ক্যাম্পাস চালাচ্ছে রাজধানীতে। ৩ বছর আগে অনুমোদন পাওয়া সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির মহাখালীর একটি ঠিকানায় ক্যাম্পাস অনুমোদন দেয়া হলেও কারওয়ান বাজারের ৭১ নং বাড়িতে অনুমোদন ছাড়াই শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। যারা পাশেই মাছের আড়ৎ। স্বাভাবিকভাবে এ রাস্তা দিয়ে হাঁটা যায় না। সেখানে দিব্যি শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে তারা। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাবেক একজন সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান একজন মন্ত্রী জড়িত। শান্তা মারিয়াম ইউনিভার্সিটি রাজধানীর উত্তরায় অনুমোদন ছাড়াই একাধিক ক্যাম্পাস চালাচ্ছে। একই ধরনের অনিয়ম করছে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি। আরও বেশ কয়েকটি ভালো ও মধ্যম মানের দাবিদার বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য ক্যাম্পাস রয়েছে যা ইউজিসি’র অনুমোদিত নেই। কিন্তু ইউজিসি’র নজরে নেই এসব ক্যাম্পাস। সমপ্রতি ইউজিসি প্রকাশিত বৈধ ও অবৈধ ক্যাম্পাস সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকদের সংগঠনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, আইন সবার জন্য সমান হওয়ার উচিত। এ বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিকে একাধিকবার আমরা বলেছি। কিন্তু বরাবরই তারা দ্বিমুখী আচরণ করেন। এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, যারা আইন মানবে তাদের ব্যাপারে আমরা কঠোর হবো। তার আগে তাদের কাছ থেকে ব্যাখা চাওয়া হবে যে, কেন তারা (কর্তৃপক্ষ) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও আইনের বিধান কেন প্রতিপালন করেনি। কেউ অন্যায় না করলেও তাকে কেন সতর্কতামূলক নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার নজরে আসেনি।



 

Show all comments
  • পাবেল ২৭ মে, ২০১৮, ২:৩৮ এএম says : 0
    শিক্ষা যেন পণ্যে পরিণত না হয় সেদিকে সকলকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • বুলবুল আহমেদ ২৭ মে, ২০১৮, ২:৪০ এএম says : 0
    শিক্ষা নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে
    Total Reply(0) Reply
  • তামান্না ২৭ মে, ২০১৮, ২:৪১ এএম says : 0
    নিউজটি করার জন্য ফারুক হোসাইনকে অসংখ্য ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বেসরকারি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ