পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মাদক বাণিজ্যের কালো থাবায় ফোকলা হয়ে পড়েছে রূপগঞ্জের অর্থনীতি। বিভিন্ন সমীক্ষালব্ধ তথ্য থেকে জানা যায়, উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজার মাদকসেবী রয়েছে। বছরে এসব মাদকসেবীদের অপচয় হয় প্রায় শতকোটি টাকা। রূপগঞ্জে মাদকের স্পট রয়েছে ৩’শর উপরে। এর মধ্যে চনপাড়া পূর্নবাসনে মাদক স্পট রয়েছে এক’শর উপড়ে। আর মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে প্রায় ৪’শ। খুচরা ব্যবসায়ী রয়েছে প্রায় ১২’শ। শটকাট ফূর্মলায় বড়লোক হওয়ার আশায় অনেক তরুণ ও নারীরা এ পেশায় ঝুকছে। মরণ নেশা গাজা, হেরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিল, আইসপিল, টিডিজেসিক ও লুপিজেসিক ইনজেকশন নানা ধরণের নেশায় সয়লাব হয়ে গেছে রূপগঞ্জ। এসব মাদকের বিষাক্ত ছোবলে হাজার হাজার তরুণের জীবন বিপন্ন। মাদক সেবন করে মাদকাসক্তরা চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও খুনসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। গত এক দশকে মাদক সংক্রান্ত ঘটনায় ৬ ব্যক্তি খুন হয়েছেন। এছাড়া সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে প্রায় ৫’শতাধিক। মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত চুনোপুটিরা ধরা পড়লেও রাঘবোয়ালরা থেকে যায় ধরা ছোয়ার বাইরে। সব সরকারের আমলেই এরা বহালতবিয়তে মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছে। রূপগঞ্জে মাদকের জাল বিস্তার হচ্ছে। এ উপজেলার ১২৮ টি গ্রামের মধ্যে একশ’ ১২ টি গ্রামেই মাদক ব্যবসা চলছে।
যাদের নিয়ন্ত্রণে মাদক : পুলিশ, এলাকাবাসী, মাদকসেবীদের দেওয়া তথ্য ও এলাকায় অনুসন্ধানে চালিয়ে জানা যায়, নয়ামাটি এলাকার মৃত হবুল্লার ছেলে কবির হোসেন, নগরপাড়া এলাকার মৃত তাফাজউদ্দিনের ছেলে মিতু মিয়া, রাতালদিয়া এলাকার রহমান আলীর স্ত্রী ছলে বেগম, সাওঘাট এলাকার মৃত উকিলউদ্দিন ভূইয়ার ছেলে মোশারফ হোসেন রঞ্জু, দরিকান্দি এলাকার পোশানির ছেলে মজিবুর রহমান, মাছিমপুর এলাকার আঃ সালামের ছেলে জসিম, আঃ মজিদের ছেলে পরদেশী সফিক, রূপগঞ্জ থানার পাশের নিলু ফকিরের ছেলে জুয়েল, রূপসী ¯øুইচগেট এলাকার চান্দু ফকিরের ছেলে জামাল-কামাল, মাছিমপুর এলাকার আকছারউদ্দিনের ছেলে তাওলাদ, চনপাড়া এলাকার বাদশা মিয়ার ছেলে ফেন্সি ফারুক, খোয়াজ বক্স হাওলাদারের ছেলে শাহআলম, কালাদি এলাকার সোলায়মান মিয়ার ছেলে আমানউল্লাহ, সিদ্দিক মিয়ার ছেলে আলতাফ হোসেন, আতলাশপুর এলাকার ফারুক মোল্লার ছেলে নিশাত মোল্লা, হাটাবো টেকপাড়া এলাকার আঃ হেকিমের ছেলে মিলন, তারাব হাটিপাড়া এলাকার ফিরোজ মিয়ার ছেলে আতিকুর রহমান, আক্কাস আলীর ছেলে সোহেল মিয়া, মধুখালী এলাকার ছাদেক মিয়ার ছেলে আবুল কসাই, গোয়ালপাড়া এলাকার নুরমোহাম্মদের ছেলে শফিকুল, ছনি এলাকার আমির হোসেনের ছেলে শামীম, গর্ন্ধবপুর এলাকার ফারুক মিয়ার স্ত্রী জাহানারা বেগম, আব্দুল হকের ছেলে আব্দুল সামাদ মিয়া, কাজেম মিয়ার ছেলে শরীফ মিয়া, ছফুল উদ্দিনের ছেলে ফারুক মিয়া, কামশাইর এলাকার হাবিবুল্লাহ মোল্লার ছেলে মিন্টু মোল্লা, তারাব হাটিপাড়া এলাকায় মাদক সম্রাট ফরিদ, দক্ষিন মাসাবো এলাকায় মহসিন, বরপা এলাকায় রুহুল সিকদারের পুত্র সাইফুদ্দিন, তোবারকের পুত্র নাহিদ ও তানভীর, লতিফের ছেলে অহিদ, সহিদ, মিজানের পুত্র শাহিন সহ আরো অনেকে। এরা সবাই মাদকের ডিলার। কেউ ইয়াবা, কেউ ফেনসিডিল, কেউ হেরোইন আবার কেউবা গাজার পাইকারী ব্যবসায়ী।
যেসব রুট দিয়ে আসছে : অনুসন্ধানে জানা যায়, রূপগঞ্জে সড়ক ও নৌপথে অবাধে মাদকদ্রব্য আসে বলে জানায় পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কয়েকজন কর্মকর্তা। মাদক প্রবেশের সবচেয়ে নিরাপদ রুট হচ্ছে বালু নদ। এ নদে পুলিশ টহলের ব্যবস্থা না থাকায় মাদকব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে ইঞ্চিনচালিত ট্রলারযোগে মাদক আনা-নেওয়া করে। এছাড়া শীতলক্ষ্যা নদ দিয়েও মাদকদ্রব্য রূপগঞ্জে ঢুকে। এ নদ দিয়ে পণ্যবাহী জাহাজে করে মাদক ঢুকে রূপগঞ্জে। এদিকে, এশিয়ান হাইওয়ে সড়ক দিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে কুমিল্লা থেকে মাদক ঢুকে রূপগঞ্জে। আশুগঞ্জ-ব্রাহ্মবাড়িয়া থেকেও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে মাদক ঢুকে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতা হচ্ছে মাদকের ট্রানজিট পয়েন্ট। আখাউড়া , সিলেট ও ব্রাক্ষণবাড়িয়া থেকে ফেনসিডিল, ইয়াবা ও হেরোইন বাস, নাইট কোচ, সংবাদপত্রবহনকারী মোটরসাইকেল কিংবা ট্রাকযোগে উক্ত এলাকায় আসে।
পাচারের নানা কৌশল : পুলিশ ও মাদক ব্যবসায়ীদের ঘনিষ্ট কয়েকটি সূত্র জানায়, মাদকব্যবসায়ীরা নানা কৌশলে মাদক বহন করে থাকে। সূত্রটি জানায়, ইয়াবা ও ফেনসিডিল বহন করা হয় লাউ, নারিকেল আর ম্যাচের বাক্সের ভেতরে করে। হেরোইন বহন করা হয় মিষ্টির প্যাকেটের ভেতরে করে। আর গাজা বহন করা হয় ছালার চটের ভেতরে করে। মাদক বহনের কাজে ব্যবহার করা হয় কোমলমতি ছেলে-মেয়েদের। সূত্রটি জানায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মহিলাদের দিয়ে মাদক বহন করা হয়। মহিলাদের বিশেষ স্পর্শকাতর জায়গায় ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন ও গাজা রেখে বহন করা হয়। মাদক ব্যবসার সুবিধার্থে রূপগঞ্জে ৭’শর অধিক শিশু-কিশোর সেলসম্যান রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে।
মাদককে ঘিরে ৬ খুন: থানা পুলিশ ও স্থানীয়দের তথ্যমতে, গত সাত বছরে নেশার কাজে বাধা ও প্রতিবাদে ৫ জন খুনের শিকার হয়েছেন। ২০০৮ সালের ২৭ আগষ্ট মাদকের টাকা দিতে অস্বীকার করায় গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের মাহনা এলাকায় ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম মোল্লাকে তার নেশাসক্ত ছেলে মিলন মোল্লা ও তার সহযোগীরা হত্যা করে। পরে বস্তাবন্দি করে একটি মজাপুকুরে ফেলে দেয়। ১৯৯৫ সালে চনপাড়া বস্তিতে মাদক ব্যবসায় বাধা দেওয়ায় তারা মিয়া নামে একজনকে খুন করে পিচ্চি মালেক। ২০০৮ সালের ২৫ অক্টোবর চনপাড়া বস্তিতে মাদক ব্যবসায় বাধা দেওয়ায় আব্দুর রহমান নামে এক যুবককে প্রকাশ্যে দিবালোকে রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে মাদক ব্যবসায়ীরা। ২০১১ সালে মাদক ব্যবসায় বাধা দেওয়ায় মাছিমপুর এলাকায় নজরুল ইসলাম বাবু নামে এক যুবকেকে কুপিয়ে ও গুলি কর হত্যা করে মাদক ব্যবসায়ীরা। ২০১২ সালে হাটাবো এলাকায় মাদক ব্যবসায় বাধা দেওয়ায় সোহেল মিয়া নামে এক যুবককে হত্যা করে মাদক ব্যবসায়ীরা। ২০১৪ সালের ২৯ মার্চ মাদক সেবনে বাধা দেওয়ায় জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মেহেদী হাসান বাবুকে প্রকাশ্যে দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করে। আর এছাড়া হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ৫’ শতাধিক। মাদক সেবন করে গত কয়েকবছরে মারা গেছে ৩ জন।
কয়েকজন বিশিষ্টজনের বক্তব্যঃ বিশিষ্ট কলামিষ্ট লায়ন মীর আব্দুল আলীম বলেন, মাদকসেবী বেড়ে যাওয়ার জন্য আসলে সবাই দায়ী। শুধু প্রশাসনকে একা দায়ী করলে চলবে না। অভিভাবক, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিরাও এক্ষেত্রে দায়ী। সবার সোচ্চার হলে মাদক ব্যবসায়ীদের রোধ করা সম্ভব। রূপগঞ্জের বইপ্রেমিকখ্যাত লায়ন মোজাম্মেল হক ভূইয়া বলেন, অভিভাবকরা যদি তার সন্তানের দিকে সঠিকভাবে খেয়াল রাখে তাহলে সন্তান কুপথে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তরুণের বইয়ের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন। এলাকায় এলাকায় মাদক নিয়ে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও জনসচেতনতা গড়ে তোলা দরকার।
প্রশাসনের বক্তব্য : রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, মাদক নিয়ে রীতিমতো অভিযান চলে। রূপগঞ্জে অনেক এলাকা দুর্গম। এসব এলাকায় যেতে লাগে অনেক সময়। এ সুযোগে মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। বেচাকেনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি অভিযোগ মিথ্যা দাবী করে বলেন, অনেক সময় ভুলে মাদক সেবনকারীদের ধরে নিয়ে আসে। এসময় তদবির হলে ছেড়ে দেওয়া হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।