পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : রাজধানীর শ্যামপুর, কদমতলী ও গেন্ডারিয়া থানা এলাকায় মাদকের ব্যবসা জমজমাট। হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। কদমতলী থানার মুরাদপুরে গত ২৭ এপ্রিল মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে পলাশ নামে এক যুবক খুন হয়। এ ব্যাপারে জড়িত দুজনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। পলাশ খুন হওয়ার পর থেকে মুরাদপুর, জুরাইন, কোদারবাজার ও পাটেরবাগ এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কে ভুগছেন। জুরাইনের এক ব্যবসায়ী জানান, যেভাবে প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা শুরু হয়েছে তাতে আরও হত্যাকা- ঘটার আশংকা রয়েছে।
অনুসন্ধানে শ্যামপুর, কদমতলী ও গে-ারিয়া থানা এলাকার ভয়াবহ মাদক ব্যবসার চিত্র পাওয়া গেছে। এসব মাদক ব্যবসার নেপথ্যে রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের একাধিক প্রভাবশালী নেতা এবং শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। এ ছাড়া পুলিশের গাছাড়া ভাব এবং মাদক ব্যবসা নিয়ে কঠোর অবস্থানের মিথ্যা বুলি এই ব্যবসা প্রসারের অন্যতম প্রধান কারণ। জানা গেছে, কদমতলী থানার ওয়াসা পুকুরপাড় এলাকার বিল্লালের মাদক স্পটে দিনে রাতে প্রকাশ্যেই মাদক বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পুলিশ মাঝে মধ্যে এসব স্পটে অভিযান চালালেও মূল হোতা কখনও ধরা পড়ে না। ধরা পড়ে বিক্রেতা ও সেবনকারী। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুলিশ টাকার বিনিময়ে তাদেরকে ছেড়ে দেয়। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, এখানকার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে বিল্লাল। সে আশপাশেই থাকে এবং মোবাইল ফোনে মাদক ব্যবসা নিয়েন্ত্রণ করে। জানা গেছে, বিল্লালের সহযোগী হিসাবে এই এলাকায় মাদক ব্যবসা করে ফালান, সাইদুল, ফরহাদ, ওহাব, সোহাগ, বিলকিস ও সুমন। এদের মধ্যে সুমন বর্তমানে কারাগারে আছে।
এদিকে, কদমতলী থানার কাছাকাছি মোহাম্মদবাগ, রায়েরবাগ এলাকাসহ, দোলাইরপাড়, শ্যামপুর বালুর মাঠ, ডিপটি গলি, বিড়ি ফ্যাক্টরী, শনিরআখড়া, দনিয়া নয়াপাড়া, নূরপুর, পাটেরবাগ, মুরাদপুর, কমিশনার রোড, জুরাইন, আলমবাগসহ প্রতিটি এলাকার অলিগলিতে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক বিক্রি হয়। মুরাদপুরে এই মাদকের ব্যবসাকে কেন্দ্র করে গত ২৭ এপ্রিল পলাশ নামে এক যুবক খুন হয়। শ্বাসরোধ করে হত্যার পর পলাশকে মারাদপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাদ থেকে ফেলে দেয়া হয়। পলাশ হত্যাকা-ের সাথে জড়িত হীরা ও টেমা স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছে। কদমতলী থানার এসআই প্রদীপ কুমার জানান, নিহত পলাশ ঘটনার দুই দিন আগে মুরাদপুর স্কুল মাঠে খুনিদের একজনের ভাইকে মারধর করে। এতে ক্ষীপ্ত হয়ে হীরা, টেমা, ফাহিম ও দিপজল মিলে পলাশ কে নেশা করানোর কথা বলে স্কুলের ছাদে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে ফাহিম ও দিপজল পিছন থেকে পলাশের মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে তাকে অচেতন করে। টেমা ও হীরা পলাশের গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। ভোরে তারা পলাশের লাশ ছাদ থেকে ফেলে দেয়। পুলিশের ভাষায় পলাশ হত্যাকা- ভিন্ন হলেও মুরাদপুর এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, যারা পলাশকে খুন করেছে তারা সবাই মাদক ব্যবসা সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বডিগার্ড মাসুম ও ভাগ্নে রাজন। মুরাদপুর জিরো পয়েন্টে এই সিন্ডিকেট প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা করে। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিগত সাত বছর যাবৎ এই এলাকায় খুনের ঘটনা ঘটেনি। এখন প্রভাবশালীদের ইন্ধনে প্রকাশ্যে যেভাবে দখলবাজি আর মাদক ব্যবসা চলছে তাতে আমরা সবাই আতঙ্কিত। এছাড়াও কদমতলী থানা এলাকায় যেসব স্পটে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হয় সেগুলো হলো, ২৪/১ আলমবাগ আওয়ালের বাড়ী। মাদক স¤্রাট আওয়াল নিজেই হিরোইন প্যাথেডিন বিক্রি করেন। শ্যামপুর নতুন রাস্তায় গাঁজা বিক্রি করে রানু, শ্যামপুর বালুর মাঠে বাংলা মদ বিক্রি করে আলাউদ্দিন, কমিশনার রোডে মিষ্টির দোকানে মাদক বিক্রি করে মাহমুদের ভাই বাবু। একই এলাকায় ফেনসিডিল বিক্রি করে মামনি ও ছোট শাকিল। শ্যামপুর ওয়াসা পুকুরপাড়ের ঢালে মদিক বিক্রি করে বজলুর স্ত্রী ও জামাই মনির। ঢাকা ম্যাচ কলোনীতে গাঁজা বিক্রি করে হানিফ। জুরাইন ঋষিপাড়ায় ফেনসিডিল বিক্রি করে রানা ও লাকী। আরও আছে মুরাদপুর ডিপটি গলির জুম্মন, দুলাল, জুবায়ের, শাহআলম ও বীণা। দনিয়া এ কে স্কুলের গলির দারোগাবাড়ী ১নং সড়কে ফেনসিডিল বিক্রি করে দেলোয়ার, ইয়াবা বিক্রি করে হাতকাটা ওয়াসিম। মুরাদপুর পেট্রোল পাম্পে গাঁজা বিক্রি করে আরিফ, মুরাদপুর হাইস্কুল রোডে ইয়াবা বিক্রি করে আকবরের ছেলে রুবেল ও ডেউয়া সুমন। জুরাইন বৌবাজারে প্যাথেডিন বিক্রি করে নাসিমা। আলম মার্কেটে ঢাকা হোটেলের কাছের শামীম, খালপাড়ে তাইজু, কালার বাজারের হাকিম, শ্যামপুর নতুন রাস্তার জনি, সোহাগের নাম সকলেরই জানা। এছাড়া রয়েছে ঋষি পাড়ার বিয়ার ব্যবসায়ী জাকির মোশারফ, ধোলাইরপাড়ের কালাম, রাসেল, পতন, কাইয়ুম, দনিয়া বাজারের চান্দু, শাহিন, আকবর, দনিয়া আদর্শ স্কুল গলির রাসেল, আদম, ইতি, হাফিজুল ও বগামাছুম। গোয়ালবাড়ি মোড়ে কোকিলার ভাগ্নে নাঈম, রায়েরবাগের বাহার, অদুদ, ইমরান, সানী, ল্যাংড়া সাইদুল, রোকন, সায়মন, রানা, আমির, কুট্টি সোহেল, সাহেব মিয়া, স্বপন, কসাই মুরাদ, নুরু, রফিক, শনিরআখড়া জিয়া সরণীর ঢাকা টাওয়ারের উল্টো দিকে চাঁন মিয়া, ধোলাইর পাড় ডিপটির গলির জুম্মন, ওয়াসীম, ফারুক, রহিম, সোর্স দুলাল, বাপ্পী ও রাজু।
অপরদিকে, শ্যামপুর থানা এলাকা ছোট হলেও মাদকের স্পটের কমতি নেই। শ্যামপুরের পালপাড়ার ফরহাদ সবচেয়ে বড় মাদক ব্যবসায়ী। স্থানীয়দের অভিযোগ পুলিশ ইচ্ছা করলে একদিনেই এখানকার মাদকের স্পটগুলো বন্ধ করে দিতে পারে। কিন্তু মোটা অংকের টাকা পায় বলে পুলিশ সব কিছু দেখেও না দেখার ভান করে। শ্যামপুর আইজি গেইটে সহিদের হেরোইনের স্পট পুরনো ঢাকার অতীতের সকল রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। অভিযোগ রয়েছে ওই এলাকার ৩ নাম্বার বিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক এসআই মাদক ব্যবসায়ী সহিদের সাথে সখ্যতা বজায় রেখে চলেন। এজন্য মাসে মোটা অংকের মাসোহারা পান তিনি। শ্যামপুর থানার ওসির পছন্দের তালিকায় আছেন ওই এসআই। জানা গেছে, বুড়ীগঙ্গা নদী হয়ে প্রতিনিয়ত এই এলাকা দিয়ে কোটি কোটি টাকার মাদক আসে ঢাকার বাইরে থেকে। স্থানীয়রা জানান, এখানকার মাদক সিন্ডিকেটের সাথে শীর্ষ সন্ত্রাসীরাও জড়িত। এ কারণে স্থানীয়রা ভয়ে মুখ খোলেন না। শ্যামপুরের এসব মাদক ব্যবসা নিয়ে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হলেও ওসি আব্দুর রাজ্জাক বরাবরই মাদক ব্যবসার কথা অস্বীকার করেন। গে-ারিয়া থানার মাদক ব্যবসা মূলত সিটি ওয়েল মিলস আর মাইমুনার বস্তিকেন্দ্রিক। এখানে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার মাদক বেচাকেনা হয়। মাইমুনার বস্তি এতোটাই ভয়ঙ্কর যে পুলিশও সেখানে প্রবেশ করতে ভয় পায়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশ নানান ভয়ের কথা বলে দায়িত্ব এড়িয়ে চলে। তাদের অভিযোগ, এই বস্তি থেকে মাদক বিক্রির ৩ লাখ টাকা যায় ওসির নামে। মাদক ব্যবসা সম্পর্কে কদমতলী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, মাদক ব্যবসা একেবারে বন্ধ করা সম্ভব নয়, তবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। আগের তুলনায় কদমতলী থানা এলাকায় মাদক ব্যবসা অনেকাংশে কমেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।