Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যাংককর্মী এক বছরে কমেছে ১০ হাজার নীতিবান নেতৃত্বের অভাবে দূর্নীতি-অনিয়ম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬১ শতাংশ ব্যাংকার মনে করেন ব্যাংকিং খাতে নীতিবান নেতৃত্বের অভাব রয়েছে। এ ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম এবং দুর্নীতির ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। এ কারণে ব্যাংকিং খাতের নীতিবান নেতৃত্ব দরকার বলে ব্যাংকাররা জানিয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ব্যাংকের অপারেটিং খরচ ১০০ টাকার মধ্যে মানব সম্পদ উন্নয়নে মাত্র ২৫ পয়সা অর্থ ব্যয় করে। প্রশিক্ষণে বাজেটও কমিয়েছে ব্যাংকগুলো। একই সঙ্গে ব্যাংকে এক বছরে কর্মী কমেছে প্রায় ১০ হাজার। ২০১৬ সালে ব্যাংক কর্মী ছিল ৯০ হাজার ২৬৫ জন। ২০১৭ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮১ হাজার ২৪৫ জন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট অব ব্যাংকস’ শীর্ষক বার্ষিক পর্যালোচনা কর্মশালায় উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী। স্বাগত বক্তব্যে আয়োজনের উদ্দেশ্য বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী। তিনি দক্ষতার সঙ্গে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। একই সঙ্গে প্রশিক্ষণের ওপর জোরারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিআইবিএমের মুজাফফর আহমেদ চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক প্রফেসর ড. বরকত-এ-খোদা, বিআইবিএমের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি প্রফেসর ইয়াছিন আলি, বিআইবিএমের সাবেক চেয়ার প্রফেসর এস এ চৌধুরী, প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেডের উপ -ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. এ. আব্দুল্লাহ, ওয়ান ব্যাংক লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং কোম্পানি সেক্রেটারি জন সরকার প্রমুখ।
কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। গবেষণা দলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন বিআইবিএমের সহকারি অধ্যাপক মাসুদুল হক, বিআইবিএমের সহকারি অধ্যাপক রেক্সোনা ইয়াসমিন, বিআইবিএমের প্রভাষক আনিলা আলী, বিআইবিএমের প্রভাষক লামিয়া রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. রফিকুল ইসলাম এবং আল- আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং মানব সম্পদ বিভাগের প্রধান মো. মাজহারুল ইসলাম।
কর্মশালার উদ্বোধন করে ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল বলেন, ব্যাংকিং খাতের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থমন্ত্রণালয় মন্ত্রণালয় বেশ কিছু সার্কুলার জারি করেছে। এসব সার্কুলার যথাযথ পরিপালনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নজরদারি করা হয়। তিনি বলেন, ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়নের পর্যায়ে রয়েছে। এতে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের বলেন, ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে ব্যাংকগুলো কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং উন্নয়নে ব্যয় ৫০ শতাংশ কমিয়েছে। ১০০ টাকা অপারেটিং ব্যয়ের মধ্যে মাত্র ২৫ পয়সা কর্মীদের উন্নয়নে ব্যয় করেছে ব্যাংক। যা খুবই হতাশাজনক। আন্তর্জাতিকভাবে অপারেটিং খরচের দুই থেকে তিন শতাংশ ব্যয় করা হয়। একই সঙ্গে এক তৃতীয়াংশ ব্যাংক তাদের মানব সম্পদ উন্নয়নের ব্যয় করতে ব্যর্থ হয়েছে।
ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, ব্যাংকিং খাতের নৈতিকতার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। নৈতিকতা বজায় রাখতে পারলে ব্যাংকিং খাতের সমস্যা অনেকাংশে দূর হবে। তিনি ব্যাংকের কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর ওপরও গুরুত্ব দেন।
প্রফেসর এস এ চৌধুরী বলেন, ব্যাংকিং খাতে চাকরির জন্য লাইসেন্স ব্যবস্থার প্রবর্তন করলে অনেক সমস্যা দূর হয়ে যাবে। বিশেষ করে পেশাদারি সংক্রান্ত লাইসেন্স থাকলেও ব্যাংকিংয়ে নেই। ব্যাংকিং খাতে এখন বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন সুতরাং এ বিষয়টি বিবেচনায় এই লাইসেন্স কাজে লাগবে।
প্রফেসর ইয়াছিন আলি বলেন, নারী কর্মীদের সন্ধ্যা ছয়টার পর ব্যাংকের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখার নির্দেশনা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আবার ব্যাংকের পরিচালকদের একটি অংশ ব্যাংক কর্মীদের সঙ্গে কিভাবে আচরণ করতে হবে তা জানে না। এজন্য ব্যাংক পরিচালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
এম. এ. আব্দুল্লাহ বলেন, মানবসম্পদ কর্মীদের বেসিক ব্যাংকিংয়ের ধারণা থাকতে হবে। পদন্নোতির বিষয়েও সুষ্পষ্ট ধারণা না সমস্যা তৈরি হয়। এসব বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে নজর দিতে হবে।
জন সরকার বলেন, ব্যাংকের পরিবেশ পরিবারের মতো করে গড়ে ওঠতে হবে। ভালাবাসার কারণে পরিবার যেমন টিকে থাকে ঠিক তেমনি ব্যাংকের মধ্যেও একই পরিবেশ রাখতে হবে। তিনি বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ফি নেওয়া ঠিক নয়। কারণ এটিকে বিজ্ঞাপন হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ