দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
গত কয়েক বছরে দেশে রমজানের আগমন এক নতুন আবহের সৃষ্টি করছে। আলহামদুলিল্লাহ, দিনে দিনে বাংলাদেশের মানুষের গড় আর্থিক অবস্থা কিছুটা ভালো হওয়ার পাশাপাশি মানুষের মনও বড় হচ্ছে। বিশেষ করে রমজানের কালচার বেশ বর্ণাঢ্য হতে চলেছে। নবী করিম সা. সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরাম বলেছেন, প্রিয় নবী ছিলেন, দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি দানশীল। বিশেষ করে রমজানে তিনি অধিক দান করতেন। দানের হাত তখন তার এতই উদার হতো, যেন তা উদারতার মুক্ত বাতাস।-আল হাদীস। ইসলামে ফরজ দান হচ্ছে যাকাত। এছাড়া সাধারণ দান সাদাকাহ। মানুষকে উপহার দেওয়া বিশেষ সুন্নত। প্রিয় নবী সা. বলেছেন, তোমরা পরস্পরে উপহার আদান প্রদান করো। এতে উভয় পক্ষের মধ্যকার ভালোবাসা বৃদ্ধি হয়।-আল হাদীস। রমজানে ইফতার করানো একটি অসীম সওয়াবের কাজ। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশি, ইমাম-মুয়াজ্জিন, আলেম-উলামা, সহকর্মী প্রভৃতি পর্যায়ে রমজানে ইফতার প্রেরণ, সাহরীতে দাওয়াত, ঈদ উপহার বিনিময় একটি উন্নত ধর্মীয় সংস্কৃতি। যা যুগ যুগ ধরে সীমিত আকারে হলেও বাংলাদেশে চলে এসেছে। সম্প্রতি এর পরিসর বাড়ছে। আশাকরি দিনে দিনে আরও বাড়বে। রাজধানীতে ইদানিং পাড়ায় মহল্লায় পর্যন্ত মসজিদে ইফতারির আয়োজন চোখে পড়ছে। কয়েক বছর আগেও কেবল পুরান ঢাকা ছাড়া এদৃশ্য চোখে পড়তো না। মহাখালী গাউসুল আজম কমপ্লেক্স মসজিদ এখন ইফতার আয়োজনকে একটি ট্রেন্ডে পরিণত করেছে। ঠিক যেন মক্কা মদীনা কুফা দামেস্ক ও বাগদাদের কালচার। শত শত রোজাদার নির্দ্বিধায় ইফতার গ্রহণ করছেন। সমাজের উঁচু থেকে সবশেষ পর্যায় পর্যন্ত আল্লাহর বান্দারা এখানে ইফতার করছেন। অনেকে সবার সাথে ইফতার করার মধ্যে রহমত বরকত ও শিফা প্রত্যাশা করছেন। এ অভ্যাসটি কয়েক বছর ধরে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমেও শুরু হয়েছে। কোনো কোনো দিন রোজাদার বেশি হলেও ইফতারির অভাব হয় না। যারা হাদিয়া দিতে চান, তারা আগেই কর্তৃপক্ষকে তা পৌঁছে দেন। বড় বড় মসজিদে শুনেছি ৫/৭ টি ইফতার আইটেম ৫/৭ জনেই স্পন্সর করে ফেলেন। এর বাইরে আর কারো হাদিয়া গ্রহণের সুযোগ থাকে না। আমার মহল্লার মসজিদে প্রথম প্রথম দু’য়েকবার আমাদের শরীক হওয়ার সুযোগ ছিল। দু’বছর ধরে মসজিদ কমিটি বলছে, দু’য়েকজনেই তিরিশ দিনের ইফতারির ভার খুশি মনে নিয়ে নিয়েছেন। সব বাড়ি থেকে টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। আমি আগ্রহীদের বলেছি, রাজধানীর মসজিদে নয়, দূরের এলাকায় ইফতারির হাদিয়া পৌছে দেওয়ার সুযোগ নিন। আনুষ্ঠানিক ইফতারির পাশাপাশি প্রত্যেকেই যদি নিজের পরিচিত বৃত্তে ইফতার সাহরী ইত্যাদি বিতরণ করার ব্যবস্থা নেন, তাহলে দেশের কোনো মানুষকেই রমজানে কষ্ট করতে হবে না। এ হচ্ছে সাধারণ হাদিয়া তোহফা উপহার বা গিফট। যার সওয়াব অনেক। অবশ্য যে কোনো ব্যয়ে নিজের, নিজের পিতা মাতার, পরিবারবর্গের কল্যাণ নিয়ত করে নেওয়া বিধেয়। তবে যাকাত, সাদাকাহ, ফিতরা উন্মুক্ত আয়োজনে ব্যবহার করা যাবে না। এটি শুধু এর শরীয়াহ সম্মত প্রাপকদের মাঝেই বিলাতে হবে। নিজের ফরজ দান ছাড়া হালাল উপার্জন থেকে সব মুসলমানের খেদমত করা অনেক বড় সওয়াবের কাজ। এতে হায়াত বৃদ্ধি পায়। চেহারায় নূর আসে। রোগ মুক্ত সুস্থ কর্মময় সুখী জীবন লাভ হয়। প্রিয় নবী সা. বলেছেন, আল্লাহ তায়ালার কাছে অন্যতম প্রিয় আমল হচ্ছে, মানুষকে খানা খাওয়ানো। এ কথাটি যেন বিত্তবান মানুষ বা অপেক্ষাকৃত সচ্ছল লোকেরা মনে রাখেন। বিশেষ করে রমজানে যখন প্রতিটি নফলের সওয়াব ফরজের সমান দেওয়া হয় আর প্রতিটি ফরজ সওয়াবের দিক দিয়ে হয়ে যায় ৭০ গুণ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।