পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গণমাধ্যমের স্বার্থ ক্ষুন্ন হয় আইনে এমন বিধান থাকবে না- আইনমন্ত্রী
প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আটটি ধারা নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে নিজেদের আপত্তির কথা তুলে ধরেছেন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। এই ধারাগুলোর প্রয়োজনীয় সংশোধনের বিষয়ে ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছে সংসদের ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। প্রস্তাবিত আইনটির খসড়া পর্যালোচনা শেষে আবার গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করা হতে পারে।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে সংসদের ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল নিয়ে আলোচনা হয়। প্রস্তাবিত এই আইন নিয়ে সাংবাদিক, কূটনীতিক, মানবাধিকারকর্মীসহ বিভিন্ন পক্ষের আপত্তি ছিল। বিলটি সংসদে ওঠার পর পরীক্ষার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।
সংসদীয় কমিটির আমন্ত্রণে বৈঠকে পত্রিকার সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও বেসরকারি টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাটকোর শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। বৈঠকে প্রস্তাবিত আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২ ও ৪৩ ধারা নিয়ে আপত্তি জানানো হয়। বৈঠক শেষে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার সাংবাদিকদের বলেন, অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকতার অবাধ বিচরণের ক্ষেত্রে যেসব ধারায় বাধা আসতে পারে, সেগুলোতে আমরা তুলে দিতে বলেছি। তা না হলে আমরা গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আন্দোলন করেছি আমরা সাংবাদিকতা রক্ষার জন্য আন্দোলনে যাব, সেটা বলে এসেছি। গোলাম সারওয়ার বলেন, তাঁরা সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে একটি লিখিত বক্তব্য কমিটিকে দিয়েছেন। সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম বলেন, তাঁরা মোট আটটি ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। এ ছাড়া কিছু ক্ষেত্রে সংজ্ঞায় অস্পষ্টতা ছিল, সেটা জানিয়েছেন। সংসদীয় কমিটি এই দাবির সঙ্গে একমত হয়েছে। যেসব ধারাতে বিন্দুমাত্র স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতিরোধক ও স্বাধীন সাংবাদিকতার বাধা রয়েছে, সেগুলো তাঁরা তুলে ধরেছেন। কমিটিও এ বিষয়গুলো সহানুভূতিশীল ও আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছে। তাঁরা আশা করছেন, আইনের কয়েকটি বিষয়ে আমূল পরিবর্তন আসবে। এক প্রশ্নের জবাবে মাহ্ফুজ আনাম বলেন, পুরো আইনটিকেই সাংবাদিকদের কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য তাঁরা সব চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন। স্বাধীন সাংবাদিকতার সাংবিধানিক যে অধিকার রয়েছে, তার ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে কমিটি বারবার আমাদের আশ্বস্ত করেছে।
সংসদীয় কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ বলেন, প্রস্তাবিত আইনে কিছু অস্পষ্টতা আছে। পরিষ্কার করতে হলে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। সংসদীয় কমিটির পরবর্তী বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে। প্রয়োজন হলে আবারও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। বিএফইউজের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, সাংবাদিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। সেখানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সব ধরনের উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে। গণমাধ্যম যাতে সংকুচিত না হয়, সাধারণ মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যাতে ব্যাহত না হয়, সে কথা তাঁরা বলেছেন। সাংবাদিকেরা যাতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করতে পারেন অনুসন্ধান সাংবাদিকতা আর গুপ্তচরবৃত্তি যাতে একসঙ্গে মিলিয়ে না যায়, সেটা বলেছি। আমরা বৈঠকের বিষয়ে খুবই সন্তুষ্ট যে তারা আমাদের বক্তব্য গুরুত্বের সঙ্গে শুনেছেন। তাঁরা আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। অ্যাটকোর সভাপতি ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান বলেন, আমরা আইনের যেসব বিষয় নিয়ে চিন্তিত, সেগুলো কমিটিকে জানিয়েছি। কমিটি আমাদের আশ্বাস দিয়েছে যে তাঁরা আমাদের উত্থাপিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নেবেন। তাঁরা বর্তমানে আইনটি যেভাবে রয়েছে, তা সংশোধন করে সংসদে তুলবেন। একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু বলেন, আইনমন্ত্রী, সংসদীয় কমিটির সভাপতিসহ সবাই নিশ্চিত করেছেন, গণমাধ্যমকে বাধাগ্রস্ত করা নয় বরং সোশ্যাল মিডিয়ার নামে অনিয়ন্ত্রিত গুজবনির্ভর মিডিয়ার হাত থেকে মূলধারা গণমাধ্যমকে প্রটেকশন দেওয়ার জন্যই এই আইন তাঁরা প্রণয়ন করছেন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আমরা কোনো ব্যক্তিবিশেষ নয়, সব দেশের জন্যই এই আইনটি করতে চাই। সাংবাদিকতা ব্যাহত বা সাংবাদিকদের টার্গেট করে কোনো আইন আমরা করছি না। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিপরীতে কোনো আইন আমরা সাংবিধানিকভাবে করতেই পারি না। আইনমন্ত্রী বলেন, যে আটটি ধারা নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সেখানে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংজ্ঞা স্পষ্ট নয়, সেটা স্পষ্টকরণের কথা বলা হয়েছে। আটটি ধারায় যে অসুবিধার কথা গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, আমরা সেগুলোরে ব্যাখ্যা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আমরা বক্তব্য দিয়েছি। এ ক্ষেত্রে আমি পরিষ্কারভাবে বলেছি, এগুলো আমরা স্পষ্টকরণের সুপারিশ করব। যেসব সংযোজন-বিয়োজন দরকার, তা করে আমরা সুপারিশ করব। তারপরে নতুন করে এটি নিয়ে সমালোচনা না হয়, সে জন্য সংসদীয় কমিটি এই আইনের সংশোধনসহ চূড়ান্ত রূপ দেবে, তখন আমরা গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে আবারও বসে এটি সংসদে পাস করার জন্য প্রেরণ করব।’ ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা উভয় পক্ষ একমত হয়েছি যে এ রকম একটি আইন আমাদের দরকার। সেই আইনের যেসব জায়গায় সংশোধনী করা প্রয়োজন, সেটা আমরা করব।
যেসব ধারা নিয়ে আপত্তি \ বিভিন্ন মহলের আপত্তি সত্তে¡ও গত ৯ এপ্রিল বহুল আলোচিত ’ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল-২০১৮’ জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়। ওই বিলের ৩২ ধারায় বলা হয়েছে- কম্পিউটার বা ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ: যদি কোনো বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে কোনো সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ কোনো সংস্থার কোনো ধরনের অতি গোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার, নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করেন বা করতে সহায়তা করেন তাহলে সেটা গুপ্তচরবৃত্তি বলে গণ্য হবে। এর শাস্তি অনধিক ১৪ বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ২৫ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। ধারা (৮) বলা হয়েছে- কতিপয় তথ্য-উপাত্ত অপসারণ বা বøক করার ক্ষমতা: মহাপরিচালক নিজ অধিক্ষেত্রভুক্ত কোনো বিষয়ে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য-উপাত্ত ডিজিটাল নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি সৃষ্টি করলে তিনি উক্ত তথ্য উপাত্ত অপসারণ বা ক্ষেত্রমত, বøক করার জন্য বিটিআরসিকে অনুরোধ করতে পারবেন। এক্ষত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর কাছে যদি মনে হয় ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য-উপাত্ত দেশের বা তার কোন অংশের সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ বা জনশৃঙ্খলা ক্ষুণœ করে বা জাতিগত বিদ্বেষ ও ঘৃণার সঞ্চার করে, তাহলে উক্ত তথ্য বা উপাত্ত অপসারণ বা বøক করার জন্য বিটিআরসিকে অনুরোধ করা যাবে। ধারা (২১) বলা হয়েছে- মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রোপাগান্ডা বা প্রচারণা অপরাধ। এতে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রোপাগান্ডা ও প্রচারণা চালান বা তাতে মদত দেন তাহলে সেটা অপরাধ বলে গণ্য হবে। এর শাস্তি হিসেবে ১৪ বছরের কারাদন্ড বা অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। ধারা (২৫) বলা হয়েছে- আক্রমণাত্মক, মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শক, তথ্য-উপাত্ত পাঠানো, প্রকাশ ইত্যাদি অপরাধ বল্য গণ্য হবে। যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে এমন কোনো তথ্য পাঠান যা আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শক বা এমন কোনো তথ্য স¤প্রচার বা প্রকাশ করেন, যা কোনো ব্যক্তিকে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ করতে পারে। তাহলে সেটা অপরাধ বলে গণ্য হবে এবং এর শাস্তি অনধিক ৫ বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড হতে পারে।
ধারা (২৮) বলা হয়েছে- ওয়েবসাইট বা কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কোনো তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করলে অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তি ৭ বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড। ধারা (২৯) বলা হয়েছে- মানহানিকর তথ্য প্রকাশ, স¤প্রচার করলে তা অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তি ৫ বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড। ধারা (৩১) আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর অপরাধ বা দন্ড: যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা ডিজিটাল বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা স¤প্রচার করেন যার কারণে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শ্রেণী বা স¤প্রদায়ের মধ্যে শত্রæতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি বিনষ্ট করে বা অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অথবা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটনায় তাহলে অপরাধ বল্য গণ্য হবে। এর শাস্তি ৭ বছরের কারাদন্ড বা ৫ লাখ টাকা অর্থ দন্ড বা উভয় দন্ড।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।