পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আমাদের দেশে মর্যাদাহানিকর নিকৃষ্ট জীবন যাত্রার একটি পরিশ্রমহীন সহজ উপায় হল ‘ভিক্ষা বৃত্তি’। এখন এটি রীতিমত নোংরা ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। ইসলামের অবস্থান, এর বিরুদ্ধে। বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে ভিক্ষুকের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে, অচিরেই এটি জাতীয় সমস্যায় পরিণত হওয়ার আশংঙ্কা রয়েছে।
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমার যখন লাজ-লজ্জা বলতে কিছুই থাকে না, তখন তোমার যা খুশি তাই কর’। অধিকাংশ ভিক্ষুকের লজ্জা বলতে কিছুই থাকে না। ভিক্ষার চিন্তায় ওরা ব্যস্ত থাকে। ওরা যেখানে সেখানে, যার তার কাছে ভিক্ষা চাইতে লজ্জাবোধ করেনা। ওদের বিবেকে বাঁধে না কারো কাছে ভিক্ষা চাইলে কিছু পেতে পারে, নাও পেতে পারে তাতে ওদের লজ্জার কিছু নেই। এমনকি বর্তমানে দেখা যায় এক শ্রেণীর ভিক্ষক রীতিমত ভিক্ষার জন্য অশালীন আচরণ প্রদর্শণ করতেও দ্বীধা করে না। এরূপ ক্রদ্ধ, দু:সাহসীকতার দৃষ্টান্তের অভাব নেই। লজ্জা ঈমানেরই অংশ, এ শিক্ষা না থাকলে ঈমানে যে খলল (ত্রæটি) রয়েছে তা ইসলামী শিক্ষার অভাবেরই পরিণতি।
ইসলাম কখনো মুফত খোরীকে উৎসাহিত করে না। বরং শ্রমের মর্যাদার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে থাকে এবং বৈধ উপার্জনকে উৎসাহিত করে। যে অভাবী, দরিদ্র, যার আয়-উপার্জনের উপায় নেই, সামর্থবানকে তার সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার উপদেশ রয়েছে। ইসলামের মতে কোন ব্যক্তি অবৈধ উপায় এবং ভিক্ষা বৃত্তির মত নিকৃষ্ট কাজে জড়িয়ে পড়ুক এটা কাম্য হতে পারে না। যে উপায়হীন কর্মক্ষম তাকে কর্মের উপরকরণ সরবরাহ করেও সাহায্য করা যায়। রসূলুল্লাহ (স:) উম্মতকে সে শিক্ষা দিয়েছেন। এ সম্পর্কে অনেক উদাহরণ পেশ করা যেতে পারে। যার মধ্যে জনৈক কাঠুরিয়াকে কুড়াল দিয়ে তাকে স্বাবলম্বী ও আত্ম-নির্ভরশীল হয়ে জীবন যাপন করার ঘটনাও রয়েছে।
সক্ষম অবস্থায় অলস-বেকার জীবন, মফতখোরী এবং ভিক্ষা বৃত্তির কঠোর সমালোচনা করে ইসলাম। যদিও ইসলাম চাকরি-নওকরি করে জীবন যাপনের প্রতি উৎসাহিত করেনি কিন্তু তথাপি কোন লোককে চাকর বা মজদুর হিসেবে নিয়োগ করা হলে মালিকের প্রতি যেমন নির্দেশ রয়েছে, শ্রমিক বা মজদুরের ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার পূর্বেই (অর্থাৎ অবিলম্বে) যেন তার পারিশ্রমিক প্রদান করা হয়। তেমনি শ্রমিককেও মালিকের কাজে ফাঁকি না দিয়ে যথাযথ ভাবে দায়িত্ব বোধের সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালন করার তাগিদ রয়েছে। তবে মালিক ইচ্ছা করলে শ্রমিকের কাজ সহজ বা শিথিলযোগ্য করে দিতে পারে। অর্থাৎ নওকর বা চাকরের প্রতি নির্দেশ হচ্ছে, পূর্ণ বিশ^স্ততা ও সততার সাথে দায়িত্ব পালন করবে। কেননা উত্তম মজদুরের গুণ হচ্ছে সততার অধিকারী ও বিশ^াসী হবে।
মহানবী হজরত মোহাম্মদ (স:) একদিকে যেমন জীবিকা উপার্জনের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন, অপর দিকে তেমনি ভিক্ষা বৃত্তির প্রতি কেবল নিরুৎসাহিত নয়, কঠোর সতর্কবাণী ও উচ্চারণ করেছেন। এতদসংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে হুজুর (স:) শ্রমের প্রতি মর্যাদা প্রদর্শণ তথা জীবিকা নির্বাহের বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেন। এ পর্যায়ে তিনি বলেন;
‘তোমরা জীবিকা অর্জনের জন্য চেষ্টা করো এবং স্মরণ রেখো আমাদের মধ্যে কেউ যদি পরিশ্রম ও মজুরি করে কিংবা কঠোর বোঝা বহন করে কিছু আয় করে, তবে তা অন্যের কাছে হাত পাতা বা ভিক্ষা করা অপেক্ষা বহুগুণে উত্তম। আর যে ব্যক্তি উপার্জনে সক্ষম, তার জন্য ভিক্ষা চাওয়া জঘণ্য পাপ ও লজ্জাকর বিষয়। দুনিয়াতেও সে কোন সম্মান লাভ করতে পারবে না, আখেরাতেও নয়। বরং সেখানে তাকে এমন অবস্থায় উপস্থিত হতে হবে যে, তার মুখ মন্ডলে গোশতের কোন চিহ্ন থাকবে না’। তিনি আরও বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই যে, কোন ব্যক্তির কাছে একদিনের খাদ্য বা একদিনের খাবারের অর্থ থাকবে তার পক্ষে ভিক্ষা চাওয়া সম্পূর্ণ হারাম বা নিষিদ্ধ। আর আমি একথাও জানিয়ে দিতে চায়, কোন কোন সন্যাসী ভিক্ষা বৃত্তিকে জায়েজ বলে মনে করে। কিন্তু সাবধান! ইসলাম হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা এবং ভিক্ষা বৃত্তি অবলম্বন করাকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।