Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তাঘাট পানিতে টইটুম্বর

খুলনায় ৫০টি খালের অধিকাংশই প্রভাবশালীদের দখলে

| প্রকাশের সময় : ২১ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

আবু হেনা মুক্তি : আকাশে মেঘ ডাকলেই যেন ডুবে যায় খুলনা নগরীর রয়েলের মোড় বেনী বাবু রোড আহসান আহমেদ রোড শান্তিধামের মোড় ও প্রানকেন্দ্রগুলো। খুলনা মহানগরী এলাকায় ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিতে পানি থৈ থৈ করে নগরীর অধিকাংশ সড়কগুলো। রাস্তার কোথাও হাঁটু কোথাও হাঁটুর ওপরে উঠে যায় পানি। অপরদিকে বৃষ্টির কারণে সড়কগুলোর বেহাল দশা। ওয়াসা খোঁড়াখুঁড়ি আর জোড়াতালি দিয়ে ঠিক করলেও বৃষ্টির কারণে আবারও আগের চিত্রই দেখা যাচ্ছে। ফলে সড়কগুলোর এ অবস্থার কারণে সাধারণ জনগণকে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সূত্রমতে, গোটা খুলনা মহানগরী এখন চলতি বর্ষা মৌসুমে পানিবদ্ধতার হুমকির মুখে। গত ৩-৪ দিনের মাঝারী বৃষ্টিতে মহানগরীতে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। আষাঢ় শ্রাবণ তো পড়েই রয়েছে। ভরা বর্ষা মৌসুমে নগরীর হালহকিকাত নিয়ে নগরবাসী দারুন উদ্বিগ্ন। পানিবদ্ধতা রোধে কেসিসি গত কয়েক বছরে ঝটিকা অভিযান শুরু করেছিল। যা এখন ধীরগতিতে রয়েছে। নগরীর ৫০টি খালের অধিকাংশই এখন প্রভাবশালীদের দখলে। এর মধ্যে ১১টি খালের অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে পানি নিষ্কাশনের বন্দবস্ত না থাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই নগরীর রাস্তাঘাট পানিতে টইটুম্বর হবেই। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বিশেষ কিছু জায়গায় তড়িৎ পদক্ষেপ না নিলে আসছে বর্ষায় নগরীর অধিকাংশ স্থান পানিতে তলিয়ে যাবে। কেসিসি সূত্র বলছে দীর্ঘ দিনের জঞ্জাল ১ দিনে পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। তবে বর্তমান মেয়রের নেতেৃত্বে আশু কিছু তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তার কিছু সুফল এই বর্ষাকালেই পাওয়া যাবে।
সূত্রমতে, গত ১ যুগে খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ব্যাপক হারে জনবসতি বৃদ্ধি পায়। আবাসনের প্রয়োজনে নগরীর পরিধিও বাড়তে থাকে। গত দু’দশকে বিভিন্ন সরকারের আমলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির দরুন প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় চলতে থাকে খাস জমিও খাল দখলের প্রতিযোগিতা। এসকল কর্মকান্ডে থেমে নেই ভূমি ও জরিপ অফিসের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা। অবৈধ অর্থের বিনিময়ে প্রভাবশালীরা যেভাবে পেরেছে খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা ও সুবিধাবাদীরা তঞ্চকতার মাধ্যমে নিজ নামে রেকর্ড করে অন্যের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। নিজেরাও মালিক হয়েছে। অনেক ভূমি অফিসের কর্মচারী এ সকল অনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে অনেক জমি জায়গা ও অর্থকড়ির মালিক হয়েছে। ভূমি অফিস সংশ্লিষ্ট ছা-পোষা কর্মচারীরা এখন বিপুল বিত্তবৈভাবের মালিক। অবসরপ্রাপ্ত কাননগো এবং সার্ভেয়ারদের খুলনা মহানগরীতে ৩ তলা ৫ তলা অট্রালিকা ও অনেক জমি জায়গা রয়েছে।
সূত্রটি জানায়, নগরী ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ৫০ খালের মধ্যে ৮০-৯০ শতাংশ অবৈধ দখলে গেছে। এই দখল প্রক্রিয়ার সাথে প্রায় শতাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। দখলদারদের উচ্ছেদ আন্দোলন তিনবছর বছর স্তিমিত হয়ে পড়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমের আষাঢ়-আশ্বিন মাস নগরীর একটি বড় অংশে স্থায়ী পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বর্ষার এ ৪ মাস ডুবে থাকে ২ লাখেরও বেশি নগরবাসী।
সিটি কর্পোরেশনের সূত্র জানান, নগরী ও পাশ্ববর্তী এলাকার ৫০ খালের মালিক জেলা প্রশাসন। কর্পোরেশন এগুলো তদারকী করেন মাত্র। উল্লেখযোগ্য খালগুলো হচ্ছে নিরালা, ময়ুর নদী, মন্দার, ক্ষেত্রখালী, মতিয়াখালী, লবনচরা, তালতলা, মিস্ত্রিপাড়া, নবীনগর, ছড়িছড়া, লবনচরা গোড়া, লবনচরা সুইচ গেট, সবুজবাগ, মিয়াপাড়া পাইপের মোড়, বাস টার্মিনালের পশ্চিম পার্শ্বে, রায়েরমহল পশ্চিমপাড়া, বাস্তহারা, গল্লামারী নর্থ, দেয়ানা দক্ষিনপাড়া, বাটকেমারী, সাহেবখালী, হাজী তমিজ উদ্দীন, নারকেলবাড়িয়া, সুড়িমারি, ডুবি, বেতবুনিয়া, দেয়ানা, তেঁতুলতলা দশ গেট, হাতিয়া, মাথাভাঙ্গা, মাষ্টারপাড়া, হরিনটানা, ক্ষুদে, মজুমদার, কাদের, চক মথুরাবাদ, নবপল্লী, ছোটবয়রা শ্মশানঘাট, রায়েরমহল মোল্লাপাড়া, বিলপাবলা ইত্যাদি
এলাকাবাসীদের সূত্র জানান, বাস্তহারা খাল, ¯øুইজগেট খাল, গল্লামারী নর্থখাল, কাষ্টমঘাট ইত্যাদি এলাকায় খালের অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা। লবনচরা খালের একাংশ ভরাট করে ওয়ার্ড অফিস ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মান করা হয়েছে। রুপসার সাহেবখালী খালের ওপর সিটি কর্পোরেশন মার্কেট নির্মাণ ও কলেজিয়েট স্কুলের এক পাশ্ব দখল করা হয়েছে। পিটিআই মোড়ে খালের মুখ বন্ধ করে ওয়ার্ড অফিস নির্মাণ, ২৮ নং ওয়ার্ডের শেষ সীমানায় খালের ওপর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। রেলওয়ে মার্কেট এলাকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খালটি হলুদ ও মরিচের আড়ৎ গড়ে উঠেছে। বয়রা শ্মশানঘাট খালের মুখ বন্ধ করে গড়ে উঠেছে ইসলামীয়া কলেজ। নগর ভবনের পেছনে ড্রেনের ওপর একজন আইনজীবী গ্যারেজ নির্মাণ করেছে। একটি খালের মুখ বন্ধ করে সোনাডাঙ্গায় মহিলা কমপ্লেক্স নির্মান, নবীনগর খাল বন্ধ করে কেডিএ বাসটার্মিনাল ও গল্লামারী বাইপাস সড়ক র্নিমিত হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য ১৯৬০ সালে অধুনালুপ্ত পৌরসভা সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালের বর্তমান স্থানের মধ্য দিয়ে একটি খাল কাটে। পৌরসভার অনুমোদন ছাড়াই খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ওই খালের ওপর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকা ও কর্পোরেশন ট্রাকটার্মিনাল গড়ে তুলেছে। এদিকে খালিশপুর হাউজিং এলাকায় ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্যুয়ারেজ ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও সুষ্ঠু রক্ষনাবেক্ষন এবং দক্ষ জনবলের অভাবে পয় নিষ্কাশন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
সিটি কর্পোরেশনের নব নির্বাচিত মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, আমি দায়িত্ব বুঝে পেলে এ বিষয়ে দ্রæত ব্যবস্থা নিব। নগরীর ৯৮ শতাংশ মানুষ বর্ষার পানি নিষ্কাশনের সুবিধার্থে খালগুলোর ওপর অবৈধ দখলমুক্ত করে প্রবাহমান খালে পরিনত করতে চায়। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে সম্বনয়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হবে দ্রæত। দখলদার যত বেশি প্রভাবশালী হোক না কেন এবিষয়ে কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা। কোন রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারও সহ্য করা হবেনা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পানি

২৫ অক্টোবর, ২০২২
২১ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ