Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভূমিহীনদের ২৫টি বসতঘর পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা

| প্রকাশের সময় : ২০ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বাগেরহাট জেলা সংবাদদাতা: বাগেরহাটের শরণখোলায় প্রতিপক্ষরা ভূমিহীনদের ঘর থেকে বের করে অন্তত ২৫টি বসত ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। এসময় প্রতিপক্ষের হামলায় তিন নারী আহত হয়েছেন। ওই ভূমিহীন পরিবারগুলোর নারী ও শিশুরা এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে আর পুরুষ সদস্যরা মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারের ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। শনিবার ভোর পাঁচটার দিকে শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ বাধাল গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে হামলাকারীদের ধরতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ এই ঘটনার জন্য স্থানীয় ফরিদ খান ও মহারাজ হাওলাদারকে দায়ী করছেন। তাদের বিরোধে আগুন ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ দাবী করেছে।
২০১৪ সালে শরণখোলা উপজেলারখোন্তাকাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ বাধাল গ্রামের অর্পিত সম্পত্তি স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও অসহায় ভূমিহীন ১৫টি পরিবারের নামে (বন্দোবস্ত) বরাদ্দ দেয়। যাদের নামে সরকার জমি বরাদ্দ দিয়েছে তারা ওই জমিতে না থেকে ওই এলাকার অসহায় ভূমিহীন দিনমজুর, প্রতিব›দ্বীদের ঘর করে থাকার অনুমতি দেন। সেই থেকে তারা ওই জমিতে ধানের খড়, কাঠ, বাঁশ ও গোলপাতা দিয়ে ঘর বেঁধে বসবাস করে আসছেন।
স্থানীয় প্রভাবশালী ফরিদ খান এবং মো. মহারাজ হাওলাদার নামের দুই ব্যক্তির বিরোধের জেরে এই ভূমিহীনদের বসত ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের। এই অর্পিত সম্পত্তি আগে ফরিদ খান নিজের দাবী করে জোরপূর্বক দখল করে ভোগ করছিলেন।
যাদের ঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে তারা হলেন, খলিল হাওলাদার, শাহ আলম হাওলাদার, জামাল হাওলাদার, সুলতান হাওলাদার, ফারুক হাওলাদার, আমির হাওলাদার, মোশারেফ হাওলাদার, অলি হাওলাদার, রুমা বেগম, ইসমাঈল, রিনা বেগম, আবুল কালাম, ইব্রাহিম, সোহেল ফকির, শাহজাহান ফকির ও দুলাল ফকির।
অর্পিত সম্পত্তি বন্দোবস্ত পাওয়া জমির মালিক লিপন সরকার এই প্রতিবেদককে বলেন, ২০১৪ সালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অতুল মন্ডল অর্পিত সম্পত্তি থেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও অসহায় ভূমিহীন ১৫টি পরিবারের নামে (ডিসি আর বন্দোবস্ত) ১৭ একর ৮৫ শতাংশ জমি বরাদ্দ দেন বলে দাবী করেন। আমরা এই জমি বরাদ্দ পাওয়ার পর নিজেরা না থেকে স্থানীয় দরিদ্র ভূমিহীনদের ঘর তৈরি করে থাকার অনুমতি দেই। সেই থেকে তারা এখানে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছে।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালী ফরিদ খান এবং মো. মহারাজ হাওলাদার নামের দুই ব্যক্তির বিরোধের জেরে এই ভূমিহীনদের বসত ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তার। এই অর্পিত সম্পত্তি আগে ফরিদ খান জোরপূর্বক দখল করে ভোগ করছিলেন। আমরা বরাদ্দ পাওয়ার পর ওই জমিতে ভূমিহীনদের ঘর তুলে থাকতে দিয়েছি।
ক্ষতিগ্রস্থ ভূমিহীন দিনমজুর রফিকুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, গত ১৭ মে স্থানীয় ফরিদ খান নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে চাঁদাবাজি ও জমি দখলের অভিযোগ এনে জমি মালিক ও ভূমিহীনদের ৩৪ জনের বিরুদ্ধে শরণখোলা থানায় একটি মিথ্যা মামলা করেন। ওই মামলা হওয়ার পর পুলিশ ১৮ মে বিকালে আমাদের ধরতে আসে। পুলিশ আমাদের না পেয়ে বাড়ির নারীদের ভয় দেখিয়ে বলে ওরা বাড়িতে আসলে ওদের বাড়ির বাইরে থাকতে বলবি। তা নাহলে রাতে ওদের ধরে নিয়ে যাব। আমরা বাড়িতে ফিরে সব পুরুষ সদস্য এই খবর পেয়ে গ্রেপ্তার এড়াতে আতœগোপণে চলে যাই। এই সুযোগে ফরিদ খানের ২৫/৩০ সশস্ত্র লোকজন শনিবার ভোর পাঁচটার দিকে এখানে এসে ঘরের সব নারী শিশুদের বের করে প্রথমে ভাংচুর করে পরে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে আমাদের সর্বস্ব পুড়ে গেছে। এসময় ওদের মারপিটে অন্তত তিনজন নারী আহত হয়েছেন। আমাদের পরিবারের সদস্যরা আশেপাশের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। আর আমরা পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।
শাহ আলম হাওলাদার, জামাল হাওলাদার, সুলতান হাওলাদার এই প্রতিবেদককে বলেন, যাদের নামে জমি সরকার বরাদ্দ দিয়েছে তারা না থেকে আমাদের থাকার জায়গা দিয়েছে। আমরা গত চার বছর ধরে এখানে কোন রকমে ঘর বেধে বসবাস করছি। এই জমিতে থাকতে গিয়ে জমির মালিকদের সাথে আমরাও আসামী হয়েছি। ফরিদ খানের সাথে মহারাজ হাওলাদারের এই জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। তাদের বিরোধের জেরে ফরিদ খানের লোকজন বসত ঘর পুড়িয়ে দিয়ে আমাদের অসহায় করে দিয়েছে আমরা এখন যাব কোথায়?
আগুন ও ভাংচুরের সত্যতা স্বীকার করে শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবিরুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, সরকারের অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে স্থানীয় ফরিদ খান ও মহারাজ হাওলাদারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। বিরোধের মধ্যে ২০১৪ সালে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও অসহায় ভূমিহীন ১৫টি পরিবারের নামে বরাদ্দ দেয়ার আগে এই জমি ফরিদ খানের দখলে ছিল। সরকার বরাদ্দ দেওয়ার পর জমিটি ফরিদ খানের হাত ছাড়া হয়ে যায়। ওর পর থেকে মহারাজের লোকজন জমিতে ঘর বেধে বসবাস করে আসছে। গত ১৭ মে ফরিদ খান বাদী হয়ে চাঁদাবাজি ও জমি দখলের অভিযোগ এনে জমি মালিক ও ভূমিহীনদের ৩৪ জনের বিরুদ্ধে শরণখোলা থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলার আসামীদের ধরতে পুলিশ গেলে তাদের না পেয়ে ফিরে আসে। শনিবার ভোরে একদল দুর্বত্ত বসতঘর ভাংচুর করে তাদের আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুনে প্রায় ২৫টি বসতঘর পুড়ে গেছে। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভায়। কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিঙ্কন বিশ^াস এই প্রতিবেদককে বলেন, ২০১৪ সালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অতুল মন্ডল অর্পিত সম্পত্তি থেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও অসহায় ভূমিহীন ১৫টি পরিবারের নামে (ডিসি আর বন্দোবস্ত) ১৭ একর ৮৫ শতাংশ জমি বরাদ্দ দেন। এর কিছুদিন পরে ফরিদ খান নামে এক ব্যক্তি জমির মালিক দাবী করে বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করলে ওই জমির বরাদ্দ বাতিল করে দেওয়া হয়। সম্প্রতি ফরিদ খান আদালতে ওই জমির উপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে রিট করলে আদালত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এরমধ্যে শনিবার ভোরে ওই বিরোধপূর্ণ জমিতে বসবাস করা ভূমিহীনদের ঘরে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। আমরা ওই ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর তালিকা তৈরি করছি। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের খুঁজে বের করতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে স্থানীয় ফরিদ খান এবং মো. মহারাজ হাওলাদারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ