Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশান্ত ৫ কৃষক পরিবার

বড়াইগ্রামে নকল ধানের বীজে ১৬ বিঘা ফলন শূন্য

| প্রকাশের সময় : ১৮ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নাটোর জেলা সংবাদদাতা : নাটোরের বড়াইগ্রামের মাঝগাঁও ইউনিয়নের ৫ কৃষক তাদের ১৬ বিঘা জমিতে ধানের বীজ লাগালেও কোন ফলন পায়নি। তেজ নামে হাইব্রীড ব্রান্ডের ধানের বীজ লাগানোর পর কৃষক সেই ধান ঘরে আনতে পারেনি। ধানের শীষে কোন চাল নেই অর্থাৎ শতভাগই চিটা। এদিকে গ্রামের অন্যান্য কৃষক অন্যান্য সকল জাতের ধান ঘরে তুললেও ওই ৫ কৃষক ও তার পরিবারদের মধ্যে কস্ট ও বিষাদের ছায়া এসে ভর করেছে।
জানা যায়, মাঝগাঁওয়ের গুরুমশৈল গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান তার সাড়ে ৮ বিঘা, আলমগীর হোসেনের দুই বিঘা, জামালউদ্দিন প্রামাণিকের আড়াই বিঘা, জিয়াউল রহমানের দুই বিঘা ও আরিফুল ইসলামের এক বিঘা ১৬ কাঠা জমিতে অ্যারাইজ তেজ নামে হাইব্রীড জাতের ধানের বীজ কিনে এনে বপন করেন। এই ধানের বীজের প্যাকেটে উৎপাদক হিসেবে বায়ার বায়োসায়েন্স (প্রা.) লিমিটেড ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকার উত্তরার বায়ার ক্রপসায়েন্স লেখা রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ ওই কৃষকরা জানান, উপজেলার বনপাড়া বাজারের মজিদ বীজ ভান্ডার ও হানিফ বীজ ভান্ডার থেকে তারা গত জানুয়ারী মাসের শেষ সপ্তাহের দিকে ৩৩০ টাকা কেজি দরে বীজগুলি কিনেন। বীজ কেনার পর যথাযথভাবে বপন ও পরিচর্যা করা হয়। কিন্তু ধান পাকার মুহূর্তে দেখা যায় ওই ধানের গাছ মরে গিয়ে মাটিতে শুয়ে পড়েছে। শীষের একটিতেও চাল নাই, সবই চিটা। এ ব্যাপারে কৃষকেরা ওই বীজ বিক্রেতা মজিদ সেখ ও হানিফ সেখকে কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায় বায়ার কোম্পানী থেকে এ বীজ আমরা কিনে বিক্রি করেছি। এদিকে বায়ার ক্রপসায়েন্স এর স্থানীয় বিক্রয় প্রতিনিধি রাকিব হোসেন জানান, ওই দুই বীজ ভান্ডারের কাছে এই কোম্পানী কোন বীজই বিক্রি করে নাই। উপায়ন্তর না দেখে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা গত ১০ মে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইকবাল আহমেদ এর কাছে লিখিত অভিযোগ করলে কৃষি কর্মকর্তা এ বিষয়ে সরেজমিনে মাঠ পরিদর্শনপূর্বক রিপোর্ট তিনদিনের মধ্যে দাখিল করতে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করে দায়িত্ব প্রদান করেন। কমিটি কয়েক দফায় পরিদর্শন করে যথাসময়ে রিপোর্ট দাখিল করার পর কৃষি কর্মকর্তার কাছে পূনরায় এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, যদি এই বীজগুলো সরাসরি ধান থেকে বীজ করে থাকে তবে ফলন আসবে না। হাইব্রীডের ক্ষেত্রে ল্যাবরেটরীতে ক্রসিং করে বীজ উদপাদন করলে তবেই ধানের ফলন হবে। এখন বায়ার ক্রপসায়েন্সই বলতে পারবে এর আসল কথা। এ ব্যাপারে তিনি বায়ার ক্রপসায়েন্স এর প্রতিনিধির সাথে কথা বলেছেন। তারা এ বীজ সরবরাহ করেননি বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তাকে। এদিকে আসল বীজের পরিবর্তে নকল বীজ বিক্রির দায়ে ওই দুই বীজ ভান্ডারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে কৃষি কর্মকর্তা জানান, প্রমাণ পেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা জানান, এক বিঘা জমিতে এই ধান বপন থেকে কাটা পর্যন্ত খরচ হয়েছে সাড়ে ১২ হাজার টাকা। যদি এ ধানের ফলন হতো তাহলে তারা বিঘা প্রতি ১৭ হাজার টাকার ধান পেতো। মাঝগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক আব্দুল আলীম বলেন, সরেজমিনে ওই ধানের জমিতে আমি গিয়েছি এবং কৃষকদের অভিযোগ সত্য। তিনি ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের প্রতি সহানুভূতি প্রদান করে আরও জানান, ক্ষতিগ্রস্থরা ক্ষতিপূরণ পাবার দাবি করারটা যৌক্তিক।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ