Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

গোয়েন্দা পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের তদন্ত কমিটি মাঠে খবর টক অব দি কান্ট্রি

আ’লীগ নেত্রীর খাবার খেয়ে অসুস্থতা

| প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম


ঝিনাইদহ থেকে মোস্তফা মাজেদ : আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ঝিনাইদহ-৩ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী পারভিন তালুকদার মায়ার দুই সমাবেশের খাবার খেয়ে শত শত নেতাকর্মী অসুস্থ হওয়ার ঘটনা এখন টক অব দি কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। বাজার, চায়ের দোকান আর রাজনৈতিক আড্ডায় এখন আলোচিত হচ্ছে শত শত নেতাকর্মী আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাটি তুমুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিষয়টি মহেশপুর কোটচাঁদপুরে দর্ঘীদিনের আওয়ামী লীগের কোন্দলের বহি:প্রকাশ কিনা তা নিয়ে ইতিমধ্যেই সন্দেহ দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে আওয়ামীলীগ নেত্রী পারভিন তালুকদার মায়া এমন ইঙ্গিত দিয়ে সংবাদ মাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হেয় প্রতিপন্ন ও আমার জনসমর্থনে ভীত হয়ে খাবারের মধ্যে কিছু দিতে পারে। অন্যদিকে বর্তমান স্থানীয় এমপি নবী নেওয়াজ পাল্টা অভিযোগ করে বলেছেন, পারভিন তালুকদার মায়া আ’লীগের কোন নেতা নয়। অথচ দলের নাম ভাঙ্গিয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ থেকে এখানে এসে লোকজন জড়ো করে নেতাকর্মীদের জীবন হুমকীর মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। আগে তিনি রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট করতেন, আর এখন নি¤œমানের খাবার দিয়ে নেতাকর্মীদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা সৃষ্টি করছেন বলে এমপি নবী নেওয়াজ অভিযোগ করেন। এই দুই নেতার পাল্টাপালি বক্তব্যেই প্রমান করে মহেশপুর-কোটচাঁদপুর সংসদীয় আসনে আওয়ামীলীগের মধ্যে তীব্র কোন্দল বিরাজমান। তথ্য নিয়ে জানা গেছে ঝিনাইদহ-৩ আসন নিয়ে আওয়ামীলীগে ৫টি গ্রæপ মাঠে রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য নবী নেওয়াজ, সাবেক এমপি এড. শফিকুল আজম খান চঞ্চল, সাবেক এমপি মায়া তালুকদার, শাহাজালাল ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাজ্জাতুজ জুম্মা ও ব্যারিষ্টার মোহাম্মদ আলীর গ্রæপ মাঠে রয়েছে। ওই নির্বাচনীয় এলাকার নেতাকর্মীরা বহুধা মতে বিভক্ত। আর এই বিভক্তির সুযোগ নিয়ে কোন পক্ষ খাবারে কিছু দিতে পারে বলে এখন সাধারণ মানুষ মনে করছেন। গত মঙ্গলবার মহেশপুর হাইস্কুল মাঠে বঙ্গবন্ধু স্যাটালাইট উৎক্ষেপে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে আনন্দ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করেন ঝিনাইদহ-৩ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী পারভিন তালুকদার মায়া। সেখানে নেতাকর্মীদের মাঝে বিরিয়ানি বিতরণ করা হয়। সেই খাবার খেয়ে বুধবার শাতাধীক মানুষ বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হন। অন্যদিকে এই রেশ কাটতে না কাটতে কোটচাঁদপুর উপজেলা শহরের বাসষ্ট্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এই দুইটি দলীয় কর্মসুচির আয়োজক ছিলেন মনোনয়ন প্রত্যাশী পারভিন তালুকদার মায়া। আওয়ামী লীগের সক্রিয় অন্যান্য গ্রæপ এ সব কর্মসুচিতে অংশ গ্রহন করেন নি। কোটচাঁদপুরের সমাবেশেও একই ধরণের খাবার বিতরণ করা হয়। সেই খাবার খেয়ে প্রায় চারশ মানুষ ফুড পয়জনিংয়ে আক্রান্ত হন। আ’লীগ নেত্রী মায়া তালুকদার ছাড়াও তার স্বামী মোহাম্মদ আলী তালুকদার ফারুকও অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ নিয়ে চিকিৎসকদের মাঝে প্রশ্ন উঠেছে দুই সমাবেশের খাবার কি করে বিষাক্ত হলো ? এদিকে ঘটনা তদন্তে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি। একই ব্যক্তির পৃথক দুই সমাবেশের খাবার খেয়ে অসুস্থ হওয়ার ঘটনা পুলিশের পাশাপাশি সরকারে একাধীক গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করছে। তারা খাবার সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠিয়েছে। রান্নার কাজে নিয়োজিত বাবুর্চিদেরও পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেন ঝিনাইদহ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও তদন্ত কমিটির প্রধান কনক কুমার। তিনি শুক্রবার সকালে জানান, এখনো পর্যন্ত কারো সংশ্লিষ্টতার তথ্য মেলেনি। তবে খাবার পরীক্ষার পর কি ধরণের রেজাল্ট আসে সেই অপেক্ষায় রয়েছি। তিনি বলেন, আমরা সব সংস্থার রিপোর্টগুলো এক জায়গায় করার চেষ্টা করছি। এদিকে শুক্রবার দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দল কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরিদর্শনে আসেন। সেখানে তারা খাবার, রোগীর মল ও বমি পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করেন। এ সময় তারা ৫৪ জনের সাক্ষাতকার গ্রহন করেন। কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ শাহাবুদ্দীন এ খবর নিশ্চিত করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ