Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

অসুস্থ নেছারাবাদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

চিকিৎসক, শয্যা সঙ্কট ও কোম্পানির প্রতিনিধিদের দাপট

| প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মোঃ হাবিবুল্লাহ-নেছারাবাদ (পিরোজপুর) থেকে : ডাক্তার, জনবল সঙ্কট আর ভূঁইফোড় ভিটামিন কোম্পানীর প্রতিনিধিদের দাপোটে মুখ থুবড়ে পড়তে বসছে পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লের চিকিৎসা সেবা । আবার যে কজন ডাক্তার রয়েছেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ হাসপতালে চিকিৎসা দেওয়ার চাইতে বেশি ব্যস্ত থাকেন সিজারিয়ান অপারেশন বাণিজ্যে। আড়াই লাখ মানুষের বসবাসকৃত এ উপজেলার সাধারন মানুষ এখন ডাক্তারের অপেক্ষায় দিনক্ষন গুনছে। কিন্ত খুবশিঘ্রই এর সমাধান মিলছে না বলে জানিয়েছে নেছারাবাদ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ।
নেছারাবাদ উপজেলা সাস্থকমপ্লেক্সের এলাকার মানুষের চিকিৎসা সেবা দিতে ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ৩১ শয্যা বিশিষ্ট একটি আধুনিক হাসপাতাল। ২০০৭ সালে এটিকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, মঞ্জুরীকৃত বিভিন্ন পদে জনবল থাকার কথা ১৭১জন সেখানে প্রথম শ্রেণির ২১জনের মধ্য ৭জন, দ্বিতীয় শ্রেণির ২৫টি পদের মধ্য ২৫ জন থাকলেও, তৃতীয় শ্রেণির ১০২টি পদের মধ্য জনবল রয়েছে ৯১টিতে এবং চতুর্থ শ্রেণির ২৩ টি পদের জনবল রয়েছে ১৯টিতে। এছাড়া জরাজীর্ণ ভবনে চলছে জরুরী বিভাগের কার্যক্রম। রয়েছে এ্যাম্বুলেন্স সমস্যা। এছাড়াও জনবল সঙ্কট, আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না রোগিরা।
প্রতিদিন নিজ উপজেলাসহ আশপাশের এলাকা থেকে রোগি আসছে এ হাসপাতালে। উপরিউক্ত সমস্যার কারনে যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে রোগীদের।
সরেজমিনে গত কয়েক দিন ধরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় ডায়রিয়াসহ নানা রোগ নিয়ে রোগীরা সিট না পেয়ে হাসপাতালের বিভিন্ন ফ্লোরে অবস্থান নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালে থাকা কমসংখ্যক এ ডাক্তাররা হিমসিম খাচ্ছেন রোগীদের চিকিৎসা দিতে। একই সাথে হাসপাতালে বেড়েছে অখ্যাত ভিটামিন কোম্পানির স্থানীয় বখাটেদের প্রভাব। সর্বদা ওই বখাটেরা অবস্থান নিয়ে থাকেন ডাক্তারের চেম্বারে। রোগীরা ডাক্তারের কাছে শরীরের দুর্বলের কথা বলা মাত্রই তাদের প্রেসক্রাইবড করে দেওয়া হচ্ছে বখাটেদের নিম্মমানের ওইসব ভিটামিন। তবে কোন কোন চিকিৎসকরা বলছেন আমরা এসব ভিটামিন ওষুধ না লিখলে ওইসব বখাটেদের পক্ষ থেকে নানাভাবে হুমকি ধামকি আসছে। কখনো কখনো তারা জোটগত হয়ে বিভিন্ন মহলে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করার চেষ্টা করছেন। তাদের রাজনৈতিক ও স্থানীয় প্রভাবে অনেকটা বাধ্য হয়ে রোগীদের প্রেসক্রিপসনে দু‘একটা ভিটামিন ওষুধ লিখতে হচ্ছে। অন্যাথায় হাসপাতালে রোগীদের সঠিকভাবে চিকিৎসা দেওয়া আমাদের কাছে কষ্টকর হয়ে দাড়াচ্ছে।
হাসপাতালের টিএইচও ডাঃ তানভীর আহম্মেদ সিকদার বলেন, মানবিক কারনে তাদের ওইসব দু‘একটা ভিটামিন ওষুধ ডাক্তররা প্রেসক্রিপসনে লিখছেন। তবে রোগীরা আমাদের কাছে দুর্বলের কথা বললে প্রতিষ্ঠিত ঔষধ কোম্পানীর কোন মাল্টিভিটামিন না লিখে স্থানীয়দের ওইসব অখ্যাত ভিটামিনের ওষুধ লিখা হলে একঅর্থে রোগীদের সাথে প্রতারিত করা হচ্ছে। কারন রোগীরা এসব ভিটামিন খেলে শরীরে কোন কাজও হচ্ছেনা ক্ষতিও হচ্ছেনা। ফলাফল হচ্ছে শূন্য। অপরধারে রোগীরা হচ্ছে প্রতারিত। অনেকসময় তাদের স্থানীয় প্রভাব ও অনেকটা মানবিক কারনে অখ্যাত ওই ভিটামিন রোগীদের প্রেসক্রিপড করে দিতে হচ্ছে।
নাম না প্রকাশের অনুরোধে কয়েকজন ওষুধ দোকানি বলেন, বখাটেদের এসব ভিটামিন বরিশালে যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন কোম্পানীর। এসব ভিটামিন খেলে রোগীরা আরোগ্যর পরিবর্তে উল্টো রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে। এসব কোম্পানীর প্রতিনিধিরা ডাক্তারের প্রেসক্রিপসনে সারা দিনে দু‘একটা ভিটামিন লিখাতে পারলেই তাদের দিনের বাজারের পয়সা সংগ্রহ হয়ে যায়। তবে এক্ষেত্রে ডাক্তারদের কোন দোষ দেখা যাচ্ছেনা। তারা আত্মসম্মানের ভয়ে ওইসব স্থানীয়দের ভিটামিন লিখে দিতে বাধ্য হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে হাসপাতালের প্রধান কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একটু শক্ত হলেই এসব দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে বলে তারা মনে করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ