পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মোক্তার হোসেন মোল্লা (সোনারগাঁ) ও মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল (চান্দিনা) : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানজট কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। চার লেনের মহাসড়ক উদ্বোধনের পর থেকে মেঘনা ও গোমতী সতুতে যানজট লেগেই ছিল। এক সপ্তাহ ধরে তা মহাসড়কের ফেনীর ফতেহপুর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। গত তিন দিন ধরে আবারও তা আগের স্থানে অর্থাৎ মেঘনা ও গোমতী সেতু এলাকা ছাপিয়ে ঢাকার মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার পর্যন্ত এসে ঠেকছে। গত বুধবার ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত যানজটে আটকা পড়ে হাজার হাজার গাড়ি। তাতে কয়েক লক্ষ মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অস্বাভাবিক এ যানজটে প্রতিদিন লাখ লাখ যাত্রীদেরকে যেমন সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্যে পড়ছে বিরুপ প্রভাব। দিন দিন ব্যবসায়ীরাও ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠছেন। এতে করে দেশের অর্থনীতিতে বিরুপ প্রভাব পড়ছে। হু হু করে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। যার খেসারত দিচ্ছে সাধারণ জনগণ।
অর্থনীতির লাইফ লাইনখ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে সচল রাখতে চার লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ২০০৬ সালে শুরু করে ২০১২ সালের মধ্যে চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ছিল। সে সময় প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ১৬৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। পরে প্রকল্পের মেয়াদ চার দফা বাড়িয়ে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর করা। পাশাপাশি প্রকল্প ব্যয়ও তিন দফা বাড়ে। সর্বশেষ ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়ক নির্মাণে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮১৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। তিনটি ফ্লাইওভারের কাজ বাকী রেখেই শেষ পর্যন্ত চার লেনের এই মহাসড়ক উদ্বোধন করা হয়। অথচ উদ্বোধনের পর থেকে এই মহাসড়কে যানজট লেগেই আছে। যে আশায় মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করা হয়েছিল তা অনেকটাই গুঁড়েবালি। দিন যতো যাচ্ছে এই মহাসড়কটি ততোই অচল হয়ে পড়ছে। উদ্বোধনের এক বছরের মাথায় নষ্ট হয়ে গেছে চার লেনের অনেকাংশ। সেগুলো মেরামতের আগে যানবাহনের চাপে নিয়ন্ত্রণহীন যানজটে একেবারে অচল হতে চলেছে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটি।
প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর ফতেহপুর এলাকায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। গত মঙ্গলবার বিকাল থেকে ফেনীতে যানজট পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এর প্রভাব পড়তে থাকে মহাসড়কের মেঘনা সেতুর দুই পাড়ে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মেঘনা সেতুর দুই পাশ থেকে মদনপুর বাসষ্ট্যান্ড হয়ে কাঁচপুর থেকে শনিআখড়া পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। ২ মিনিট গাড়ী চললে ২০ মিনিট বসে থাকতে হয়। মহাসড়ক থেকে বিভিন্ন শাখা সড়কেও যানজট দেখা দেয়। যানজটের কারণে দুরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন প্রকারের যানবাহন রাস্তায় আটকা পড়ে। এতে এ মহাসড়কে চলাচলরত যাত্রীরা নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর (টিআই) মোল্লা তাসলিম হোসেন জানান, গত মঙ্গলবার থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে এ যানজট ছড়িয়ে পড়েছে যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া পর্যন্ত। থেমে থেমে যানবাহন চলতে থাকে। যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিন যাবত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। গত মঙ্গলবার ভোর রাত থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানচলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এতে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগীয় জেলাগুলোর দুরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসসহ শত শত যানবাহন রাস্তায় আটক পড়ে। এতে যাত্রীরা ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় আটকে পড়ে নানা বিড়ম্বনায় কাটাতে বাধ্য হন। রাতে যানজট নিরসনে অতিরিক্ত পুলিশ কাজ করলেও যানজট দুর করতে তারা ব্যর্থ হন। মহাসড়কের মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকার ব্যবসায়ী ইব্রাহিম জানান, তিনি ভোরে ফজরের নামাজ আদায় করে আনারস কিনতে যাত্রাবাড়ী আড়তে যান। আড়ত থেকে আনারস ক্রয় করে তিনি বেলা ১টার সময় মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় এসে পৌঁছান।
বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী জাহিদ হাসান জানান, গত বুধবার রাত ৯টার সময় তিনি গুলিস্তান থেকে বাসে ওঠেন। যেখানে যেতে মাত্র ৪০ মিনিট লাগে সেখানে মোগরাপাড়া চৌরাস্তা পৌঁছাতে রাত ২টা বেজে যায়। তিনি বলেন, এভাবে মহাসড়কে যানজটের কারনে সময়ের অপচয় হচ্ছে, পুড়ছে জ্বালানী, বাড়ছে ভোগান্তি। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য সরকারকে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। নয়তো ভবিষ্যতে এটি আরও ভয়াবহ রূপ ধারন করবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, মুলত মেঘনা সেতুর টোল প্লাজায় টোল আদায়ে ধীরগতি ও ওজন স্কেলের কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ওজন স্কেলে কিছু কতিপয় দূর্নীতিবাজ ব্যক্তি অযথা পণ্যবাহি ট্রাক ও লরিগুলোকে মহাসড়কে দাঁড় করিয়ে রেখে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করার কারণে এ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তাদের দাবিকৃত অতিরিক্ত অর্থ প্রদান না করলেই ট্রাক ও লরিগুলোকে দীর্ঘক্ষণ এলোমেলোভাবে মহাসড়কে দাঁড় করানোর কারণে অন্যগাড়ীগুলো পাস হতে পারে না। এতে মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত প্রায় ১০ দিন এই মহাসড়কের ফেনীর ফতেহপুর এলাকায় রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণের কারণে যানচলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় যানজট শুরু হয়। এ অবস্থায় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড ও কুমিরা পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি হয়েছিল। গত রোববার পর্যন্ত থাকা এই যানজট গত মঙ্গলবার শেষ হয়েছে। তবে আবারও কুমিল্লা অংশে ছড়িয়ে পড়ে যানজট। ফলে বুধবার ও বৃহস্পতিবার ফেনী-চট্টগ্রাম অংশে কোনো যানজট না থাকলেও সেটা কুমিল্লার চান্দিনা থেকে ঢাকার কাঁচপুর হয়ে যাত্রাবাড়ী মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
কুমিল্লার সহকারী পুলিশ সুপার মহিদুল ইসলাম জানান, মহাসড়কের গোমতী সেতুতে চার লেনের গাড়িগুলো উল্টো পথে আসা বন্ধ করে দুই লেনে সারিবদ্ধভাবে চলাচলের ব্যবস্থা করায় বৃহস্পতিবার ভোর ৬ টা থেকে যানজট কমতে শুরু করেছে। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম বিভাগের তোরণদ্বার কুমিল্লার দাউদকান্দি অংশে বুধবার ভোর থেকে যানজট কমতে শুরু করায় যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের দুর্ভোগ কমছে। নোয়াখালী থেকে ঢাকাগামী লোকাল বাসের চালক জালাল হোসেন বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় দাউদকান্দি বিশ্বরোড এলাকায় বলছিলেন, গত কয়েক দিন টানা ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত যানজটে আটকে ছিলাম। না খেয়ে, না ঘুমিয়ে রাত-দিন মহাসড়কেই কাটাতে হয়েছে। যানজট কিছুটা কমে আসায় স্বস্তি লাগছে। তিনি বলেন, দাউদকান্দি অংশ অতিক্রম করতে আড়াই ঘণ্টা সময় লেগেছে। হাসানপুর শহীদ নজরুল সরকারি ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শরীফুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, গত মঙ্গলবার কলেজে আসার পর যানজটের কারণে ঢাকার বাসায় ফেরা সম্ভব হয়নি। এক কাপড়ে, একই স্থানে তিন দিন কাটাতে হচ্ছে। কলেজে পরীক্ষা চলার কারণে ছুটি নেওয়ারও সুযোগ পাচ্ছি না। দাউদকান্দি পৌর প্যানেল মেয়র রকিব উদ্দিন বলেন, দিন-রাত পুলিশের সঙ্গে থেকে মহাসড়কে যানজট চলাচল স্বাভাবিক করতে কাজ করছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।