Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মশার উপদ্রবে সৈয়দপুরবাসী অতিষ্ঠ

| প্রকাশের সময় : ১৮ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে নজির হোসেন নজু : মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠছে সৈয়দপুর শহরের জনজীবন। শুধু রাতেই নয়, দিনেও মশার উৎপাত বেড়েই চলছে। দিনে-রাতে মশার উপদ্রব দিন দিন অসহনীয় হয়ে উঠছে। মশার যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে কয়েল ও এ্যারোসলসহ বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করতে হচ্ছে শহরবাসীকে। আর এ সব কিনতে শহরের মানুষকে বাড়তি টাকা গুণতে হচ্ছে। এতে করে প্রতি মাসে বিপুল অংকের টাকা ব্যয় হচ্ছে। তবু মশার হাত থেকে নিস্তার পাচ্ছেন না তারা। এতে যেমন মানুষের স্বাভাবিক কাজ-কর্ম বিঘিœত হচ্ছে, তেমনি মশাবাহিত রোগ বালাইয়ের আতংকে ভুগছেন অনেকে। এদিকে, মশার উৎপাত বৃদ্ধিতে শহর জুড়ে মশক নিধন কার্যক্রম শুরু করেছে সৈয়দপুর পৌরসভা। গত ১ এপ্রিল সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ মো. আমজাদ হোসেন সরকার মশা নিধন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। অভিযানে পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডে ড্রেন, নালা-নর্দমাসহ মশার আবাসস্থলে ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ঘিঞ্জি শহর সৈয়দপুরে মশার উপদ্রব মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। আর মশার উপদ্রব এমনই বেড়েই যে, দিনের বেলাতেও স্বাভাবিকভাবে বসে কোন কাজকর্ম করা সম্ভব হচ্ছে না। সন্ধ্যা নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে মশার উৎপাত অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে। তখন মশারির নিচে কিংবা মশা নিধন উপকরণ ছাড়া বসে থাকা দূরূহ হয়ে পড়ে। মশার উপদ্রবে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছে চলতি এইচএসসি ও আলিম পরীক্ষার্থীরা। মশার উৎপাতে তারা রাতে ঠিকভাবে লেখাপড়া করতে পারছে না। এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী শহরের বাঙালিপুর নিজপাড়া এলাকার মিফতাহুল জান্নাত মীম জানান, মশার কারণে রাতে বেলায় পড়ার চেয়ার টেবিলে বসে লেখাপড়া করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই অনেকটা নিরুপায় হয়ে তাকে মশারি টাঙিয়ে বিছানায় বসে লেখাপড়া করতে হচ্ছে।
মশার উপদ্রবে ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি বাণিজ্য প্রধান শহর সৈয়দপুরের ব্যবসায়ীরাও বিপাকে পড়েছেন। মশার কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসে থাকা দুরূহ হয়ে পড়েছে। মশার অত্যাচারে কাহিল হয়ে পড়েছেন শহরের রেলওয়ে স্টেশন, বাস টার্মিনালে রাত কাটানো অসহায় ছিন্নমূল মানুষগুলো। কারণ এসব মানুষের মশার কবল থেকে বাঁচার জন্য মশারি কিংবা মশা নিধনের উপকরণ কেনার সামর্থ্য নেই। তাই মশার উৎপাতে অনেকটা নিরুপায় হয়ে এ সব মানুষ বিনিদ্রায় রজনী কাটাচ্ছেন।
এদিকে, মশার উপদ্রব মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়ায় বাজারে মশা নিধনের উপকরনের মূল্যও অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। মশারি, কয়েল ও স্পেসহ মশা তাড়ানোর উপকরণের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় মানুষের রাতে ঘুম হারাম হয়ে গেছে। কারণ বর্তমানে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অগ্নিমূল্যের বাজারে সংসারের অন্যান্য ব্যয়ভার মিটিয়ে মশা নিধনের উপকরণ কেনা সম্ভব হচ্ছে না অনেকের পক্ষে।
প্রথম শ্রেণীর সৈয়দপুর পৌরসভা ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও এখানকার অধিকাংশ জায়গায় বাংলাদেশ রেলওয়ের। আর রেলওয়ের জমিতে অবৈধভাবে রাতারাতি গড়ে উঠছে অপরিকল্পিত বাসাবাড়ি, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন অবকাঠামো। ফলে সৈয়দপুর পৌরসভার পক্ষে পরিকল্পনা অনুযায়ী রাস্তাঘাট, নালা-নর্দমা নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
পৌর সূত্রে জানা যায়, পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ড ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে শত কিলোমিটারের বেশি ড্রেন-নর্দমা রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে বহু ডোবা, জলাশয় ও মজা পুকুর। মশার এসব আবাসস্থলে মশার বিস্তার রোধ করতে নিয়মিত পরিচ্ছন্ন কাজ করছে পৌরসভার পরিচ্ছন্ন শাখা। সেই সঙ্গে পরিচালনা করা হচ্ছে মশক নিধন অভিযান।
সরেজমিনে পৌরসভার বাঁশবাড়ী, মিস্ত্রীপাড়া, হাতিখানা, মুন্সিপাড়া, ইসলামবাগ, রসুলপুর, গোয়ালপাড়া ও নয়াটোলো এলাকা ঘুরে দেখা যায় ড্রেন-নর্দমা পরিষ্কার করা হলেও ড্রেনে পানি আবদ্ধ হয়ে থাকায় মশার বংশ বিস্তার হচ্ছে। এছাড়াও ডোবা, জলাশয় ও মজা পুকুর মশার উৎপত্তিস্থলে পরিণত হয়েছে। শহরের মিস্ত্রিপাড়া এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, মশার অত্যাচারে ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি মিলছে না। দিনের বেলাও কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমাতে হচ্ছে। সন্ধ্যার পর তো বসে বা দাঁড়িয়ে থাকা পর্যন্ত যায় না। মশার কামড়ে অতিষ্ঠ সবাই। হাতিখানা এলাকার গৃহবধূ রাজিয়া বেগম বলেন, মশার উৎপাত থেকে বাঁচতে দিনে-রাতে ২৪ ঘন্টা মশার কয়েল জ্বালাতে হচ্ছে। কয়েল কিনতে গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। কয়েল এখন দরকারি পণ্যে পরিণত হয়েছে। কেবল রাজিয়া নয়, রাজিয়ার মত পাড়া মহল্লার অধিকাংশ বাসিন্দা একই কথা বলেন।
এ ব্যাপারে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের অন্যতম নেতা মো. রুহুল আলম মাস্টার জানান, মশা নিধনে পৌরসভার উপর ছেড়ে দিলেই হবে না, এর সঙ্গে শহরবাসীকে সচেতনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। নিজের আবাসস্থল পরিচ্ছন্ন রাখতে বসবাসকারীদের সহযোগিতা করতে হবে। বাড়ির ময়লা-আবর্জনা যেখানে সেখানে না ফেলে ডাস্টবিনে ফেলা উচিত। এমনটি করা হলে মশার উৎপাত অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
মশা নিধন কার্যক্রম সম্পর্কে সৈয়দপুর পৌর কাউন্সিলর ও পরিচ্ছন্ন শাখার একটি সূত্র জানায়, মশা নিধন করতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রতিটি ওয়ার্ডের ড্রেন-নর্দমা বাসাবাড়ি ও মশার আবাসস্থলে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। এ কাজ নিবিড়ভাবে করতে ফগার মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। মশা বিস্তারের উৎস মশার ডিম ও লার্ভা ধ্বংসে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অভিযান নিয়মিতভাবে পরিচালিত হওয়ায় এর সুফল শিগগির পাওয়া যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ