দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) মনে করে দশম জাতীয় সংসদ বর্জন ও ওয়াকআউটের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসেছে।
‘পার্লামেন্টওয়াচ’ নামে সংসদ বিষয়ে চতুর্দশ থেকে অষ্টাদশ অধিবেশনের ওপর তাদের এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায় নবম জাতীয় সংসদের তুলনায় দশম জাতীয় সংসদে সদস্যদের গড় উপস্থিতিও বেশি ছিল।
প্রতিবেদন অনুযায়ী নবম সংসদে সদস্যদের উপস্থিতি ছিল ৭৭ শতাংশ, যা বর্তমান দশম সংসদে ৮৮ শতাংশ। নবম সংসদে বিরোধী দল বা জোট ওয়াকআউট করেছে ১৪ বার এবং সংসদ বর্জন করেছে ৮৩ শতাংশ কার্যদিবস। অথচ দশম জাতীয় সংসদে সংসদ বর্জন ও ওয়াকআউটের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি’র নিজস্ব কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন রিসার্চ ও পলিসি বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোরশেদা আক্তার, নিহার রঞ্জন ও অ্যাসিসটেন্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার অমিত সরকার। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন টিআইবি ট্রাস্টিবোর্ডের চেয়ারম্যান এডভোকেট সুলতানা কামাল, নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার জুলিয়েট রোজেটি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী দশম জাতীয় সংসদের প্রথম থেকে অষ্টাদশ অধিবেশন পর্যন্ত প্রতি কার্যদিবসে সদস্যদের গড় উপস্থিতি ছিল ৭২ শতাংশ, সংসদ নেতার উপস্থিতি ৮৩ শতাংশ, বিরোধী দলীয় নেতার উপস্থিতি ৬১ শতাংশ, নারী সদস্যদের উপস্থিতি ৬৯ শতাংশ, প্রতিটি বিল পাসের গড় সময় লেগেছে ৩১ মিনিট।
প্রতিবেদনে সংসদকে অধিকতর কার্যকর করার জন্য দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক এ প্রতিষ্ঠান ১৪টি সুপারিশও উপস্থাপন করেছে।
টিআইবির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দশম জাতীয় সংসদে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সংসদের ১৪তম থেকে ১৮তম অধিবেশন পর্যন্ত মোট কার্যদিবস ছিল ৭৬টি। এ সময়ে ২৬০ ঘণ্টা ৮ মিনিট সংসদ চলেছে। প্রতিদিন গড়ে ৩ ঘণ্টা ২৫ মিনিট সংসদ চলেছে। এসব অধিবেশনে গড় উপস্থিতি ছিল ৩০৯ জন সদস্য। এ সময়ে ২৪টি সরকারি বিল পাস হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায়। এ কাজে ৬৬ শতাংশ সময় ব্যয় হয়েছে।
এ সময় সরকারি ও বিরোধী উভয় দলের সংসদে দেয়া বক্তব্যে আর্থিক খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির উল্লেখ করাসহ বাজেটে প্রস্তাবিত বিষয়ের ওপর গঠনমূলক আলোচনাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে টিআইবি।
টিআইবি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী চতুর্দশ থেকে অষ্টাদশ অধিবেশনে মোট ২৪টি সরকারি বিল পাস হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ২৩ ঘন্টা ২৮ মিনিট সময় ব্যয় হয়। বিলের উপর মোট ২৬ জন সদস্য ৩৩ শতাংশ সময় আলোচনা করে। এই সময়ের মধ্যে প্রধান বিরোধী দল ৯৩ দশমিক ৫ শতাংশ সময় অংশগ্রহণ করেন। বাজেট আলোচনায় ৬৬ ঘন্টা ৩৪ মিনিট সময় ব্যয় হয়, যা মোট সময়ের ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ। মূল বাজেটের ওপর আলোচনায় ১৯০ জন সদস্য প্রায় ৫০ ঘন্টা ৫৯ মিনিট (৭৭%), ১৪ জন সদস্য সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় প্রায় ৪ ঘন্টা ২১ মিনিট (৬%) এবং ৪৩ জন সদস্য মঞ্জুরী দাবি উত্থাপন ও এ সম্পর্কিত আলোচনায় প্রায় ৪ ঘন্টা ২৭ মিনিট (৬%) অংশগ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্ব মোট ৭টি কার্যদিবসে অনুষ্ঠিত হয়। এই পর্বে মোট ২০জন সদস্য অংশ নেন, যাদের মধ্যে ১৩ জন সরকারি দলের, ৫ জন প্রধান বিরোধী দলের এবং ২ জন অন্যান্য বিরোধী দল। এই পর্বে সবচেয়ে বেশি ছিল জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা ও দারিদ্র্য বিমোচন (৩৮%) বিষয়ক প্রশ্ন। মন্ত্রীদের প্রশ্নোত্তর পর্বে ২৯টি কার্য দিবসে মোট ১৫৩জন সদস্য অধিবেশনের প্রায় ১২ দশমিক ৪ শতাংশ সময় অংশ নেন। উত্থাপিত প্রশ্নগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (১৬টি) মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত।
এ সময়ে ৫০টি স্থায়ী কমিটির মধ্যে ৪৬টি কমিটি মোট ৯শ’টি সভা করে। এরমধ্যে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি সর্বোচ্চ ৫২টি সভা করে। ৫০টি স্থায়ী কমিটির মধ্যে ১৬টি কমিটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ১১টি কমিটির সদস্যদের সার্বিক গড় উপস্থিতি ৫৬ শতাংশ, ৫টি কমিটির প্রতিবেদনে উপস্থিতি সংক্রান্ত তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়নি। প্রকাশিত প্রতিবেদনের ৪১ শতাংশ সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়েছে এবং ৪৬ শতাংশ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।