Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তালিকায় ৫’শ জনের নাম

| প্রকাশের সময় : ১৬ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বেপরোয়া ছিনতাইকারীদের জন্য পুলিশের ‘রেড সিগন্যাল’
মো: শামসুল আলম খান,ময়মনসিংহথেকে: বাড়ি ফিরতে নগরীর পাটগুদাম ব্রিজ মোড় বাসস্ট্যান্ডে যানবাহনের অপেক্ষায় ছিলো আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী ইব্রাহীম খলিল (২৪)। হঠাৎ করেই তাঁর হাতে থাকা মোবাইল নিয়ে চম্পট দেয় ছিনতাইকারী। ইব্রাহীম ধাওয়া করে ধরে ফেলে তাকে।
কিন্তু তাঁর বাম উরুতে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারী। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন শিক্ষার্থী ইব্রাহিম। ঘটনাটি চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারির। এর ঠিক সাত দিনের মাথায় নগরীর বলাশপুরে এ হত্যা মামলার প্রধান আসামি ছিনতাইকারী গ্রæপের সর্দার নাঈম (২৫) ডিবি পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।
মাত্র তিন দিন আগের ঘটনা। মধ্যরাতে বাসায় ফেরার পথে ছিনতাইয়ের শিকার হন ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের শিক্ষক মোবারক মোর্শেদ মিল্কী। ছিনতাইকারীরা তাকে ছুরিকাঘাত ও কুপিয়ে আহত করে সর্বস্ব লুটে নেয়। ঘটনার পরের দিনেই পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার হওয়ার পর বন্দুকযুদ্ধে মারা যানপেশাদার ছিনতাইকারী সিরাজুল (২৩)।
খন্ড খন্ড এ দু’টি ঘটনার মধ্যে দিয়ে ময়মনসিংহ নগরীর বেপরোয়া ছিনতাইকারী চক্রকে এমন ‘লাল বার্তা’ বা ‘রেড সিগন্যাল’ দিয়েছে পুলিশ। এ দুই ছিনতাইকারী ছাড়াও শীর্ষ ছিনতাইকারী আব্দুস সালাম ওরফে কালা মিয়াও বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
দিন দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠা ছিনতাইকারীদের রাশ টেনে ধরতে এবং আসন্ন মাহে রমজান ও ঈদে অপ্রতিরোধ্য ছিনতাইকারীদের ঠেকাতেজেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) হালনাগাদ তালিকা প্রস্তুত করে অভিযান শুরু করেছে। এ তালিকায় ওঠে এসেছে প্রায় ৫ শতাধিক ছিনতাইকারীর নাম-ঠিকানাসহ আদ্যোপান্ত।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: আশিকুর রহমান জানান, জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) সৈয়দ নুরুল ইসলামের নির্দেশে পেশাদার ছিনতাইকারীদের তালিকা তৈরি করে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। এ তালিকায় থাকা শতাধিক ছিনতাইকারীর বিরুদ্ধে ৫ থেকে ৬ টি করে মামলা রয়েছে।
বাদ বাকী ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধেও আছে একাধিক মামলা। এ তালিকার বাইরেও এমন ছিনতাইকারীও রয়েছেন যারা কখনোই পুলিশের ধরপাকড়ের মুখে পড়েনি কিংবা মামলার আসামিও হয়নি। এ সুযোগে নানা কৌশলে ছিনতাইয়ের ধরণ পরিবর্তন করে নির্বিঘেœ অপকর্ম করে যাচ্ছে।
জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে ময়মনসিংহ নগরীতে ছিনতাইকারীদের দৌরাতœ বেড়ে যাওয়ায় এসব অপরাধীদের ধরতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে পুলিশ। এরপরেও সাধারণ মানুষ বা পথচারী তাদের শিকারে পরিণত হচ্ছেন। মোবাইল টিম বাপোশাকধারী পুলিশের তৎপরতা থাকলেও ছিনতাই ঠেকানো যাচ্ছে না। বড় ধরণের ঘটনাও ঘটে যাচ্ছে অনেক সময়।
পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, রমজানে ঈদের কেনাকাটায় যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি লেনদেন হয়। ফুটপাত থেকে বিপণি-বিতান জমজমাট হয়ে ওঠে ব্যবসা বাণিজ্য।কেনাকাটা করতে প্রতিদিন গ্রাম থেকে অনেক মানুষ ঢাকায় আসে।
ফলে এ সময়টাকেই টার্গেট করে পেশাদার ছিনতাইকারী চক্র। বিপণি-বিতানের আশেপাশে বা নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে সুযোগ বুঝেই শিকার করে এরা।
আবার এ দুই সময় ছাড়াও ছিনতাই স্পট হিসেবে পরিচিত নগরীর পাটগুদাম ব্রিজ মোড়, সানকিপাড়া রেল ক্রসিং, চরপাড়া, কেওয়াটখালী, গাঙ্গিনারপাড়সহ কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ টি পয়েন্টে অবস্থান নেয়।
ছিনতাইকারীরা মধ্যরাতে কিংবা ফজরের নামাজের পর পরই ফাঁকা রাস্তায় উৎপেতে থাকা ছিনতাইকারী চক্র নিজেদের বেপরোয়াভাবের কথা জানান দিচ্ছে। এরা টার্গেট করে অস্ত্র ঠেকিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে কিংবা আঘাত করে মানুষজনের সর্বস্ব লুটে নেয়।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তালিকা মতে, নগরীর ৫ শতাধিক ছিনতাইকারীদের বেশিরভাগই নগরীর ‘অপরাধ জোন’ হিসেবে পরিচিত কৃষ্টপুর এলাকার। এর বাইরে শহরতলী দিঘারকান্দা, চর ঈশ্বরদিয়া, গলগন্ডা, চর জেলখানা, নগরীর চরপাড়া, ভাটিকাশর, বলাশপুর ও কাশরসহ বিভিন্ন এলাকার ছিনতাইকারী রয়েছে তালিকায়।
পুলিশের রেকর্ড মতে, গত দুই বছরে কোতোয়ালী মডেল থানায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা হয়েছে মাত্র ১৮ টি। এ সময়টাতে অহরহ ছিনতাই হলেও এতো কম মামলার বিষয়েজেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ছিনতাইকালে কোন আহত বা নিহত না হলে বেশিরভাগ ঘটনাতেই মামলা হয় না।
ছিনতাইয়ের শিকার মানুষজনই ঝক্কি-ঝামেলা এড়ানোর জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুলিশের শরণাপন্ন হন না। ফলে সহজেই চাপা পড়ে যায় ছিনতাইয়ের ঘটনা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, পুলিশের সর্বাতœক প্রচেষ্টায় ছিনতাইয়ের ঘটনা অতীতের চেয়ে অনেক কমেছে। ছিনতাই প্রতিরোধ ও জনসাধারণের চলাচল নির্বিঘœ করতে ছিনতাই নির্মুলে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স। ছিনতাইকারীদের কোন আস্তানা ময়মনসিংহে থাকবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ