পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : কমলাপুর রেল স্টেশনে গতকাল দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রেনের কাউন্টারগুলোতে লম্বা লাইন। লম্বা সারিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পর কাউন্টারে এসে প্রায় সবারই চাহিদা চট্টগ্রামের টিকিট। কাউন্টার মাস্টারের জবাব, চট্টগ্রামের কোনো টিকিট নাই। একজন যাত্রী অসহায়ের ভঙ্গিতে বললেন, তাহলে কাল বা পরশুর টিকিট দেন। উত্তরে কাউন্টার মাস্টার বলেন, ১০ দিন পরে গেলে আগামীকাল সকালে আসেন। অর্থাৎ চট্টগ্রামের টিকিট ১০ দিন আগেই সব শেষ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সৃষ্ট যানজটের কারনে মানুষ আর সড়কপথে চট্টগ্রাম যাওয়ার সাহস করছে না। ৪ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে এখন লাগছে কমপক্ষে ১৭ থেকে ২০ ঘণ্টা। মহাড়কের ফেনী বাইপাস অংশের ফতেহপুরে নির্মাণাধীন রেলওয়ে ওভারপাস এর কারণে সৃষ্ট যানজট ক্রমে ভয়াবহ আকার ধারন করছে। প্রতিদিনই এর ভয়াবহতা বাড়ছে। ফেনীর মহিপাল থেকে ফতেহপুর পর্যন্ত মাত্র ৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে লাগছে ৬ থেকে ১২ ঘণ্টা। এছাড়া চার লেনের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অনেকাংশ ভেঙ্গে খানাখান্দের সৃষ্টি হওয়ায় যান চলাচলে বিঘœ ঘটছে। ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, সড়ক বিভাগ বিকল্প ব্যবস্থা না করায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তাদের সদিচ্ছা থাকলে পুরাতন সড়কটি মেরামত করে বিকল্প হিসাবে ফেনীর ভিতর দিয়ে যান চলাচলের ব্যবস্থা করতো। এদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলমান যানজট নিরসনের দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে পরিবহন মালিক শ্রমিকরা। আজ সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাস না চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন তারা। গতকাল রোববার আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন বলেন, ফেনী ও দাউদকান্দিতে চলমান যানজট ও যাত্রী ভোগান্তি নিরসনের দাবিতে বাস মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন যৌথভাবে এ ধর্মঘট ডেকেছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকার সায়েদাবাদ টার্মিনাল বাস মালিক সমিতির এক নেতা বলেন, এভাবে আর কতোদিন চলবে? কুমিল্লা বিশ্বরোড থেকে ফেনী পর্যন্ত যেতে সময় লাগছে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে বসে থাকতে থাকতে চালকরা ঘুমিয়ে পড়ছে। মহিলা যাত্রীদের প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দেয়ার মতো অবস্থা নেই। কী যে ভয়াবহ পরিস্থিতি তা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। তিনি বলেন, ফেনীর অংশে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান থামিয়ে পুলিশ ২শ’ টাকা করে চাঁদা তোলে। যানজটের ভয়াবহতার জন্য এটাও একটা বড় কারন। সামনে রমজানে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কা করে ওই নেতা বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ সড়কে এ পরিস্থিতি মেনে নেয়া যায় না। স্থানীয়রা জানান, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স¤প্রতি ফতেহপুর ওভারপাসের নির্মাণকাজ পরিদর্শনকালে বলেছিলেন, ওভারপাসটির কাজ অর্ধেক শেষ হয়েছে। মে মাসে এটি অর্ধেক বা দুই লেন খুলে দেওয়া হবে। তখন যানজট কমে যাবে। গতকাল রোববার সচিবালয়ে তিনি একই প্রসঙ্গে বলেন, আগামী ২৫ দিনের মধ্যে ওভারপাসের নির্মাণ কাজ শেষ হবে। মন্ত্রীর কথামতো রমজানেও যানজটের ভয়াবহতা কমবে না।
অর্থনীতির লাইফলাইন বলে খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটে প্রতিদিন গড়ে ক্ষতি হচ্ছে কমপক্ষে ২৭৪ কোটি টাকা। অবশ্য এটি পুরনো হিসাব। বর্তমান হিসাবে এর পরিমান ৩শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। ২০১৫ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের সময় সওজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের কারণে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। আর যাতায়াতে সময় অপচয়ের কারণে যাত্রীদের ক্ষতি ১ হাজার কোটি টাকা। দুর্ঘটনা ও ভাঙাচোরা সড়কের কারণে যানবাহনের ক্ষতি ৫৭০ কোটি টাকা। এছাড়া যানজটে জ্বালানী অপচয় হয় ২ হাজার কোটি টাকার, পরিবেশগত ক্ষতি ১ হাজার কোটি, স্বাস্থ্যগত ক্ষতি ৩০০ কোটি ও অন্যান্য ক্ষতি ১০০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে মোট ক্ষতি ৯ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। এ হিসাবে দিনে ক্ষতি ২৭৪ কোটি টাকা। ৩ হাজার ৮১৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের মহাসড়কটি অর্থনীতির সমৃদ্ধির জন্য কোনো কাজেই আসছে না। বরং এই চার লেন দিয়ে মালামাল আনানেওয়া করতে গিয়ে যানজটের কারনে অর্থনীতিতে বিরুপ প্রভাব পড়ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারন যাত্রী, পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। সাথে সীমাহীন ভোগান্তি তো আছেই।
সওজ সূত্র জানায়, ২০১২ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাড়কের ফেনী বাইপাস অংশের ফতেহপুরে রেলওয়ে ওভারপাসটি নির্মাণের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শিপো পিবিএল। একপর্যায়ে স্থানীয় চাঁদাবাজদের কবলে পড়ে তারা কাজটি শেষ না করে পালিয়ে যায়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০১৭ সালের শেষের দিকে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশনকে ওভারপাসটি নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয়। ৬০ কোটি ৫১ লাখ ১৮ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। ওভারপাসটি চালু হলে রাজধানী ঢাকা আর বন্দরনগরী চট্টগ্রামের গাড়িগুলো দ্রæত চলাচল করতে পারবে। ফেনী শহরের মহিপালে নির্মিত দেশের বৃহৎ ৬ লেনের ফ্লাইওভারেরও সুফল মিলবে। কিন্তু ওভারপাস নির্মাণকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন ধরেই ব্যস্ত মহাসড়ক যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে। এতে করে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের অন্তঃহীন দুর্ভোগের পাশাপাশি কাঁচামালসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য গন্তব্যে পৌঁছতে বিলম্ব হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ঢাকা থেকে গার্মেন্টস পণ্যও যথাসময়ে বন্দরে পৌঁছতে না পারায় রফতানীর শিডিউল বিপর্যয় ঘটছে। সূত্র জানায়, প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মহাসড়কে ৩ হাজারেরও বেশি ট্রাক-কাভার্ডভ্যান আমদানী রফতানি পণ্য পরিবহনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচল করে।
বাংলাদেশ পণ্য পরিবহন মালিক ফেডারেশনের মহাসচিব আবু মোজাফফর জানান, ফতেহপুুরে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটের কারনে কাঁচামাল গন্তব্যে পৌঁছতে দেরি হচ্ছে। ঢাকা থেকে শিল্প পণ্যও চট্টগ্রাম বন্দরে সময়মতো পৌঁছানো যাচ্ছে না। একইভাবে চট্টগ্রাম থেকেও কোন পণ্য সময়মতো ঢাকায় আনা যাচ্ছে না। পথিমধ্যে অনেক পণ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবার দীর্ঘক্ষণ বসে থাকায় চালক-হেলপারদের শারিরীক অসুস্থতাও বাড়ছে। স্টার লাইন গ্রæপের নির্বাহী পরিচালক জাফর উদ্দিন জানান, ভয়াবহ যানজটের কারণে গাড়ীর ট্রিপ কমে গেছে। অথচ যাত্রী পরিবহন করতে গিয়ে এখন অতিরিক্ত জ্বালানী তেল, যান্ত্রীক খরচ, চালক-হেলপার খরচ বেড়েছে। একদিকে আয় কমলেও অন্যদিকে আগের তুলনায় গাড়ী প্রতি অন্তত ৬ হাজার টাকা খরচ বেড়ে গেছে।
মহাসড়কে প্রতিনিয়ত পণ্য আমদানী-রপ্তানী করে রাজধানীর এহসান গ্রæপ। কোম্পানীর পরিচালক এনামুল হক জানান, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে গাড়ী ভাড়া ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হতো। এখন তা বেড়ে ২৫হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। তিনি জানান, মঙ্গলবার ভোর ৪টায় ঢাকা থেকে পণ্য নিয়ে রওয়ানা হয়ে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় গাড়ীটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।