পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
* যানজটে আটকে পড়া চালকদের মাঝে পুলিশের শুকনা খাবার ও পানি বিতরণ
ওমর ফারুক ফেনী ও মোঃ আকতারুজ্জামান চৌদ্দগ্রাম থেকে : আল্লাহ এই যানজট আর সহ্য হচ্ছে না। কবে যে এই যানজট থেকে মুক্ত পাব তা বলতে পারছি না এভাবেই আক্ষেপ করে বলছেন যানজটে আটকা পড়া কাভার্ড ভ্যান চালক জসিম উদ্দিন। এই সময় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, গত ১১ দিনে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী ফতেহপুর যানজটের কারণে দুটি টিব (যাতায়াত) করতে পেরেছি। তিনি আরো জানান, শুক্রবার রাত ১১ টায় ছেড়ে আসি চৌদ্দগ্রামের মিয়ার বাজারে যানজটে রাত ৩ টায় আটকা পড়ি। এখন বেলা ১টা বাজে কখন কাপ্তাই গিয়ে পৌছাবো তা জানি না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন একদিকে যানজট অন্য দিকে চাঁদাবাজের চাঁদা আদায় অপরদিকে হাইওয়ে পুলিশের চাঁদার কারণে আমরা অনেকটা অসহায়। যেখানে প্রতিদিন গাড়ী চললে আমাদের আয় রোজগার হয় সেখানে গত ১১ দিনে আয় হয়েছে মাত্র ৫ হাজার টাকা। সামনে রমজান ও ঈদ আসছে কিভাবে সংসার চালাবো তা ভেবে পাচ্ছি না। কথা বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। একই কথা বললেন ঘোড়াশাল থেকে প্রাণ কোম্পানীর তরল দুধ বহনকৃত কাভার্ড ভ্যান চালাক আরিফুল ইসলাম তিনি বলেন, রাত ফোনে ৪টা মহাসড়কের মিয়ার বাজার এলাকায় যানজটে আটকা পড়ি এখন বেলা ১টার উপরে বাজে। কখন চট্টগ্রামে গিয়ে পৌছাবো নিজেরাও জানি না। চালকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন মহাসড়ক যানজট নিরসনের নামে একদল চাঁদাবাজ আমাদের থেকে দৈনিক চাঁদা আদায় করে নিচ্ছে তার ওপরে হাইওয়ে পুলিশ ও যানজটের মধ্যে থেকে চাঁদা আদায় করার কারণে যানজট লেগেই আছে। সৈয়দপুর থেকে চট্টগ্রাম পাহাড়তলী গামী চাউল বোঝাই কাভার্ড ভ্যান চালক রবিউল জানান, রাতের একটা থেকে দিনের ১ টা পর্যন্ত যানজটে আটকা পড়ে আছি। মালের মালিকরা ফোন করে আমাদেরকে গালাগাল করছে। তারা বিশ্বাসই করতে চায় না আমরা যে যানজটে আটক হয়ে আছি। গত ৯ মে বুধবার মোংলা থেকে টেকনাফ গামী গ্যাস সিলিন্ডার বাহী কাভার্ড ভ্যান চালক জামাল শরিফ জানান, গত ৪ দিন হলো ৩৩ হাজার ভাড়া নিয়ে টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।তিনি বলেন প্রতি হাজারে ১শ’ টাকা করে কমিশন ভিত্তিতে বেতন পেয়ে থাকি। চার দিনেয় আয় হয়েছে মাত্র ৩৩শ’ টাকা কবে নাগাদ গন্তব্য স্থানে পৌছাতে পারবো তা জানি না। একই কথা বললেন কাভার্ড ভ্যান চালক হাসান আলী, আবু ইউসুপ সহ আরো অনেকে। এ সময় তারা সাংবাদিকদের বলেন, গত ২ দিন না খেয়ে যানজটে আটকা পড়ে আছি। ঠিক মত গোসল করতে পারছি না। স্যানেটিশনের অসুবিধায় ভূগতেছি। ঘুমাতেও পারছি না। অনেক ক্লান্ত হয়ে যানজটে আটকা পড়ে গাড়ীর নিচে ঘুমিয়ে পরছেন।
দেশের লাইফ লাইন হিসেবে খ্যাত ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক এর অর্থনীতির মহাসড়ক এখন লাইফ লাইনে লাইফ নাই। আছে শুধু যানজট। যানজট, যাত্রীদের ভোগান্তি, চাঁদা বাজদের দৌরাদ্ধ রয়েছে। দেশের আমদানী-রপ্তানীর ৯০ শতাংশ সমূদ্র পথ দিয়ে হয়ে থাকে। যানজট হলে রপ্তানী পন্য সঠিক সময়ে চট্টগ্রাম পৌছানো যায় না। অনেক সময় রপ্তানী পণ্য জাহাজিকরণ সম্ভব হয় না। তাই গাড়ীর মালিকেরা এক- দেড় দিন বেশি সময় নিয়ে ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যানের পণ্য তুলে দিচ্ছে। পরিবহন সময় বেশি লাগার কারনে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ভাড়া দিগুন হয়ে দাঁড়িয়েছে। চট্রগ্রামে পরিবহন সঙ্কট দেখা দিয়েছে। যার কারণে দেশের অর্থনিতেতে বিরুপ প্রভাব পড়ছে। ফেনী ফতেহপুর রেলক্রসিং রে কারণেও শনিবারও মহাসড়কের দুই দিকে ফেনী থেকে চৌদ্দগ্রামের মিয়ার বাজার ও ফেনী থেকে মিরসরাই পর্যন্ত প্রায় ৮০ কি. মি. পর্যন্ত যানজট লেগেই আছে। যানজটের কারনে জনভোগান্তি যেমন বেড়ে যাচ্ছে তেমনি চাঁদা বাজদের দৌরাত্ম বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের দাবী যানজটের কারণে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। অনেকে ব্যাংকে গাড়ীর কিস্তি দিতে পারছে না।
বিজিএমইর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, যানজটের কারণে আমাদের দৈনিক কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। সঠিক সময়ে মালামাল বন্ধরে পৌছাতে পাচ্ছে না। অনেক সময় মালামাল ঢাকায় ফেরত আনতে হচ্ছে। এ জন্য আমরা বায়ারদের কাছে কৈফিয়ত দিতে হচ্ছে। এতে করে অর্থনীতিতে একটা বিরুধ প্রভাব হচ্ছে।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাহবুব আলম গতকাল শনিবার দৈনিক ইনকিলাব কে জানান, ফেনী ফতেহপুর রেলক্রসিংএর যানজটের কারণে আমরা দৈনিক কোটি কোটি টাকার লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছি। এই যানজটের কারনে দক্ষিণ পূর্ব চট্টগ্রাম অঞ্চলে পরিবহনের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে দিগুন ভাড়া দিয়ে গুনতে হচ্ছে আমাদের। পরিবহন সঙ্কটের কারণে আমরা ঠিকমত মালামাল গন্তব্যস্থানে পৌছাতে পারছি না।
আন্ত জেলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি সেক্রেটারী জাফর চৌধুরী বলেন, মহাসড়কে যানজটের কারণে দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চল চট্টগ্রামে পরিবহন সঙ্কট দেখা দিয়েছে। যেখানে প্রতিটি গাড়ীর ভাড়া মূল্য ২০-২২ হাজার টাকা সেখানে শনিবার ভাড়া মূল হচ্ছে ৪২ হাজার টাকা। যা দিগুন। পরিবহন সঙ্কটের কারণে দেশের আমদানী ও রপ্তানীতে মারাতœক দশ নেমে এসেছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের গাড়ীগুলো অনেকের কিস্তিতে নেওয়া। প্রতি মাসে ব্যাংকে কিস্তি দিতে হয়। কিন্তু যানজটের কারণে আমাদের আয় হচ্ছে না। ফলে আমরা কিস্তি দিতেও পারছি না। মহাসড়কে ২৪-২৭ ঘন্টা প্রতিটি গাড়ী আটকা পড়ে থাকে। আমরা এই যানজটের নিরসন চাই।
সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, ফেনীর ফতেহপুর রেলক্রসিংয়ে নির্মিত রেলওয়ে ওভারপাসের কারণে সৃষ্ট যানজটে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন মাইলের পর মাইল ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে পড়ে একদিকে যেমন যাত্রীদের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে না মালবাহী গাড়িগুলো। দুরদুরান্তের গাড়িগুলো মহাসড়কের ফেনী হয়ে চট্টগ্রাম নগরী ও বন্দরে পৌঁছাতে হয়। বন্দরের মালবাহী গাড়িগুলো ও চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন, নোয়াখালী ও লক্ষীপুরে যাতায়াতের একমাত্র মিডেল পয়েন্ট হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর অংশ।
এদিকে যানজটে আটকা পড়া চালক ও যাত্রীদের মধ্যে শুকনো খাবার ও পানি বিতরন করছে ফেনী পুলিশ সুপার এ এস এম জাহাঙ্গীরসহ সাধারণ মানুষ। তারা জানান ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকা পড়ার কারণে মানুষের খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে ভোগান্তী থেকে কিছুটা যেন পরিত্রান পায় তার জন্য আমরা এই ব্যবস্থাগ্রহণ করেছি। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পযন্ত যানজট অব্যাহত রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।