পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বর্তমান সরকারের ৯ বছরে দেশের অধিকাংশ সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিদারুণ ধ্বংসের মুখে রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। ঋণের নামে ও বিভিন্ন কারসাজি করে গ্রাহকের প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা আওয়ামী নেতাকর্মী, সমর্থক ও মদদপুষ্ট গোষ্ঠী লুট করে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সুশাসন, জবাবদিহিতার অভাব, দুর্নীতি, লুটপাট, নীতিহীনতা আর বিশৃংখলাসহ অস্থিতিকর ও নৈরাজ্যকর অবস্থায় রয়েছে ব্যাংকিং খাত। আওয়ামী লীগের লুটপাটের কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে গোটা সেক্টর। এ কারণে দুই দফায় আওয়ামী লীগের ১০ বছরকে ‘ব্যাংক কেলেঙ্কারির দশক’ হিসেবে অভিহিত করেন বিএনপি মহাসচিব। এজন্য একদিন তাদের বিচার হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে “ব্যাংকগুলোর মরণ-ঘণ্টা: ব্যাংকিং সেক্টর বিপর্যয়ের দায় সরকারকেই নিতে হবে” শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ড. আব্দুল মঈন খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
ব্যাংক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাট চলছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমানে ব্যাংকগুলো তীব্র তারল্য সংকটে জর্জরিত। ধার-দেনা করে চলছে দেশের বেশিরভাগ ব্যাংক; বিশেষ করে প্রাইভেট ব্যাংকগুলো। সরকারি ব্যাংকগুলোও তাদের মূলধনের অনেকাংশই লুটে নিয়েছে। আমানতকারীরা লাইন ধরে আমানতের টাকা ফেরত নিতে চাচ্ছে। তারা চেক দিয়েও সময়মত টাকা পাচ্ছে না। তহবিলের অভাবে চেক বাউন্স হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের ঋণের অর্থ সময়মত ছাড় করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। অনেক ক্ষেত্রে অনুমোদনপ্রাপ্ত ঋণও ফেরত নেওয়া হচ্ছে। এফডিআর ভাঙ্গানোর হিড়িক পড়েছে ব্যাংকগুলোতে।
অর্থনীতির অবস্থা আর কত তলানিতে নামলে সরকারের কাছে গুরুতর বিবেচিত হবে প্রশ্ন রেখে বিএনপি মহাসচিব বলেন, অর্থমন্ত্রী পরিস্থিতি গুরুতর নয় বলে দাবি করছেন। অর্থনীতির অবস্থা আর কত তলানিতে নামলে সরকারের নিকট গুরুতর বিবেচিত হবে? অথচ ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন ‘ব্যাংকিং জীবনে এতো ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে কখনও পড়িনি। গ্রাহকরা টাকা নিতে আসছেন কিন্তু তাদের টাকা ফেরত দিতে পারছি না। হাতজোড় করে তাদের কাছে ক্ষমা চাইতে হচ্ছে’। এমন পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ব্যাংকাররা। বিনিয়োগকারীরা হয়ে পড়েছেন বিভ্রান্ত। দেশি বিদেশী বিনিয়োগ হচ্ছে না। আশানুরূপ কর্মসংস্থান হচ্ছে না। অর্থনীতির সকল ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব প্রকট হয়ে উঠছে। প্রশাসনিক ছত্রছায়ায় কোন নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে ব্যাংকের মালিকানা জোর করে বদল হচ্ছে। ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং পরিবারতন্ত্র কায়েমের ফলে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। ফলে বেড়ে গেছে মুদ্রা পাচার এবং ঋণখেলাপির মাত্রা। বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ এবং পরিচালনা পর্ষদে পরিবারতন্ত্রকে অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত বলে মনে করছেন প্রথম সারির অর্থনীতিবিদেরা।
বিএনপির দেয়া বিভিন্ন ব্যাংক কেলেঙ্কারির তথ্য: ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই ব্যাংক কেলেঙ্কারির শুরু হয় অভিযোগ করে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশে বড় ধরনের ব্যাংক কেলেঙ্কারির শুরু হয় ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সোনালী ব্যাংকের ‘হলমার্ক গ্রæপ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে। হলমার্ক গ্রæপের লোপাট করা অর্থের পরিমাণ সাড়ে চার হাজার কোটি টাকারও বেশি। এই অর্থ আত্মসাতের সাথে প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীসহ রাজনৈতিক বিবেচনায় নিযুক্ত সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের নাম জড়িত। জনতা ব্যাংক, শাহ্জালাল ইসলামী, যমুনা, প্রিমিয়ার এবং প্রাইম ব্যাংক থেকে বিসমিল্লাহ গ্রæপের ১২শ’ কোটি টাকার বহুল আলোচিত ঋণ জালিয়াতি। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংশ্লিষ্ট সরকারদলীয় দুই এমপির ছেলেকে আসামী করেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি, ২০১০ সালের শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, হলমার্ক, বেসিক ব্যাংক, বিসমিল্লাহ ও ডেসটিনির কেলেঙ্কারির মাধ্যমে ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত এই সরকারের কেবল ছয়টি বড় অর্থ কেলেঙ্কারিতেই ৩০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। এছাড়া রূপালী ব্যাংক থেকে তিনটি প্রতিষ্ঠানের নেওয়া প্রায় হাজার কোটি টাকা, যার ৮০১ কোটি টাকা আদায়ের সম্ভাবনা নেই। অগ্রণী ব্যাংক থেকে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে ৩০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
জনতা ব্যাংকের বৃহত্তম ঋণ কেলেঙ্কারি: জনতা ব্যাংকের কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আবুল বারাকাত জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালে ব্যাংকের সকল নিয়মনীতি ভঙ্গ করে একক গ্রাহকের মালিকানাধীন এননটেক্স গ্রæপের ২২ প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ দিয়েছেন। যার মধ্যে ৫ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে। এটি একক ঋণের বৃহত্তম কেলেংকারি। ক্ষমতাসীনদের আশীর্বাদ ব্যাতিত কোন একক ব্যক্তির পক্ষে এত বিশাল ঋণ পাওয়া সম্ভব নয়। নিয়মনীতি না মেনে এভাবে ঋণ দেওয়ায় বিপদে পড়েছে ব্যাংক ও আমানতকারিরা। জনতা ব্যাংকের মোট মূলধন ২ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা। মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার সুযোগ আছে। দেওয়া হয়েছে মোট মূলধনের প্রায় দ্বিগুণ।
বেসিক ব্যাংক ছিল দেউলিয়াত্বের পর্যায়ে: বেসিক ব্যাংকের বিষয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হওয়ার পর ব্যাংকটি দেউলিয়াত্বের পর্যায়ে চলে যায়। ব্যাংকটি প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারির কারণে সংকটে পড়ে। বাংলাদেশ ব্যাংক আমানতকারীর স্বার্থ উপেক্ষিত হওয়া এবং ঋণ-শৃংখলা ভেঙে পড়ার বিস্তারিত তথ্য দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ আনলেও মন্ত্রণালয় বেসিক ব্যাংকের পর্ষদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এনআরবি ও এনআরবি গেøাবাল ব্যাংকেও সীমাহীন অনিয়ম হচ্ছে।
ফারমার্স ব্যাংক জনগণের টাকা আত্মসাৎ করছে: বেসিক ব্যাংকের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ২০১৩ সালে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায় মহিউদ্দিন খান আলমগীরের নেতৃত্বে ফারমার্স ব্যাংক আমানতকারীদের ও সরকারি খাত হতে জমাকৃত অর্থ অধিকাংশ আত্মসাৎ করেছে। ‘নতুন প্রজন্মের ফারমার্স ব্যাংক ঋণ বিতরণে অনিয়ম, জালিয়াতি ও লুটপাটে অতীতের যে কোনো ব্যাংক কেলেঙ্কারি-অনিয়মকে ছাড়িয়ে গেছে।’ বছর শেষে ব্যাংকটির আমানত কমে হয়েছে ৪ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা। অথচ ব্যাংকটির ঋণ ৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকা।’ এই ব্যাংকের কাছে পাওনা কেবল ব্যক্তিগত আমানতকারীর নয়, এর মধ্যে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের ৪৯৯ কোটি ৬৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। সুদসহ যা ৫১০ কোটিতে পৌঁছেছে। এই অর্থের মালিক এদেশের সাধারণ জনগণ এবং ব্যাংকটি জনগণের এই টাকাও আত্মসাৎ করে বসে আছে। অথচ এই ব্যাংকটি বাঁচানোর জন্য সরকার স¤প্রতি জনগণের করের টাকায় প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা মূলধন পুনঃভরনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। যা হবে স¤পূর্ণ অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্য।
সরকারের আশীর্বাদে ব্যাংক ডাকাতির হোতারা বাংলাদেশ ব্যাংকে: বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সাথে জড়িতরা এখনো বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরেই রয়েছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের আমলে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ৮০০ কোটি টাকা লুট হয়ে যায়। লুট হওয়ার পর অর্থমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট তিনি বিষয়টি গোপন রাখেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ডলার চুরির ঘটনায় ‘রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা’ রয়েছে এবং ‘ব্যাংক ডাকাতির হোতারা ব্যাংকের ভিতরেই আছে’ বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই’র এক কর্মকর্তা। বাংলাদেশ সরকারের আশীর্বাদ না থাকলে ব্যাংক ডাকাতির হোতাদের বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরে থাকা সম্ভব নয়। চুরি হয়ে যাওয়া অর্থের সামান্য অংশ ফেরত এলেও সিংহভাগ অর্থই আর ফেরত পাওয়ার সম্ভবনা নেই। এ টাকা উদ্ধারে দীর্ঘ দু’বছর বিলম্বে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হ’ল কেন? বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ লুটের বিষয়ে ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দীনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টটি কেন আজ পর্যন্ত প্রকাশ করা হলো না?
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে জুন ২০১৭ শেষে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে মন্দ-ঋণ বেড়ে হয়েছে ৬১ হাজার ৬০২ কোটি টাকা। এর সাথে অবলোপিত ৪৫ হাজার কোটি টাকা, বিভিন্ন অপকৌশলে (ভূয়া দলিল, ভূয়া কোম্পানি, ভূয়া এলসি ইত্যাদি) ৬৫ হাজার কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কোষাগার থেকে ৮শত কোটি টাকা; অর্থাৎ লুটতরাজ আর অনিয়মের মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ ৭২ হাজার ৪০২ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে লুট হয়ে গেছে।
খেলাপি ঋণই ব্যাংক সঙ্কটের মূল কারণ: খেলাপি ঋণকে বাংলাদেশের ব্যাংক সঙ্কটের মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ব্যাংকিং খাতে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে খেলাপি ঋণ। ঋণের নামে গ্রাহকদের হাজার হাজার কোটি টাকার আমানত লুটে নিচ্ছে খেলাপিরা। ‘অবলোপন’-এর দোহাই দিয়ে ঋণের তালিকা থেকে মুছে ফেলা হচ্ছে খেলাপিদের নাম। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণসংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সাল শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর শেষে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৫২ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা বা মোট ঋণের প্রায় ১১ শতাংশ। অর্থাৎ বাড়ার হার ৬ দশমিক ০১ শতাংশে। এর সঙ্গে অবলোপনকৃত ঋণের প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা যোগ করলে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা (জুন, ২০১৭ পর্যন্ত)।
লুটেরাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে জনগণের টাকা দেয়া হচ্ছে: বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, ব্যাংক লুটেরাদের কারও বিরুদ্ধে কোন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে সরকার ব্যাংকগুলোকে জনগণের করের টাকা হতে বেইল আউট প্রোগ্রামের নামে ১৪ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা দিয়েছে। যা স¤পূর্ণ অনৈতিক। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের বাজেটেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর জন্য দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অর্থাৎ করের টাকা দিয়ে বিসমিল্লাহ, হল-মার্ক, এননটেক্সসহ অন্যান্য ব্যাংক লুটকারীর ভরণপোষণ করা হচ্ছে।
মালিকানা বদলে তীব্র সঙ্কটে ইসলামী ব্যাংক: মির্জা ফখরুল বলেন, ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা বদলের পর ইসলামী ব্যাংক এখন তীব্র আর্থিক সংকটে। সরকারি হস্তক্ষেপে মালিকানা বদলের পর মাত্র ১৫ মাসেই ব্যাংকটি ভয়াবহ দুর্দশায় পড়েছে। মালিকানা পরিবর্তনের আগমুহূর্তেও ব্যাংকটিতে ১০ হাজার কোটি টাকার মতো বিনিয়োগযোগ্য তহবিল ছিল। কিন্তু পরিবর্তনের পর তারা যে পরিমাণ আমানত সংগ্রহ করেছে, ঋণ দিয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। অর্থসংকটে পড়ে বন্ডে থাকা টাকাও তুলে নিয়েছে ব্যাংকটি। চলতি বছরের শুরু থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত যে পরিমাণ আমানত এসেছে, তার তিন গুণ ঋণ দিতে হয়েছে ব্যাংকটিকে।
ঋণ খেলাপির তালিকা থেকে আওয়ামী আশীর্বাদপুষ্টদের বাদ দেয়া হচ্ছে: বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১৫ সালে ৫০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে এমন ১১ বড় ব্যবসায়ী গ্রæপের ১৫ হাজার কোটি টাকা পুনর্গঠনের নামে ঋণ নিয়মিত করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে শীর্ষ খেলাপির তালিকা থেকে বাদ যায় আওয়ামী আশীর্বাদপুষ্ট কয়েকটি বড় গ্রæপ। বড় খেলাপিরা সবাই ক্ষমতাবান, প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক আশীর্বাদপুষ্ট। অন্যদিকে যাদের প্রয়োজন, সেই ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণকারীরা উপেক্ষিত, কারণ তাদের ক্ষমতা, প্রভাব বা রাজনৈতিক আশীর্বাদ নাই। অর্থমন্ত্রী সংসদে ১০০টি খেলাপি প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করেন, কিন্তু তাতে সর্বজনবিদিত তারকা খেলাপিদের নাম নেই।
অর্থ পাঁচার বাড়ছে: দেশে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ স্থবির হলেও ঋণ প্রদান লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল প্রশ্ন তোলেন তাহলে এই ঋণ নেয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ যাচ্ছে কোথায়? তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং পরিবারতন্ত্র কায়েমের ফলে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। ফলে বেড়ে গেছে মুদ্রা পাচার এবং ঋণখেলাপির মাত্রা। ওয়াশিংটনভিত্তিক অর্থপাচারবিরোধী সংস্থা গেøাবাল ফিন্যানশিয়াল ইনটিগ্রিটির (জিএফআই) রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ পুঁজি বা অর্থ পাচার হচ্ছে এবং ক্রমাগত এর পরিমাণ বাড়ছে। তার মানে, অভ্যন্তরীণ খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে না, কিন্তু বিদেশে চলে যাচ্ছে। জিএফআই রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে ৬ লাখ ৬ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। তারমধ্যে কেবল ২০১৩ সালে পাচার হয়েছে প্রায় ৭৭ হাজার কোটি টাকা, আর ২০১৪ সালে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা।
ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতি ও বিপর্যয়ের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারই দায়ী করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় আওয়ামী আশির্বাদপুষ্ট মহল আরও উৎসাহিত হয়ে নানা কৌশলে ব্যাংকের অর্থ লুন্ঠন করেই যাচ্ছে। বর্তমানে সব ব্যাংকিং খাতে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে তা অচিরেই অর্থনীতিকে রক্তশূন্য করে ফেলবে। বর্তমান অবৈধ সরকারকে অবশ্যই এই দায়ভার নিতে হবে। কারণ হাজার হাজার কোটি টাকা ‘নাই’ হয়ে গেল, তাতে সরকারের কোন মাথা ব্যাথা নেই। কারণ বর্তমান ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারের জনগণের নিকট কোনও দায়ববদ্ধতা নেই। কারণ তারা মনে করে তাদের জনগণের ভোটের দরকার নেই। তাই দেশের অর্থনীতির বারোটা বাজলে তাদের কিছুই আসে যায় না। জনগণ কখনও তাদের ক্ষমা করবে না। একদিন জনতার আদালতে এদের বিচার হবে।####
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।