পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রশাসন ক্যাডারে দক্ষ, মেধা ও সৃজনশীলতা নিয়ে উদ্বিগ্ন সরকারের নীতি নির্ধারক মহল। যে নথি তিন-চার দিনে অনুমোদন হওয়ার কথা; কর্মকর্তাদের দক্ষতা, বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার অভাবে তা অনুমোদন পেতে চার-পাচ মাসও লেগে যাচ্ছে।
এতে সেবা প্রার্থীদের ভোগান্তি যেমন হচ্ছে, তেমনি সরকারের কাজের গতিও মন্থর হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নেও বিলম্ব ঘটে। ফাইল যথা সময়ে নিষ্পত্তি, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সভা আহŸান, নতুন প্রকল্প গ্রহণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রায়ই প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন। বিভিন্ন কোটা সুবিধায় কম মেধাবীদের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দান, রাজনৈতিক নিয়োগ, সরকারী কর্মকর্তাদের একাডেমিক ক্যারিয়ার, কাজের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা এবং প্রশিক্ষণের ওপর ভিত্তি করে পদায়ন না করার কারণেও প্রশাসন ক্যাডার মেধা সংকটে পড়ছে বলে প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার মনে করছেন। এদিকে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম প্রশাসন দেখভাল করতেন।
এখনো করছেন তার পরও আগের মতো অবস্থা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান ইনকিলাবকে বলেন, কিছু জুনিয়র কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনে অদক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। তাদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এ জন্য জনপ্রশাসন থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। আশা করি আগামীতে আর সমস্যা হবে না। বিভিন্ন জেলা ডিসি অফিসও মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসনের দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে পদোন্নতি এবং পদায়নের কারণেই আমলাতন্ত্রে মেধা ও যোগ্যতায় ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। এক শ্রেনীর প্রভাবশালী, দলবাজ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের আশীর্বাদপুষ্ট কর্মকর্তারাই ধারাবাহিক পদোন্নতি পাচ্ছেন। আবার অনেক কর্মকর্তা গুরুত্বপূর্ণ ও দফতরে পদায়নও পাচ্ছেন। কিন্তু মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতা থাকা সত্তে¡ও যাদের খুঁটির জোর কম তারাই অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পদায়ন পাচ্ছেন। মেধা ও সততা থাকা সত্তে¡ও ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শগত কারণে অনেক কর্মকর্তাকে বছরের পর ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) থাকতে হচ্ছে। আবার নিরপেক্ষ কর্মকর্তারা যথা সময়ে পদোন্নতিও পায় না বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। আমলাতন্ত্রের উপরের স্থরের পদোন্নতির প্রতিটি স্থরেই দলীয় বিবেচনা পিরামিড আকৃতিতে বাড়তে থাকে। এদিকে ঢাকা ডিসি অফিসে নতুন জেলা প্রশাসন আসার পরে দুনীতি কিছুটা করলেও জনসেবা কমেছে। আর সরকারি ফাইল নরছে না।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সামারি অনুমোদনে কেন বিলম্ব হচ্ছে সে সম্পর্কে জানতে চান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা। এ সময় কয়েকজন সাংবাদিকের উপস্থিতিতে এক সচিব বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এখানে অথর্ব কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হয়েছে। এসব কর্মকর্তার দক্ষতা ও কাজের মান খুবই খারাপ। অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিবরা সিনিয়র সহকারী সচিব হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। অনেক কর্মকর্তা কাজ বুঝেন না, শুদ্ধভাবে ফাইল ফুট আপ দিতে পারে না। এসব কারণেই বিভিন্ন কাজে লেইট হয়। সচিবালয়ের ফাইলের মান খুবই নিচে নেমে গেছে। শুদ্ধ ফাইল খুব কমই পাওয়া যায় গত মার্চ মাসের বিভাগীয় কমিশন সমন্বয় সভায় এসব তথ্য ফুটে এসেছে।
সড়ক পরিবহনও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সচিবালয়ে জনপপ্রাসন মন্ত্রণালয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বলেন, বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের পড়ালেখা ও দক্ষতার মান অনেক নিচে নেমে গেছে। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে এখনই নজর দেয়া দরকার।
জনপ্রশাসনমন্ত্রীর সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাভারে লোক-প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে বলেন, সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) কর্মকর্তাদের আরও দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকার হার্ভার্ড, ক্যামব্রিজ ও অঙেফার্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্বের বিভিন্ন বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া ও প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হচ্ছে। আগামীতে আমরা দেশের সিভিল সার্ভিসকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক বলেন, সরকারের লক্ষ্য অর্জনে এবং উন্নয়ন ভাবনা বাস্তবায়নের জন্য দরকার দক্ষ ও উদ্যোগী সরকারি কর্মচারী। আমরা সুশাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলে দ্রæত ও দক্ষতার সাথে জনগণকে সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে চাই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সচিব বলেন, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের শুধু প্রশিক্ষণ দিলে হবে না। এ জন্য প্রয়োজন পদোন্নতি ও পদায়নে সৎ, যোগ্য ও মেধাবি কর্মকর্তাদের প্রাধান্য দেয়া। কারণ একজন উপসচিব বা যুগ্ম সচিব চাকরি জীবনে ১০ থেকে ১৫টি দেশে প্রশিক্ষণ কিংবা ভ্রমণের সুযোগ পায়। এখন একজন উপসচিব ৩৫ লাখ টাকার গাড়ীর সুযোগ আরো বেশিও পেয়ে থাকে। দলবাজ ও নীতিহীন কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণের নামে বিদেশে গিয়ে ভ্রমণে ব্যস্ত থাকেন। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে।
প্রশাসন বিশেজ্ঞরা বলেন, প্রশাসন ক্যাডারকে বলা হয় সুপার ক্যাডার। মূলত ১৯৯৬ সালে জনতার মঞ্চর মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তারা আন্দোলনে নামার পর থেকেই প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তারা স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের অধিকার হারিয়ে ফেলে। পর্যায়ক্রমে এই ক্যাডারে রাজনীতিকরণ বাড়তে থাকে। যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে সেই সরকারই প্রশাসন ক্যাডারকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করেছে। পদ, পদোন্নতি ও ব্যক্তিগত লাভ-লোকসানের স্বার্থে আমলারাও নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছে সরকারের মধ্যে। এতে আমলাতন্ত্রের বিচক্ষণতা, মেধা ও দক্ষতা কমছে। প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কয়েকটি নিজস্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে সাভারের বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা বিপিএটিসি, রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত বিসিএস প্রশাসন একাডেমি, সাভারের অফিসার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউশন বিয়াম ফাউন্ডেশনসহ বিভাগীয় পর্যায়ে বেশকিছু প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পদোন্নতি ও নতুন পদায়নের পরও কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণ পায়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গতকাল মঙ্গলবার ওয়েবসাইট অনুযায়ী জনপ্রশাসনে প্রশাসন ক্যাডারে কর্মকর্তা আছেন প্রায় পাচঁ হাজার ছয়শ জন। এর মধ্যে সচিব রয়েছেন ৭৯ জন, অতিরিক্ত সচিব ৫০৩ জন, যুগ্ম সচিব ৮০০ জন, উপসচিব এক হাজার ৭৬৫ জন, সিনিয়র সহকারি সচিব এক হাজার ৪৩২ জন, সহকারি সচিব এক হাজার ১৯২ জন। এছাড়াও আট বিভাগীয় কমিশনার (যুগ্ম বা অতিরিক্ত সচিব),অতিরিক্ত ভিাগীয় কমিশনার ১৫জন, জেলা প্রশাসন (ডিসি) এডিসি ১৯১জন এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ৪৩৬জন রয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।