Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এসএসসি পরীক্ষায় দারিদ্র জয় করা দু‘বোনের স্বপ্ন পূরণ

মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৭ মে, ২০১৮, ৭:৩৯ পিএম

দুই বোন কবিতা ও মোহনা। ৯ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত পিতার আদর- স্নেহের কথা মনে নেই ওদের। মায়ের ক্লান্তিহীন চেষ্টা ও নিজেদের অদম্য মানসিকতাকে সম্বল করে মামা বাড়িতে আশ্রয় নিয়েই ২ বোন অর্জন করেছে এসএসসিতে জিপিএ-৫। মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার উৎরাইল এমএল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে চলতি বছর এ সফলতার দিনেও দারিদ্রতার কারণে তাদের ভবিষ্যৎ ও লেখাপড়া নিয়ে শংকিত মা কল্পনা বেগম। তার সামনে মেয়েদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। চোখে শুধুই অন্ধকার। এ অনিশ্চিয়তার কারণে অসহায় মা এখন অদম্য মেধাবী ২ মেয়ের বাল্যবিয়ের কথা ভাবছেন। 

জানা গেছে, ৯ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রবাসী পিতা আবদুল কাদের মাতুব্বর প্রবাসেই মারা যায়। ৩ মেয়েকে নিয়ে হিমশিম খাওয়া কল্পনা বেগম বাধ্য হয়ে তখন ১ম শ্রেণীতে পড়–য়া কবিতা ও মোহনা ২ মেয়েকে মামা বাড়িতে রেখে আসেন। অভাব-অনটনের সংসারে লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়ার সাহস ওদের মায়ের ছিলো না। কিন্তু লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ ও স্বপ্নজয়ের মানসিকতা লেখাপড়া চালিয়ে যাবার শক্তি হিসেবে কাজ করেছে দু‘বোনের মনে। মামা বাড়ি জেলার শিবচরের উৎরাইলের গুয়াগাছিয়ায় আশ্রয় নেয় কবিতা ও মোহনা। অভাব-অনটনের সংসারে টানাপড়েন লেগে থাকলেও তা নিয়ে কখনোই মন খারাপ করেনি তারা। ভালো পোশাকের জন্য মাকে চাপ দেয়নি কোনদিন। সামর্থ্য অনুযায়ী যা পেয়েছে তাতেই ছিল সন্তুষ্ট। মা অভাব ঘুচাতে না পেরে অনেকবারই ভেবেছে মেয়েদের বাল্য বিয়ের কথা। কিন্তু ওদের পড়ার নেশার কাছে মায়ের এই চিন্তার ব্যর্থ হয়। যে কারণে ৫ম ও ৮ম শ্রেনীতে জিপিএ ৫সহ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায় তারা। শুরু থেকেই এ ২ বোনের দখলে ছিল রোল ১ ও ২। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০১৮ সনের এসএসসি পরীক্ষায় জেলার শিবচর উপজেলার উৎরাইল এমএল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে চলতি বছর জিপিএ ৫ পেলেও মলিন তাদের মুখ। স্বতঃস্ফুর্ততা নেই ওদের মনে। দারিদ্রতার রোষানলে বিপর্যস্ত পরিবারটিতে ভর করেছে ২ মেয়ের ভবিষ্যত ভাল কলেজে লেখাপড়ার শঙ্কা। তাই মায়ের মনে আনন্দের মাঝেও আবারো ২ মেয়ের বাল্য বিয়ের চিন্তা। অদম্য মেধাবী ২ বোনকে দেখতে এখন এলাকাবাসির ভীড় জরাজীর্ন বাড়িটিতে ঘিরে।
কবিতা বলেন, ‘ডাক্তার হবার ইচ্ছা থেকেই সায়েন্স নিয়ে পড়া। ডাক্তারই হতে চাই। পড়তে চাই শহরের ভালো একটি কলেজে। কিন্তু পারবো কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়। শহরে পড়ানোর মতো আর্থিক অবস্থা যে আমাদের নেই!’ ছোট বোন মোহনা বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার পরে আমাদের নিয়ে মায়ের যুদ্ধ। আমরা ভালো কিছু করার স্বপ্ন নিয়ে লেখাপড়া করে যাচ্ছি। কিন্তু আর্থিক অনটনের কাছে শেষ পর্যন্ত হয়তো হেরে যাবো। ভালো একটি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করার ইচ্ছা।’
মা কল্পনা বেগম বলেন, ‘ওর বাবা যখন মারা যায় তখন ওদের বয়স ৭ বছর। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়ি। কিন্তু আমার মেয়েদের লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহের কারণে বাবার বাড়িতে এসে আশ্রয় নিই। টানাটানির সংসারে কোন মতে ওদের নিয়ে বেঁচে আছি। ভালো কোন কলেজে পড়ানোর মতো আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই। ভাগ্যে কি আছে জানি না ? সহায়তা না পেলে বিয়ে দিয়ে দেব। কিছু করার নেই।’ উৎরাইল এমএল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘ওরা দুই বোন অত্যন্ত মেধাবী ও পরিশ্রমী। সুযোগ পেলে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করবে বলে বিশ্বাস করি।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আশ্রাফুল আলম বলেন, ‘ওরা মেধাবী এবং দরিদ্র। এ কারণে বিদ্যালয়ের বেতন, টিউশন ফি, ফরম পূরনের টাকাসহ বিভিন্ন সময়ে এই দুইবোনকে সাপোর্ট দেয়া হয়েছে। ওরা আমাদের গর্ব।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ