Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সশস্ত্র গ্রুপের দ্বন্দ্বে রক্তাক্ত হচ্ছে সবুজ পাহাড়

| প্রকাশের সময় : ৭ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সাখাওয়াত হোসেন : সবুজ পাহাড় উপজাতীয় সশস্ত্রগ্রুপগুলোর বুলেটে রক্তাক্ত হচ্ছে। পুরো পাহাড় জুড়ে বিরাজ করছে এখন আতংক। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩ জেলার সাধারন বাঙালী ও পাহাড়ীদের সকলেই শান্তির সাথে মিলেমিলে বাসবাস করছেন। তাদের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। পাহাড়কে অশান্ত করে তুলতে সক্রিয় রয়েছে ৪টি সশস্ত্র উপজাতীয়গ্রæপ। পার্বত্য চট্টগ্রামের আইন-শৃংখলা রক্ষায় পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী কাজ করছে দীর্ঘ দিন ধরে। পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে একটি খুনের রেশ না কাটতেই হচ্ছে আরেক খুন। সর্বশেষ গত ৩মে বৃহস্পতিবার সকালে অস্ত্রধারীর গুলিতে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমা খুন হন। নিহত শক্তিমান চাকমা পাহাড়িদের আঞ্চলিক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি-জেএসএস (এমএন লারমা) সংস্কারপন্থি দলের সহ-সভাপতি। শক্তিমানের শেষকৃত্ত শেষে ফেরার পথে গত ৪ মে শুক্রবার ইউপিডিএফের (গণতান্ত্রিক) প্রধান তপন জ্যোতি চাকমাসহ ৫জনকে গাড়ি আটকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
বাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ করার শর্তে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, দু’টি ঘটনায় ৬জন খুন হওয়ার পর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত সবাই। এ কারণে প্রয়োজনীয় কাজ ও গন্তব্যে যাতায়াত করতেও সাহস পাচ্ছেন না অনেকে। পালিয়ে বেড়াচ্ছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও। কখন কী ঘটে- এমন আশঙ্কায় অনেকে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গত শনিবার ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে বলেন, পাহাড়ে হত্যাকান্ডে জড়িতদের খুঁজে বের করা হবে।
রাঙামাটি পুলিশ সুপার মো. আলমগীর কবীর বলেন, পাহাড়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পাহাড়ে শান্তি বজায় রাখতে পুলিশ প্রস্তুত। নানিয়ারচর উপজেলার দুটি হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে কাজ করছে পুলিশ। খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) এমএম সালাহউদ্দিন বলেন, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যে খুনোখুনি বাড়ছে। তবে গুরুত্ব দিয়ে হত্যা মামলাগুলো তদন্ত করে অপরাধীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, স্থানীয় রাজনৈতিক কোন্দলসহ নানা কারণে খুন-খারাবিতে জড়িয়ে পড়ছে পাহাড়ের আঞ্চলিক চার সংগঠন। এসব ঘটনায় যেমন খুন হচ্ছেন রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধি, আবার এসব ঘটনায় সন্দেহের তীর গিয়ে পড়ছে তাদের ওপরেই। এসব গ্রæপের কাছে বিপুলসংখ্যক আগ্নেয়াস্ত্রের মজুদ রয়েছে। প্রায়ই এসব অস্ত্রের আস্তানায় হানা দেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তার পরও সশস্ত্র গ্রæপগুলোর অস্ত্রের মজুদ কমছে না। আর এ কারনেই সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক ছড়াচ্ছে টার্গেট কিলিং।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত বছরতিনেক পার্বত্যাঞ্চল অনেকটাই শান্ত ছিল। এ সময়ে পাহাড়ের তিন আঞ্চলিক সংগঠন জেএসএস (সন্তু লারমা), ইউপিডিএফ ও জেএসএস সংস্কারের (এমএন লারমা) মধ্যকার অস্ত্র বিরতি চলছিল। কিন্তু ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক নামের আরেক আঞ্চলিক পাহাড়ি সংগঠনের আত্মপ্রকাশের পর এ সমঝোতা শান্তিতে ছেদ পড়ে। অভিযোগ ওঠেÑসংগঠনটি আত্মপ্রকাশের মাত্র ১৮ দিনের মাথায় খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ সংগঠক মিঠুন চাকমাকে (৩৮) খুন করার পর পাহাড়ে খুন-খারাবি ছড়িয়ে পড়ে। শান্তি চুক্তির পর এ পর্যন্ত ২১ বছরে সশস্ত্র গ্রæপের দ্বন্ধে ৮ শতাধিক খুন হয় এবং ১৫শ’ গুম হয়েছে। গুম হওয়াদের মধ্যে ৬০ ভাগ মুক্তিপণের টাকা দিয়ে জীবন বাঁচিয়েছে। বাকিদের বিভিন্ন জঙ্গলে লাশ ফেলে দেয়া হয়। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। গত ২২ এপ্রিল খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার মরাটিলা এলাকায় ইউপিডিএফ এর সাংগঠক ছিয়াং ত্রিপুরা ওরফে কাতাং ত্রিপুরা (৪০) কে গুলি করে খুন করে। আহত হয় অনন্ত ত্রিপুরা। জেএসএস(সংস্কার) হামলা চালায়। ১৯ এপ্রিল মাটিরাংগার হাতিমুড়া এলাকায় নতুন কুমার ত্রিপুরা (৪৫) এর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সে ইউপিডিএফ এর সদস্য। তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ১৬ এপ্রিল খাগড়াছড়ি সদরের পেরাছড়ায় গুলি করে খুন করা হয় ইউপিডিএফ নেতা সূর্য বিকাশ ত্রিপুরা(৫০)কে। ১৫ এপ্রিল খাগড়াছড়ি রাঙ্গামাটি সীমান্তে মারিশ্যা দীঘিনালা সড়কের জোরা ব্রিজ নামক স্থানে ইউপিডিএফ কর্মী তপন চাকমা(৪০) ও একই সড়কের ৯ কিলো নামক স্থানে বিজয় চাকমা(৩২)কে গুলি করে হত্যা করা হয়। ১৩ এপ্রিল ইউপিডিএফ এর সন্ত্রাসীদের হামলায় গুইমারায় মারমা ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক কংজাই মারমাসহ দুইজনকে বেদম প্রহার করে আহত করে। ১১ মার্চ বাঘাইছড়িতে ইউপিডিএফ সদস্য নতুন মনি চাকমা (৪২)কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। গত ৪ মার্চ রামগড়ের পাতাছড়া নিজ বাড়ি থেকে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা চাইথুই মারমা(৪৫) কে অপহরণ করে। তিনি স্থানীয় বিএনপির নেতা। এখনও তাকে উদ্ধার করা যায়নি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন রয়েছে চারটি। এগুলো হলো- পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ), জনসংহতি সমিতি সংস্কারবাদী (এমএন লারমা) ও গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফ। এখন হত্যাকান্ড পরিচালনা করছে ইউপিডিএফ। এদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে জেএসএস-এমন অভিযোগ গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফ থেকে করা হয়। তাছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে কোন অপরাধের পর সাধারন বাঙালীদের উপর চাপিয়ে দেয়ার প্রবনতা রয়েছে উপজাতীয় সশস্ত্র গ্রæপগুলোর।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সশস্ত্র

২১ নভেম্বর, ২০২২
২১ নভেম্বর, ২০২২
২১ নভেম্বর, ২০২১
২১ নভেম্বর, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ