Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পরিচয় অজ্ঞাতই থেকে যায়

| প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

হত্যার পর লাশ গুম করতে নদী বা জলাশয়ে ফেলে দেয়া হয়। বছরে ১২শ’ বেওয়ারিশ লাশ
সাখাওয়াত হোসেন : দীর্ঘ ২৪ দিনেও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি ট্টলির ভেতর থেকে উদ্ধার করা নারীর কাটা দেহের। গত ১১ এপ্রিল সকালে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী টোল প্লাজার পাশের একটি দোকানের সামনে খয়েরি রঙের একটি ট্রলি ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। পরে সেটি খুললে কোমড় থেকে পা পর্যন্ত কাটা এক নারীর দেহ দেখতে পান তারা। খবর দিলে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠায়। পরে অজ্ঞাত হিসেবেই দাফন করা হয়। অজ্ঞাত লাশের তদন্তে সংশ্লিস্ট্র কর্মকর্তাদের আগ্রহও থাকে কম। জড়িতদের গ্রেফতার বা নিহতের পরিচয় উদ্ধারে তেমন কোন উদ্যোগ থাকেনা বললেই চলে। যাত্রাবাড়ি থানার ওসি আজিজুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বিষয়টির তদন্ত চলছে। কোন ক্লু পাওয়া যাচ্ছে না। কোথা থেকে এ দেহ আসলো তা আমরা এখনও বলতে পারছি না। বাকি অংশ বা কোথায় আছে তাও জানা যায়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। যেহেতু ক্লু নেই, তাই এ ধরনের ঘটনা উদ্ধারে সময় প্রয়োজন হয়।
গত ৭ মার্চ রাজধানীর দারুস সালাম থানার বসুপাড়ার খাল থেকে এক নারীর বস্তাবন্দি অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার বয়স আনুমানিক ২২ বছর। ২ মাসেও ওই নারীর পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। দারুস সালাম থানার ওসি সেলিমুজ্জামান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ওই নারীকে হত্যার পর লাশ বস্তাবন্দি করে খালে ফেলে দেয়া হয়। লাশ গুম করতেই খুনিরা এ পথ বেছে নেয়। লাশ অর্ধগলিত হওয়ায় চেহারা দেখে তাকে চেনা যায়নি। তার পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় এ খুন সম্পর্কে কোনো ধারণা করা সম্ভব হচ্ছে না।
সূত্র জানায়, রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকা থেকে প্রায়ই অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করা হয়। তাদের মধ্যে অধিকাংশই খুনের শিকার। হত্যার পর লাশ গুম করতে খুনিরা লাশ নদী ও জলাশয়ে ফেলে দেয়। কখনো আবার মহাসড়কের পাশে নির্জন স্থানে লাশ ফেলে রাখে। কয়েক দিনের মধ্যে লাশ পচে গলে যায়। এতে করে লাশের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। ফলে খুনের রহস্য উন্মোচন হয় না। পরিচয় না থাকায় তদন্তে অনেক বেগ পেতে হয় পুলিশকে। এ কারণে এসব ঘটনা তদন্তে পুলিশের তেমন আগ্রহও থাকে না। অজ্ঞাত লাশের অনেকেই আবার দুর্ঘটনার শিকার। লাশগুলো বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে জুরাইন ও আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর কোলঘেঁষা বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, তুরাগ, বালু নদী, শীতলক্ষ্যা নদীসহ বিভিন্ন জলাশয়। এর বাইরে রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহর, ডেমরা, মিরপুর বেড়িবাঁধ, বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর রেললাইনের দু’পাশ, শ্যামপুরের ওয়াসা পুকুর পাড়, যাত্রাবাড়ী, কামরাঙ্গীরচর বেড়িবাঁধ, কাঞ্চন-কুড়িল ৩০০ ফুট সড়কের পাশ থেকে প্রায়ই অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করা হয়। পচে গন্ধ বের না হলে এসব লাশ কারও নজরে আসে না। এসব লাশের মধ্যে কোনোটি গুলিবিদ্ধ. কোনোটিতে ধারালো অস্ত্রের চিহ্ন, কোনোটি বস্তাবন্দি, কোনোটির হাত-পা বাঁধা থাকে। অনেক ক্ষেত্রে শরীরের জখমের চিহ্ন থাকে। হত্যার পর লাশ গুম করতে এবং আলামত নষ্ট করতে এ কৌশল নেয় খুনিরা।
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, অপরাধীরা সব সময় কৌশল অবলম্বন করে নিজেদের আড়াল করে রাখতে চায়। এ জন্য হত্যাকান্ডের পর নির্জন এলাকায় লাশ ফেলে দেয়। আবার কখনও নদীতে ভাসিয়ে দেয়। এ ধরনের হত্যাকান্ড শনাক্ত করা সম্ভব হলে খুনীদের গ্রেফতার করা সহজ হয়। লাশ শনাক্ত করতে মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্য নেয়া হয় বলে তিনি জানান।
ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন আরো বলেন, কোনো ব্যক্তি খুনের শিকার হলে তার পরিচয় জানাটা জরুরি। পরিচয় জানা না গেলে খুনের রহস্য উন্মোচন করা কঠিন।
আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম সূত্রে জানা গেছে, চার বছরের বেওয়ারিশ লাশ দাফনের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা দেখা যায় যে, প্রতি মাসে গড়ে তারা ১০৩ ব্যক্তির বেওয়ারিশ লাশ দাফন করেন। বছরে গড়ে সংস্থাটি এক হাজার ২৩৪ লাশ দাফন করে। চলতি অর্থবছরের (২০১৭-১৮) প্রথম আট মাসে (মার্চ পযন্ত) ৮৩০টি বেওয়ারিশ লাশ দাফন করেছে সংস্থাটি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে (১২ মাসে) এ সংখ্যা ছিল এক হাজার ৩০০। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এক হাজার ৩৫৭ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এক হাজার ৩৩৩ বেওয়ারিশ লাশ সংস্থাটি দাফন করে। এসব লাশের অধিকাংশের বয়সই ১৬ থেকে ৪৭ এর মধ্যে। আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের নির্বাহী পরিচালক ইলিয়াস আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, যেসব লাশের কোনো ওয়ারিশ থাকে না আমরা সেসব লাশ দাফন করা হয়। প্রতি বছরই বিপুলসংখ্যক বেওয়ারিশ লাশ এই সংস্থার মাধ্যমে দাফন করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ এপ্রিল কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন বুড়িগঙ্গা নদী থেকে বস্তাবন্দি এক যুবকের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার বয়স আনুমানিক ৩২ বছর। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত করছেন এসআই বিজন কুমার দাস। তিনি জানান, লাশটি ছিল অর্ধগলিত। চেহারা চেনা যায় না। আশপাশের থানাগুলোতে ছবি পাঠানো হয়েছে। ম্যানুয়ালি তদন্ত করা হচ্ছে। পরিচয় না পাওয়ায় হত্যা রহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়নি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পরিচয়

২৭ অক্টোবর, ২০২২
১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ