Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরগরম থাকবে উচ্চ আদালত

খালেদার জিয়ার জামিন স্থগিতে আবেদনের শুনানি মঙ্গলবার

| প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

আসামী ও রাষ্ট্রপক্ষ আইনজীবীদের জোড় প্রস্তুতি
মালেক মল্লিক : অবকাশ শেষে রোববার থেকে ফের সরগরম হচ্ছে উচ্চ আদালত। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি মঙ্গলবার। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির বেঞ্চ এ বিষয়ে শুনানি বিরতীহীনভাবে দুই দিন শুনানির অনুষ্ঠিত হবে। এরপরই জানা যাবে জামিনের বিষয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। শুনানির জন্য জোড় প্রস্তুতি নিচ্ছেন আসামী ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।
এদিকে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর সহসা জামিনে মুক্তি পাচ্ছেন, কিনা তা জানতে সবারই এখন দৃষ্টি থাকছে উচ্চ আদালতের দিকেই। কারণ সাবেক এই্ প্রধানমন্ত্রীর কারামুক্তির পথ এখন আপিলের আদেশের উপর নির্ভর করছে এমনটাই মনে করছেন আইনজীবীরা। জামিন নিয়ে আইন অঙ্গণ থেকে শুরু করে সরকারের উচ্চ মহল ও বিরোধী দলীয় জোটেও চলছে নানা পর্যালোচনা।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেলের অন্যতম সদস্য ও বিএনপি আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ইনকিলাবকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আশা করছি খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিতাদেশ উঠিয়ে নিবেন উচ্চ আদালত। আর এটা সারা দেশের সাধারণ মানুষেও প্রত্যাশা। এ নিয়ে আদালতের দিকে তো কম-বেশ সবারই নজর রয়েছে। এই আইনজীবী আরো বলেন, আশা করছি সব দিক বিবেচনা করে জামিন দিবেন আদালত। দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান ইনকিলাবকে বলেন, শুনানি জন্য আমরা সব সময় প্রস্তুত। খালেদা জিয়ার জামিন দিবেন কিনা; সেটা আদালতের বিষয়। আমরা শুনানির জন্য ল পয়েন্ট প্রস্তুুতি নিচিছ।
গত ১৯ মার্চ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে হাইকোটের দেয়া চার মাসের জামিন ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করে আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে দুদক ও রাষ্ট্রপেক্ষর লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে দুই সপ্তাহের মধ্যে আপিলের সার সংক্ষেপ দাখিলের নির্দেশ দেন। দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের সারসংক্ষেপ জমা দেয়ার পরবর্তী দুই সপ্তাহের মধ্যে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের তাঁদের বক্তব্যের সারসংক্ষেপ দিতে বলা হয়েছে। এসময় আদালত বলেছেন, ৮ মে মামলাটি শুনানির জন্য তালিকায় শীর্ষে থাকবে। কোনো ধরনের মুলতবি ছাড়া বিরতিহীনভাবে শুনানি হবে। ও্ইদিন আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট আব্দুর রেজাক খান, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, দুদকের পক্ষে খুরশিদ আলম খান। এরপর প্রধান বিচারপতি লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে এ আদেশে। সাড়ে ১১টায় আদালত আবার বসলে আপিল শুনানি এগিয়ে আনতে আরজি জানান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা নিশ্চয়তা দিচ্ছি, ৮ মে এই মামলা শুনানির জন্য তালিকায় শীর্ষে থাকবে। কোনো ধরনের মুলতবি ছাড়া বিরতিহীনভাবে শুনানি হবে। ৮ মে না হলেও ৯ মের মধ্যে এই মামলার নিস্পত্তি করব। এর আগে গত ১৪ মার্চ আপিল বিভাগ খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন ১৮ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল করতে বলেন উচ্চ আদালত। ওই দিনই খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।
জামিন পাবেন আইনজীবী সমিতির সভাপতির প্রত্যাশা: সব দিক বিবেচনা করে খালেদা জিয়াকে ৮ মে জামিন দেবেন এমন প্রত্যাশা করছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। তিনি বলেছেন, আশা করি, দেশের সর্বোচ্চ আদালত সব দিক বিবেচনা করে খালেদা জিয়াকে জামিন দেবেন। তিনি বলেন, একজন বৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেত্রীকে নির্জন কারাঘরে বন্দি রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যা খুবই দুঃখজনক উল্লেখ করে খালেদার এ আইনজীবী বলেন, আমরা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি আস্থাশীল।
খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ানো নিয়ে রুল: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা কেন বাড়ানো হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্র ও খালেদা জিয়াকে চার সপ্তাহের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে হবে। রুলের শুনানি আপিলের শুনানির সময় এক সঙ্গে হবে। দুদকের রিভিশন আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সাহেদুর করিমের বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। চার সপ্তাহের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে জিয়া চ্যারিটেবল মামলার শুনানি ১০ মে: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পরবর্তী শুনানি আগামী ১০ মে। গত ২২ এপ্রিল ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে মামলাটির যুক্তি উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য ছিল। সানাউল্লাহ মিয়া খালেদা জিয়ার জামিন বাড়ানোর আবেদন করলে দুদক তার বিরোধিতা করে দুদক আইনজীবী বলেন, খালেদা জিয়া বর্তমানে কারাগারে আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে হাজির করার পরোয়ানা রয়েছে। এমন অবস্থায় তাঁর জামিন বাড়ানোর সুযোগ নেই। দুই পক্ষের শুনানি শেষে আদালত খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ আগামী ১০ মে পর্যন্ত বাড়ানোর আদেশ দেন। এছাড়াও নাইকো মামলার খালেদার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি আগামী ১৩ মে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ এর বিচারক মাহমুদুল হাসান সময়ের আবেদন এ দিন ধার্য করেন।
উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রæয়ারি দুদক দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসানকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক। রায়ের পর খালেদা জিয়াকে রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। বর্তমানে সেখানেই বন্দি রয়েছেন তিনি। ১২ মার্চ খালেদার চার মাসের অন্তবর্তী জামিন মঞ্জুর করেন উচ্চ আদালত। ১৯ মার্চ আপিল বিভাগ ৮ মে পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করেন

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ