Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উৎপাদন কমলেও আয় বেড়েছে চা বাগান মালিকদের

| প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : দেশে চায়ের চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে না উৎপাদন। এ কারণে বাড়ছে পণ্যটির দাম। নিলাম সংখ্যা কমলেও গত ২০১৭-১৮ মৌসুমে এক হাজার ৬৩৭ কোটি টাকার চা বিক্রি করেছেন বাগান মালিকরা, যা আগের মৌসুমের চেয়ে প্রায় ১৬১ কোটি টাকা বেশি। বাজার-সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে আমদানি কমে আসায় চায়ের বাজার চাঙা। এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি নিলাম মৌসুমেও চায়ের ভালো দর পাওয়া যাবে।
খাত-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশে চায়ের বাজার প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার। প্রতি বছরই চায়ের বাজার সম্প্রসারণ হচ্ছে। দেশে উৎপাদন কমলেও আমদানির মাধ্যমে বিপণন কোম্পানিগুলো স্থানীয় চাহিদা পূরণ করছে। তবে নিয়ন্ত্রণমূলক ট্যারিফ আরোপ করায় গত দুই বছর ধরে চায়ের আমদানি কম। ফলে দেশে উৎপাদিত চায়ের কদর বেড়েছে। ২০১৭-১৮ নিলাম মৌসুমে চা বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি গড়ে ২১৩ দশমিক ৮০ টাকায়। ২০১৬-১৭ মৌসুমে চায়ের গড় মূল্য ছিল ১৯১ টাকা। ওই মৌসুমে এক হাজার ৪৭৬ কোটি টাকার চা বিক্রি হয়েছিল।
চা বোর্ডের তথ্যানুসারে, ২০১৬ সালে দেশে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন হয়। এ কারণে ২০১৬-১৮ মৌসুমে বাড়তি চা বিক্রির জন্য নিয়মিত ৪৫ নিলামের পাশাপাশি আরো একটি নিলাম বেশি আয়োজন করা হয়। তবে গত বছর চা উৎপাদন কম হওয়ায় ২০১৭-১৮ মৌসুমে একটি নিলাম কমিয়ে দেয়া হয়। গড় মূল্য বেশি থাকায় চা বিক্রি কমলেও আগের মৌসুমের তুলনায় আয় বেড়েছে প্রায় ১৬১ কোটি টাকা। গত ২০১৭-১৮ মৌসুমে চা বিক্রি থেকে ২৭৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকার রাজস্ব পেয়েছে সরকার।
চা বোর্ডের উপ-পরিচালক এইচআরসি চা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মো. ইদ্রিস বলেন, দেশে চায়ের দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। পানীয় হিসেবে কদর ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিপরীতে আশানুরূপ উৎপাদন না বাড়ায় পণ্যটির দাম বাড়ছে। এছাড়া বাগানগুলো আগের চেয়ে ভালো মানের চা উৎপাদনে উদ্যোগী হয়েছে। ফলে নিলামে চায়ের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। অনুকূল আবহাওয়া পেলে আগামীতে চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি দামও ভালো পাওয়া যাবে।
প্রসঙ্গত, দেশে বিভিন্ন বাগানে উৎপাদিত চা সরকারি নজরদারির মধ্যে বন্ডেড ওয়্যারহাউজে জমা রাখা হয়। পরে ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহে আয়োজিত নিলামে এসব চা বিক্রি করা হয়। দেশীয় কোম্পানি ছাড়াও বিদেশী ক্রেতা প্রতিষ্ঠান নিলামে অংশ নিয়ে চা সংগ্রহ করতে পারে। নিলামে বিক্রীত চায়ের দামের ১৭ শতাংশ কমিশন হিসেবে সরকারি কোষাগারে জমা হয়। ব্যাংকের মাধ্যমে দাম পরিশোধ করে ওয়্যারহাউজ থেকে চা সংগ্রহ করে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। এরপর বিপণন প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন মানের চা মিশিয়ে (বেøন্ডিং) বাজারজাত করে। ২০১৭-১৮ নিলাম মৌসুমের চা বিক্রি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত মৌসুমে মধুপুর বাগানের চা সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। এ বাগানের চা গড়ে ২৫৯ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া খৈয়াছড়া ডালু বাগানের চা ২৫৭ টাকা ও ক্লিভডনের চা ২৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে সর্বোচ্চ ২৬ লাখ ৪৩ হাজার কেজি চা উৎপাদন করেছে রাজঘাট চা বাগান। এ তালিকায় দ্বিতীয় ডিনস্টোন ২৪ লাখ ৭১ হাজার, তৃতীয় কর্ণফুলী ১৮ লাখ ৩৪ হাজার, চতুর্থ রশিদপুর ১৬ লাখ ৩৫ হাজার ও পঞ্চম বারাউড়া চা বাগান ১৩ লাখ ৭৯ হাজার কেজি চা উৎপাদন করেছে। নিলামে চা বিক্রেতা ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠানের দেয়া তথ্যানুসারে, গত মৌসুমে ফ্যাক্টরি থেকে সর্বমোট ৭ কোটি ৬৫ লাখ ৭৮ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে অর্থোডক্স ও গ্রিন টি ছাড়াও বিশেষায়িত একাধিক ধরনের চা বিক্রি করেছে বাগানগুলো। নিলামে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিটিআরআই) চা সর্বোচ্চ ৬২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এ দামে প্রায় ৯০ কেজি চা বিক্রি করা হয়। অন্যদিকে কাজী অ্যান্ড কাজী সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা কেজি দরে গ্রিন টি বিক্রি করেছে। নিউ সামানবাগ বাগান সর্বোচ্চ ৫২০ টাকা কেজি দরে অর্থোডক্স চা বিক্রি করেছে। বিশেষায়িত ধরনের এসব চায়ের কারণে নিলামে গড় দাম কিছুটা বেড়েছে বলে মনে করছে ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠানগুলো।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ