Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

টানা বৃষ্টি ও ঝড়- কাহিল বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষক

| প্রকাশের সময় : ৪ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

রেজাউল করিম রাজু ও মোঃ হায়দার আলী রাজশাহী থেকে : এ বছর টানা বৃষ্টি, ঝড়সহ বৈরি আবহাওয়ার কারণে বোরো ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা। পাঁকা ধান ঘরে তোলার সময় দফায় দফায় শিলা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকেরার। বিভিন্ন স্থানের ধান বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। আবার অনেকেই ধান কাটার পরেও মাড়াইয়ের কাজ করতে পারছেন না ফলে ওই সব ধানে চারা গাছ গজিয়ে ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে কৃষক পথে বসা ছাড়া উপায় থাকবে না। রাজশাহী কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, জেলায় এ বছর ৬৬ হাজার ২১২ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে চাষ হয়েছে আরও ৩ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে। বিপুল পরিমাণ এই জমি থেকে চার লাখ ১১ হাজার ৭৭ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। চালের হিসাবে তা ২ লাখ ৭৪ হাজার ৫১ মেট্রিক টন। তবে কৃষকরা বলছেন, অতিরিক্ত জমিতে ধান চাষ হলেও উৎপাদনে ভাটা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর কারণ বৈরি আবহাওয়া। গত ৫ ও ১২ এপ্রিল ধানের শিষ ফোটার সময় পর পর দুই দফা শিলা বৃষ্টির কারণে এমনিতেই কাঙ্খিত ফলন না হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তার ওপর গত সোমবার ভোরের কালবৈশাখী ঝরিয়ে দিয়েছে শীষের পাঁকা ধান। গত বুধবার দুপুরে এবং গতকাল সকালে তুমুল ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছিল রাজশাহীতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃষ্টি এবং ভাটি থেকে আসা পানিতে জেলার তানোর উপজেলার শিবনদী ও বিলকুমারী বিলের পানি বেড়ে তলিয়ে গেছে কয়েকশো হেক্টর বোরো ধানের জমি। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বিলের কৃষকরা। তানোরের শিবনদী সংলগ্ন চৌবাড়িয়া, কামারগাঁ, তালন্দ, গোকুল, শিতলীপাড়া, কুঠিপাড়া, আমশো, বুরুজ, কালীগঞ্জ ও চাঁন্দুড়িয়া এলাকার অনেক ধান ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিবনদী বিলেরধানের জমি পানির নিচে। শ্রমিক সঙ্কটের কারণে বিলের উঁচু এলাকার জমির ধানও কাটতে পারছেন না কৃষকরা। আর পানিতে তলিয়ে যাওয়া পাকা ধান কচুরিপানায় ঘিরে ফেলেছে। কোনো কোনো কৃষককে কোমর পানিতে নেমে ধান কাটতে দেখা গেছে। আবার কেউ কেউ নৌকাযোগে ধান কেটে বাঁধে নিয়ে এসে মাড়াই করছেন। আবার যেসব কৃষকের ধান পুরোপুরি তলিয়ে গেছে তারা ফসলের আশা ছেড়ে দিয়েছেন। সোনার ফসল হারিয়ে তারা এখন দিশেহারা। স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ডিএফএম এমদাদুল ইসলাম বলেন, পানিতে বোরো ধান তলিয়ে যাচ্ছে। তারপরও কৃষকরা সেসব ধান কাটার চেষ্টা করছেন। বিঘা প্রতি ১৫ থেকে ১৮ মণ ফলন হচ্ছে। তবে পানি না থাকলে ২০ থেকে ২২ মণ ফলন হতো। তানোরের কুঠিপাড়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ইদ্রিস আলী জানান, চার বিঘা জমিতে তিনি জিরাশাইল ধান চাষ করেছিলেন। দুই বিঘা জমির ধান কাটতে পেরেছেন। বাকি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। সেসব জমির ধান পাওয়ার আশা নেই। জেলার গোদাগাড়ী উপজেলা টানা ঝড় বৃষ্টিতে রোরা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রবল বৃষ্টির কারণে বিল, কান্দর ও নিচু স্থানের ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। কাটা ধান বৃষ্টির কারণে মাড়াই করতে না পারায় ধান থেকে চারা গাছ বেরিয়ে পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কসাইপাড়া বিল, বিল পাতিকলা, দূর্গদাহ, বিলচরাই সব চেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ভাজনপুর এলাকার কৃষক দুলু দেব বলেন, ধান কাটার কামলার দারুন সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ৪শ থেকে সাড়ে ৪শ টাকা দিয়েও কামলা পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষক ৪ আড়ির জীনের পরিবর্তে ৬/৭ আড়ি জীন দিয়ে ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছে। এ দিকে বাগমারা ও দূর্গাপুরসহ অন্য উপজেলার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই বছর ধরে তারা অসময়ের বন্যা আর বৃষ্টির কারণে ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না। টানা ফসলহারা নিঃস্ব কৃষক বুক ভরা আশা নিয়েই এবার অগ্রহায়ণ মাসের শুরু থেকে বোরো ধানের বীজ বপন শুরু করেছিলেন। শীষেও ধান এসেছিল ভালো। তা দেখে হাসি ফুটেছিল কৃষকের মুখে। কিন্তু এখন বৈরি আবহাওয়া কেড়ে নিয়েছে তাদের মুখের হাসি। তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, গত সোমবার শিলাবৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকার ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। শিবনদীতে বোরো ধানের জমি তলিয়ে গেছে। সেসব জমির ধান ভিজে যাওয়ায় ভালো দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। আমরা আগামীতে স্বল্পমেয়াদী জাতের ধান আবাদে কৃষকদের উদ্ভুদ্ধ করবো। কৃষকরা এতে সাড়া দিলে তারা আগাম ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবেন। তবে বৈরি আবহাওয়ায় ফলনে খুব একটা ঘাটতি হবে না বলে দাবি করেছেন জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালি। তিনি বলেন, শুধু রাজশাহী জেলা নয়, বরেন্দ্র অঞ্চলের নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জেও বৃষ্টি হয়েছে। এতে ফলন পাঁচ থেকে ১০ ভাগ কমতে পারে। তবে এতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো ঘাটতি থাকবে না। আমরা কৃষকদের খড়ের আশা ছেড়ে দিয়ে দ্রুত ধান কেটে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কৃষক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ